চলমান উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের চতুর্থ দফার পরমাণু আলোচনা স্থগিত

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চতুর্থ দফার আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর বিন হামাদ আল বুসাইদি এ ঘোষণা দিয়েছেন।
রোমে চতুর্থ দফা আলোচনা শুরুর একদিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) এই ঘোষণা দেন বদর বিন হামাদ আল বুসাইদি।
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক্স-এ লিখেছেন, "লজিস্টিকগত কারণে আগামী ৩ মে শনিবার নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের চতুর্থ দফার বৈঠকটির সময়সূচি আমরা পুনঃনির্ধারণ করছি। দুই পক্ষ সম্মত হলে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।"
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর বিন হামাদ আল বুসাইদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে তিন দফা বৈঠকে সফলভাবে মধ্যস্থতা করেছেন। ১২ এপ্রিল প্রথম দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ওমানের রাজধানী মাসকটে। দ্বিতীয় দফার বৈঠক হয় পরের সপ্তাহে রোমে এবং তৃতীয় বৈঠকটি গত ২৬ এপ্রিল মাসকটে অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা তাদের আলোচনা পরমাণু চুক্তির পথে এগুচ্ছে।
তিন দফা বৈঠক চললেও ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে উত্তেজনা এখনো বিদ্যমান।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বলেছিল, তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা। তবে তেহরান দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ইরান দাবি করে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত—যেমন জ্বালানি উৎপাদন বা চিকিৎসা ও অন্যান্য শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার হয়।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, তাদের লক্ষ্য আরও ব্যাপক হতে পারে। তারা ইরানের পুরো পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে চায়।
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এক বিবৃতিতে বলেন, "চূড়ান্ত কোনো চুক্তিতে গেলে ইরানকে অবশ্যই তার পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ ও অস্ত্রায়ন কর্মসূচি বন্ধ ও বিলুপ্ত করতে হবে।"
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠক স্থগিত হওয়ার ঘোষণা আসার আগেই ইরান অভিযোগ তোলে, যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক আলোচনার বিষয়ে 'বিরোধপূর্ণ আচরণ ও উসকানিমূলক বিবৃতি' দিচ্ছে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র তাদের তথাকথিত 'সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের অভিযান'-এর অংশ হিসেবে একাধিক আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়। এসব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ককে ইতোমধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে।
প্রথমে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ইরানি তেল পণ্য বাণিজ্যে জড়িত সাতটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই তেলের আয় 'সন্ত্রাসবাদ ও তাদের সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর' সহায়তায় ব্যবহৃত হয়।
এরপর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরান যদি ইয়েমেনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতিদের সহায়তা চালিয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।
তীব্র বাকযুদ্ধের মধ্যেও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবারের বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধে।
ইরানের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে 'ন্যায্য ও স্থায়ী একটি চুক্তি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
তবে রয়টার্সকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো এই দেরির কারণ।
তিনি বলেন, "পারমাণবিক আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ইস্যু কূটনৈতিকভাবে সমাধানে সহায়ক নয়।"
তিনি আরও বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ কেমন হবে, তার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী বৈঠকের তারিখ ঘোষণা করা হবে।"
অন্য সংবাদ প্রতিবেদনে, এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই সপ্তাহান্তে রোমে পুনরায় শুরু হওয়া আলোচনা সম্পর্কে পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেয়নি।
অজ্ঞাত সূত্র অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এই সপ্তাহান্তের আলোচনায় অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করেনি, তবে 'নিকট ভবিষ্যতে আরও আলোচনা' আশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনগুলো ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে একটি প্রচেষ্টা ছিল ২০১৫ সালের জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তি, যা এক পর্যায়ে একমত হয়ে সই করা হয়েছিল।