ইরানের বন্দর আব্বাসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত ৪, আহত অন্তত ৫০০

ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বান্দর আব্বাসের শাহিদ রাজায়ী বন্দরে একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ৫০০ জন আহত হয়েছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। এছাড়া এপর্যন্ত অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আজ শনিবার সকালে (২৬ এপ্রিল) এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
বিস্ফোরণের তীব্রতায় কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার ভবনগুলোর জানালার কাচ ভেঙে যায় এবং অন্তত একটি ভবনের ছাদ ধসে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে রাস্তায় আহত মানুষদের পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ধসে পড়া দেয়ালের নিচে লোকজন আটকা পড়ার খবরও পাওয়া গেছে।
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে এখনো বড় ধরনের আগুন জ্বলছে। ছবি ও ভিডিওতে বিশাল কালো ধোঁয়ার মেঘ বন্দরের ওপর ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় এক কর্মকর্তা বিবিসি পার্সিয়ানকে জানান, "কিছু শ্রমিক এখনো ধসে পড়া ছাদের নিচে আটকা রয়েছেন, আমরা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি।"
ফার্স নিউজ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের শব্দ বন্দর আব্বাসের দক্ষিণে ২৬ কিলোমিটার দূরের কিশম দ্বীপেও শোনা গেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের মুহূর্তে মানুষজন আতঙ্কে দৌড়ে পালাচ্ছে। বিস্ফোরণের পর মাশরুম আকৃতির মেঘ তৈরি হয়।
ইরান যখন তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফার আলোচনায় বসেছে, ঠিক তখনই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি।
স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানিয়েছেন, "ঘটনাস্থলে বন্দরের জেটি এলাকায় সংরক্ষিত কয়েকটি কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়। আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে।"
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম, বিস্ফোরণের পরে রাস্তায় আহত মানুষদের পড়ে থাকতে এবং উদ্ধারকর্মীদের নৈরাজ্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে কাজ করতে দেখা গেছে—এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে এখনো বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড নেভানোর চেষ্টা চলছে। বিস্ফোরণস্থল কনটেইনার ইয়ার্ডে 'বিপজ্জনক পণ্য ও রাসায়নিক পদার্থে' ভর্তি ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, "দাহ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনায় অবহেলা বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ।"তবে বিস্ফোরণে জ্বালানি তেল অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে ইরানের জাতীয় প্রেট্রোলিয়াম পরিশোধন ও বিতরণকারী কোম্পানি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "শাহিদ রাজায়ী বন্দরের এই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের রিফাইনারি, জ্বালানি ট্যাঙ্ক, বিতরণ কেন্দ্র ও তেল পাইপলাইনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।"
প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, বন্দরের জেটি এলাকায় একটি ছোট আগুন লাগার পর সেটি কাছাকাছি রাখা "দাহ্য পদার্থ ও রাসায়নিক পদার্থ" সংরক্ষিত খোলা কনটেইনারগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর দ্রুত আগুন ছড়িয়ে বিশাল বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে।