গাজায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা

মানবিক সহায়তা নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া একটি জাহাজে ড্রোন হামলার অভিযোগ উঠেছে। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) জানিয়েছে, তাদের 'দ্য কনসায়েন্স' নামের জাহাজটি শুক্রবার (২ মে) ভোররাতে মাল্টা উপকূলসংলগ্ন আন্তর্জাতিক জলসীমায় হামলার শিকার হয়। খবর বিবিসির।
ঘটনার পরপরই জাহাজ থেকে জরুরি সংকেত (এসওএস) পাঠানো হয়। একটি তেলের ট্যাংকারে অবস্থানরত এক নাবিকের মাধ্যমে সেই জরুরি বার্তার রেকর্ডিং বিবিসির হাতে এসেছে। এতে স্পষ্টভাবে শোনা যায় জাহাজের ক্যাপ্টেন জাহাজে ড্রোন হামলা ও আগুন লাগার খবর জানাচ্ছেন।
মালটা সরকার জানিয়েছে, জাহাজের সকল সদস্য 'নিরাপদ' আছেন এবং জাহাজের আগুনও রাতের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের 'অবৈধ অবরোধ' চ্যালেঞ্জ করার জন্য গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সংস্থাটির অভিযোগ, তাদের বেসামরিক জাহাজে হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
সংগঠনটির এক স্বেচ্ছাসেবক সূর্য ম্যাকইউয়েন বলেন, হামলার পর জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এতে আগুন লাগে ও জাহাজের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে জানা যায়, কেউ গুরুতর আহত হননি।
তিনি বলেন, 'এটি একটি নিরস্ত্র মানবিক মিশনে থাকা বেসামরিক জাহাজে আন্তর্জাতিক জলসীমায় সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে হামলা।'
গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, 'গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য আজ আমাদের জাহাজে ওঠার কথা ছিল। এটি ছিল একটি মানবিক করিডর তৈরির প্রচেষ্টা এবং অবরোধ ভাঙার অংশ।' তিনি জানান, জাহাজটি এখনও হামলার স্থানে রয়েছে কারণ সরানোর চেষ্টা করলে জলে ভরে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের দাবি জানাতে আমরা মানবাধিকারকর্মীরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাব।'
মালটা সরকার জানিয়েছে, জাহাজে ১২ জন নাবিক ও ৪ জন কর্মী ছিলেন। তবে এনজিওটির দাবি, সেখানে মোট ৩০ জন কর্মী ছিলেন।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যাতে আগুনের দৃশ্য দেখা যায়। তাদের দাবি, হামলা মূলত জেনারেটরকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে, ফলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।
মাল্টা সরকার জানায়, এক টাগবোট আগুন নেভাতে পাঠানো হয় এবং রাত ১টা ২৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ২টা ১৩ মিনিটের সময়ও সব আরোহী নিরাপদে ছিলেন, তবে তারা টাগবোটে উঠতে অস্বীকৃতি জানান।
আন্দোলনকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সাইপ্রাস একটি উদ্ধারকারী জাহাজ পাঠালেও তা জাহাজের প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সহায়তা দিতে পারেনি।
নৌ-ট্র্যাকিং সফটওয়্যারে দেখা যায়, 'দ্য কনসায়েন্স' মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিউনিসিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে এবং বর্তমানে মাল্টা থেকে ১২-১৪ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে।
গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে ফ্লোটিলা কোয়ালিশন। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও ইসরায়েলি অবরোধের সমালোচনা বেড়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত মাসে এই অবরোধকে 'সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে' বলে মন্তব্য করেন।
দুই মাস ধরে চলা অবরোধে গাজার অভ্যন্তরে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। রেড ক্রস সম্প্রতি জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম 'পুরোপুরি ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে'।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন অপহৃত হওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ পর্যন্ত সেখানে অন্তত ৫২,৪১৮ জন নিহত হয়েছেন।