ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৭০ জন নিহতের দাবি ভারতীয় সূত্রের

ভারতের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ও পাক-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে। এসব হামলায় ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। সূত্রের দাবি, এ হামলা শুধু প্রতিশোধ নয়, বরং একটি কৌশলগত বার্তাও।
ভারতীয় সূত্র বলছে, 'এটি ছিল ভারতের সংকল্পের প্রকাশ। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়টি স্থাপনায় অত্যন্ত নির্ভুলভাবে হামলা চালিয়ে ভারত দেখিয়েছে, সীমান্তে সন্ত্রাস আর সহ্য করা হবে না…'
সূত্র জানায়, মুজাফফরাবাদ, কোটলি, বাহাওয়ালপুর, রাওয়ালকোট, চকস্বরী, ভিম্বার, নীলম উপত্যকা, ঝিলাম ও চকওয়াল—এই নয়টি জায়গায় হামলা চালানো হয়। এসব এলাকায় অন্তত ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
ভারতের দাবি, তাদের লক্ষ্য ছিল লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটি। সরকারি সূত্রের ভাষ্য, হামলায় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গেছে।
'স্যাটেলাইট, মানব গোয়েন্দা ও টেলিযোগাযোগ নজরদারির মাধ্যমে নির্ভুল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। "অপারেশন সিন্দুর" নামে পরিচালিত এ অভিযানে উচ্চ-নির্ভুলতার অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম ছিল,' বলেছে ভারতীয় আরেকটি সূত্র।
ভারতের হামলার পর পাকিস্তান দাবি করেছে, এতে অন্তত ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৮ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন। হামলায় কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে জানিয়েছে দেশটি।
ভারতীয় সূত্র বলছে, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে লক্ষ্যবস্তু বেছে নেওয়া হয়েছিল অত্যন্ত সতর্কভাবে এবং কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি।
ভারতীয় সূত্র দাবি করেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম চালানোর প্রমাণ রয়েছে ভারতের হাতে। তাই এই অভিযান ছিল সেই সংযোগ ধ্বংস করার পরিকল্পিত প্রয়াস।
'ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, সব লক্ষ্যবস্তু সফলভাবে ধ্বংস হয়েছে। এক ঘণ্টারও কম সময়ে হামলা শেষ হয়। আঘাত ছিল অস্ত্রোপচারের মতো নিখুঁত এবং হামলার ধরনে বিস্ময় ও গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়', বলছে সূত্র।
প্রতিরক্ষা সূত্র দাবি করেছে, নিহতদের মধ্যে লস্কর ও জইশের মাঝারি ও শীর্ষ পর্যায়ের ফিল্ড কমান্ডার, প্রশিক্ষক ও লজিস্টিক কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিরাপদে আশ্রয়ে থেকে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিল বলে দাবি সূত্রের।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে দাবি করেছেন, যেসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো সরাসরি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।
সূত্রের ভাষ্য, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে, ফলে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি এড়ানো কঠিন।
সূত্র আরও জানায়, ভারত সংযম দেখালেও পাকিস্তান বেসামরিক হতাহতের ছবি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিকভাবে উভয় দেশকে সংযম দেখাতে বলা হলেও, আত্মরক্ষার অধিকারে ভারতের অবস্থান সমর্থন পেয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।