যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আগেই পুতিনকে চিঠি ইরানের খামেনির

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বৃহস্পতিবার তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা সম্পর্কে ক্রেমলিনকে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুবার ইরানের ওপর বোমা হামলার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে না আসে, তাহলে তৃতীয় কোনো দেশ যদি ইরানের কাছ থেকে তেল কেনে, তাদের ওপরও শুল্ক আরোপ করা হবে। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে, যাতে ইরানের ওপর সামরিক চাপ বাড়ানো যায়।
গত সপ্তাহে ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ও ইরানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষই আলোচনা 'ইতিবাচক ও গঠনমূলক' হয়েছে বলে জানিয়েছে।
এ সপ্তাহের শেষ দিকে রোমে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে গত বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, 'ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার ইরানের, এটি কোনোভাবেই আলোচনা সাপেক্ষ নয়।'
তেহরানের দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া ইরানের পরমাণু বিষয়ক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী—যে চুক্তি থেকে ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন।
আরাকচি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, "পারমাণবিক ইস্যুতে আমাদের সবসময় বন্ধু রাষ্ট্র চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলোচনা হয়েছে। এখন রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শের এটি একটি ভালো সুযোগ।"
আরাকচি জানান, পুতিনকে দেওয়া চিঠিতে আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে। চিঠি দেওয়ার পরে আরাকচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পুতিন।
পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, ইরান যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করেছে তা প্রয়োজনের মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এ পরিমাণ পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগী মাত্রার কাছাকাছি।
তবে ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায় না। বরং তাদের লক্ষ্য শুধুই বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি—যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং চিকিৎসা গবেষণা।
ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়া ইরানের কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছে এবং চলতি বছরের শুরুতে তেহরানের সঙ্গে একটি ২০ বছরের কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে এই চুক্তিতে একে অপরকে সামরিক সহযোগিতা করার কোনো শর্ত ছিল না।
দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় রাশিয়া ও ইরান একসঙ্গে যুদ্ধ করেছে। তারা সেখানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন দিচ্ছিল। তবে ডিসেম্বর মাসে আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেই যৌথ যুদ্ধাভিযান শেষ হয়ে গেছে।
পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া ও ইরানকে শত্রু মনে করে। তাই এই দুই দেশ পরস্পরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখছে। পুতিনও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
তবে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হোক, মস্কো তা চায় না ।
রাশিয়া বলেছে, ইরানের ওপর কোনো ধরনের সামরিক হামলা অবৈধ এবং অগ্রহণযোগ্য।
মঙ্গলবার ক্রেমলিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভবিষ্যতে যদি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো পারমাণবিক চুক্তি হয়, তাহলে রাশিয়া কি ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুত নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে রাজি থাকবে?
তবে এ প্রশ্নের উত্তরে ক্রেমলিন কোনো মন্তব্য করেনি।