আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। কারণ শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, বৈধ অবস্থান (যেমন ভিসা বা আইনি মর্যাদা) বাতিল করা শিক্ষার্থীদের আইনি মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে আবারও শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিদেশ ভ্রমণে এখনও অনেক বেশি ঝুঁকি আছে, কারণ অভিবাসন নীতিগুলো দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।
শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশটির অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এ বছর গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে। কারণ তারা আশঙ্কা করছে, অনেক শিক্ষার্থীকে ফের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না।
এর আগে গত সপ্তাহে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে পাঠানো এক নোটিশে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় প্রবেশের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় আমরা ডিউক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জরুরি না হলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। 'বৈধ ভিসা থাকলেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের গ্যারান্টি থাকবে, এ নিশ্চয়তা নেই।'
হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা, আইনি মর্যাদা এবং অভিবাসন রেকর্ড বাতিল করার পর ট্রাম্প প্রশাসন এই নীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল'ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জেফ জোসেফ বলেন, বিদেশ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
তিনি বলেন, 'দেশের বাইরে ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। বাস্তবতা হলো, যেকোনো কারণে বা কোনো কারণ ছাড়াই ভিসা বাতিল করার একতরফা কর্তৃত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রয়েছে।'
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার বিষয়ে কতগুলো ক্যাম্পাস সতর্কতা জারি করেছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউসি বার্কলেসহ কমপক্ষে পাঁচটি ক্যাম্পাস এই মাসে তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে নোটিশ পাঠিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পাশ করে বর্তমানে ওয়াশিংটন, ডিসিতে বসবাসরত এক ব্যক্তি বলেন, ডিসেম্বরে নিজ দেশ চীনে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বারবার ভেবেছেন। কারণ তখনকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের, যিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসন সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শিগগিরিই ক্ষমতায় আসার কথা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, 'আমি দুশ্চিন্তায় ছিলাম, ভয় হচ্ছিল এখানে আমার চাকরি এবং বসবাসের অনুমোদন থাকা সত্বেও আমাকে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না।'
তাই ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার ফ্লাইট বুক করেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেটরস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফান্টা আউ বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যারা অনেক চাপের মধ্যে রয়েছেন, তাদের উচিত নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেওয়া যে তারা বাড়ি ফিরে যাবে কি না; পরিবারের সঙ্গে দেখা করবে কি না।
আউ বলেন, 'আপনাদেরকে বুঝতে হবে শিক্ষার্থীরা কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে এবং তারা হয়তো বাড়ি ফিরে যেতে চায়।'
সম্প্রতি হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, সেইসব অভিবাসীদের থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায় তারা, যারা সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে, জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে অথবা ঘৃণাত্মক মতাদর্শ প্রচার করছে।
গত শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে একই সঙ্গে আইসিই [ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট] একটি 'ফ্রেমওয়ার্ক' তৈরি করবে, যা ভবিষ্যতে অভিবাসন রেকর্ড বাতিল করার জন্য ব্যবহৃত হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত মাসে বলেছিলেন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ৩০০ বা তার বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। কারণ হোয়াইট হাউস বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও বেশি লক্ষ্য রাখছে। ভিসা বাতিল করা শিক্ষার্থীদের প্রধান অপরাধ মনে হয় 'অ্যাক্টিভিজম' [অর্থাৎ রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ]।
তবে ভুক্তভোগী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলেছেন, তারা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বা কোনো রাজনৈতিক বিক্ষোভে অংশ নেননি এবং মার্কিনীদের জন্য হুমকি ভাবার মতো কোনো কাজ তারা করেননি।
ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি জোসেফ বলেন, 'এখানেই থাকুন, কোনো প্রশ্ন নেই। আপনারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যান, তাহলে আপনাদের জন্য একমাত্র উপায় হবে স্টেট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে নতুন ভিসা চাওয়া। কিন্তু দেশের ভেতরে থাকলে আপনি যে সুরক্ষা পেতেন, দেশের বাইরে থাকলে তা পাবেন না।'