ইউক্রেনে হামলায় ট্যাঙ্কের বদলে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে রুশ সেনারা

যুদ্ধে ট্যাঙ্ক ব্যবহারের আগে একসময় সেনাবাহিনীর মোটরসাইকেল ব্যবহারের প্রচলন ছিল। ১৯১৬ সালে মার্কিন সেনারা মোটরসাইকেল চালিয়ে মেক্সিকান দস্যু পাঞ্চো ভিয়াকে তাড়া করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্তাবাহকেরা মোটরসাইকেল চালিয়েই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ কয়েকটি বাহিনীকে মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে দেখা যায়।
ট্যাঙ্কের তুলনায় মোটরসাইকেল দ্রুতগতিসম্পন্ন আর চালানো সহজ। তাই বলে ট্যাঙ্কের জায়গায় মোটরসাইকেল?
অনেকে বলতে পারেন, ট্যাঙ্কে ভারী অস্ত্র ও বর্মসহ অন্যান্য শক্তিশালী যুদ্ধোপকরণ বহনের ব্যবস্থা রয়েছে, যা মোটরসাইকেলে নেই।
এর পরও ইউক্রেনের ঘাঁটিগুলোতে হামলার জন্য রুশ সেনারা ট্যাঙ্কের পরিবর্তে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের (আইএসডব্লিউ) গবেষকদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'রাশিয়া এখন বেশি করে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। কারণ ইউক্রেনের ড্রোনগুলো তাদের সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে দিচ্ছে। ২০২৩-এর শেষে আর ২০২৪ সালে রাশিয়া অনেক সাঁজোয়া যান হারিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তারা অন্য পথ বেছে নিচ্ছে।'
রুশ সেনারা বহুবার আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। তবে মোটরসাইকেল নিয়ে হামলার ঘটনায় ইউক্রেন কিছুটা বিস্মিত। রাশিয়ার এই কৌশলের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, 'বিষয়টি শুনতে বেশ হাস্যকর'।
তবে রুশ সেনারা বলছেন, ট্যাঙ্কের তুলনায় মোটরসাইকেল দ্রুতগতিসম্পন্ন। মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় ঘাঁটিগুলোতে দ্রুত হামলা করা যায়। পাশাপাশি ট্যাঙ্ক যেসব পথে চলতে না পারে, মোটরসাইকেল সেসব পথে অনায়াসেই চলতে পারে এবং সহজেই ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
মোটরসাইকেল ব্যবহার করে রুশ সেনাদের হামলার বিষয়ে ইউক্রেনের এক মুখপাত্র বলেন, 'কখনও ১২টা, কখনও আবার ১০০টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল একসঙ্গে এসে হামলা করে। রুশ সেনারা মনে করে, মোটরসাইকেলে খুব দ্রুত এসে আমাদের ঘাঁটিতে হামলা করা সম্ভব—ড্রোন তাদের ধরে ফেলার আগেই। আর যদি ধরেও ফেলে তাহলে একটি ড্রোনে কেবল একটি মোটরসাইকেলই ধ্বংস হবে, এতে তাদের খুব বড় কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।
আইএসডব্লিউ-এর বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া এখন নতুনভাবে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। ইউক্রেনের পোক্রোভস্ক শহরের কাছে লড়াই করা এক সেনা জানিয়েছেন, রুশ সেনারা আটটি মোটরসাইকেল নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে এসে হামলা চালাচ্ছে। তারা ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারও (ইডব্লিউ) ব্যবহার করছে, যাতে ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণ করতে না পারে।
উল্লেখ্য, ইডব্লিউ সিস্টেম ড্রোনকে বিভ্রান্ত করতে পারে বা তাদের নিয়ন্ত্রণের সিগনাল বন্ধ করে দিতে পারে।
আরেক ইউক্রেনীয় সেনা বলেন, 'প্রতিটি রুশ মোটরসাইকেলে দুজন থাকে — একজন চালক, অন্যজন গুলি চালায়। ড্রোনে যদি একজন মারা যায়, তবুও অন্যজন আক্রমণ চালিয়ে যায়।'
রাশিয়া এখন হামলা চালিয়ে পালানোর কৌশল হিসেবে অথবা ইউক্রেনের যেসব এলাকায় বড় বড় যুদ্ধাস্ত্র ও ড্রোন রয়েছে, সেসব জায়গা দ্রুত দখলে নিতে সরাসরি আক্রমণের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে।
আইএসডব্লিউ সতর্ক করেছে, রুশ সেনারা হয়তো মোটরসাইকেল আর সাধারণ যানবাহন ব্যবহারকে একটি কৌশলগত সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যাতে করে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তির আগে তারা আরও কিছু ইউক্রেনীয় অঞ্চল দখল করতে পারেন।