পাকিস্তান দখল, সেনা আত্মসমর্পণ: ভারতীয় গণমাধ্যম যেভাবে কাল্পনিক ‘যুদ্ধ’ সাজাল

৮ মে, বৃহস্পতিবার, পাকিস্তানকে হেয় করতে মরিয়া ভারতীয় প্রধান ধারার কয়েকটি গণমাধ্যম একযোগে প্রচার করে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর একের পর এক প্রতিবেদন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা টিআরটি গ্লোবাল জানায়, '৮ মে যেদিন জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে এই সমন্বিত বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযান, সেদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ট্রল বা বট অ্যাকাউন্ট নয়—মূল ভুমিকা ছিল ভারতের জাতীয় পর্যায়ের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর।'
এই ঘটনার পর ভারতের মধ্যেই কিছু প্রভাবশালী কণ্ঠ থেকে বিরল আত্মসমালোচনাও উঠে আসে। বিশিষ্ট লেখক ও অনলাইন ব্যক্তিত্ব বাসন্ত মাহেশ্বরী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'আমি কখনও টুইট ডিলিট করি না, কিন্তু আজ ভারতের গণমাধ্যমের যাচাই না করা কিছু তথ্য দেখে ভুলভাল টুইট করেছি। তাই সব মুছে ফেলছি। টুইট করায় নয়, ভুল তথ্য বিশ্বাস করায় আমি দুঃখিত।'
ঘটনার দিন বেশ কিছু ভারতীয় চ্যানেল এমন সব দাবি করে যেগুলো ছিল সরাসরি মিথ্যা, অতিরঞ্জিত ও কল্পনাপ্রসূত।
ডিএনএ নামের একটি ভারতীয় চ্যানেল তাদের অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করে, 'ভারত পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে হামলা চালিয়েছে!' কিছুক্ষণ পর পোস্টটি মুছে ফেলা হলেও কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
এরপরই জি নিউজ দাবি করে বসে, 'পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ দখল করে নিয়েছে ভারত!'
অন্যদিকে আজতক নামের চ্যানেল তাদের স্টুডিও থেকে সরাসরি 'লাইভ' সম্প্রচারে করাচি বন্দরে 'ভারতের সামরিক হামলার' কল্পিত দৃশ্য পরিবেশন করে, যেন সত্যি সত্যিই হামলা চালানো হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে দাবি তোলে, ভারত একযোগে করাচি ও লাহোরে হামলা চালিয়েছে। টাইমস নাও ভারত তাদের নিউজরুমে যেন রীতিমতো যুদ্ধের নাটক মঞ্চস্থ করে। চ্যানেলটি এমনকি এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে এনে 'বিশ্লেষণ' করায় যাতে মিথ্যার ভিত আরও শক্ত হয়।
এক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে, 'চ্যানেলগুলোর এই নাটকীয় প্রদর্শন ছিল এতটাই অতিরঞ্জিত যে তা জনগণের মধ্যে হাস্যরস ও উদ্বেগ—দুই-ই তৈরি করেছে।'
সবচেয়ে গুরুতর মিথ্যাগুলোর একটি ছড়ায় এবিপি নিউজ, যেখানে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির গ্রেপ্তার হয়েছেন!
জি নিউজ তাদের সম্প্রচারে এমন পর্যন্ত দাবি করে যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে এবং ভারতীয় বাহিনী একাধিক শহর দখল করেছে। এক খণ্ডচিত্রে তারা প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে 'বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকতে' এবং একই সঙ্গে 'ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে' দেখিয়েছে—সবই এক প্রতিবেদনের ভেতরেই।