কানাডায় কার্নির জয়, বিজয়ী হয়ে বললেন ‘ট্রাম্প আমাদের ভাঙার চেষ্টা করছেন’

কানাডার সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি আবারও জয় পেতে যাচ্ছে বলে প্রাথমিক ফলাফল পূর্বাভাসে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিটিভি নিউজ ও সিবিসি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আলোচনায় সুবিধা পেতে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার প্রয়োজন ছিল, তা অর্জন করতে পারেনি মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টি। তবে তারা সংখ্যালঘু সরকার গঠন করবে। এটি হবে দলটির টানা চতুর্থ জয়।
কানাডার প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ ভোটার এই নির্বাচনে আগাম ভোট দিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল নেতা মার্ক কার্নির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের পিয়েরে পলিয়েভর। সোমবার সকাল সাতটায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হলেও চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করছে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ওপর, যেখানে ভোটগ্রহণ সবার শেষে শেষ হয়েছে।
সিবিসি নিউজ জানিয়েছে, এখনো লিবারেল পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৪৩টি আসনের মধ্যে ১৭২টি নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে তারা ১৫৩টি আসন নিয়ে এগিয়ে আছে, যেখানে কনজারভেটিভ পার্টির দখলে রয়েছে ১৩৩টি আসন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর জনসমর্থনে ধস নামা লিবারেল পার্টির জন্য এটি এক ধরনের প্রত্যাবর্তন বলা চলে।
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য' বানানোর মন্তব্য—এই দুটি বিষয়ই এবারের কানাডার নির্বাচনে প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছিল।
নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিজয় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সরাসরি ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প বাণিজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে কানাডাকে 'ভাঙার' চেষ্টা করছেন, তবে এমনটি 'কখনোই হবে না' বলে দৃঢ় ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে মার্ক কার্নি বলেন, সামনের দিনগুলোতে তিনি এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প 'দুই স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের ভবিষ্যৎ' নিয়ে আলোচনা করবেন।
কার্নি জানান, তার নেতৃত্বাধীন লিবারেল সরকার ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব আরও জোরদার করবে।
উচ্ছ্বসিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, 'যদি যুক্তরাষ্ট্র আর বিশ্ব নেতৃত্বের অগ্রভাগে থাকতে না চায়, তাহলে কানাডা থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, কানাডাকে জ্বালানি খাতে বিশ্বশক্তিতে রূপান্তর করা হবে এবং তার সরকার শক্তিশালী কর্মসংস্থান গড়বে। বক্তব্যের শেষভাগে কার্নি বলেন, 'এটি কানাডা, এখানে কী হবে তা আমরা নিজেরাই ঠিক করি।'
অন্যদিকে, হার মেনে নিয়েছেন কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পলিয়েভর। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমার সহকর্মী কনজারভেটিভদের বলছি— আজ রাতে আমাদের উদযাপনের অনেক কিছু রয়েছে। আমরা ২০টিরও বেশি আসন বৃদ্ধি করেছি। ১৯৮৮ সালের পর এটাই আমাদের দলের সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তি। আমরা এনডিপি ও লিবারেলদের এতটা আসন জিততে দিইনি যাতে তারা মিলে জোট সরকার গঠন করতে পারে।'
তিনি বলেন, 'আমরা এখনো শেষরেখা পার হতে পারিনি, সে বিষয়টি আমরা স্বীকার করছি। আমরা জানি, পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে, তবে পরিবর্তন সহজে আসে না। এটি সময় ও পরিশ্রমের দাবি রাখে। তাই আজকের ফলাফল থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, যেন আগামীবার যখন কানাডার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সময় আসবে, তখন আমরা আরও ভালো ফল পাই।'
পয়েলিয়েভ্র আরও বলেন, 'কানাডিয়ানরা একেবারে সূক্ষ্ম ব্যবধানের একটি সংখ্যালঘু সরকার বেছে নিয়েছেন— ভোটের হিসাবে এটি প্রায় সমতা। আমি প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে এই সংখ্যালঘু সরকার পরিচালনার জন্য অভিনন্দন জানাই।'
'আমাদের সামনে অনেক সুযোগ আসবে বিতর্ক ও মতবিরোধের। কিন্তু আজ রাতে আমরা একসঙ্গে কানাডিয়ান হয়ে দাঁড়াই।'
সবশেষে তিনি বলেন, 'আমরা সবসময় কানাডাকেই অগ্রাধিকার দেবো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপ ও দায়িত্বহীন হুমকির মুখে থেকেও।'
উল্লেখ্য, নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে কানাডা বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয়সংকটের মুখে রয়েছে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের হুমকি দেশটির অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কানাডার রপ্তানির ৭৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে, ফলে উভয় প্রধান প্রার্থীই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের অঙ্গীকার করেছেন।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের '৫১তম অঙ্গরাজ্য' বানানোর কথা বলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এমনকি নির্বাচন দিনেও তিনি নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে বলেন, 'দেখুন এই ভূমিখণ্ড কত সুন্দর হবে। কোনো সীমান্ত ছাড়াই মুক্ত প্রবেশাধিকার।'
প্রধানমন্ত্রী কার্নি এই প্রস্তাব জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, 'এটি কানাডা—এখানে সিদ্ধান্ত নেবে কানাডার জনগণ।'
প্রতিদ্বন্দ্বী পিয়েরে পয়েলিয়েভ্রও একই সুরে মন্তব্য করেন। তিনি ট্রাম্পকে আহ্বান জানান, কানাডার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে। নিজের পোস্টে পয়েলিয়েভ্র লেখেন, 'কানাডা চিরকাল গর্বিত, স্বাধীন ও সার্বভৌম থাকবে। আমরা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত হব না।'