‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত’ গাজা যুদ্ধ থামাতে নেতানিয়াহুর প্রতি চাপ বাড়াচ্ছেন ইসরায়েলের সাবেক সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত' গাজা যুদ্ধ বন্ধ করে বাকি জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান এবং সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা। এনবিসি নিউজকে মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তারা এ কথা বলেন।
সাবেক মোসাদপ্রধান ড্যানি ইয়াতোম বলেন, 'যদি নেতানিয়াহু তার মনোভাব ও কৌশল না বদলান, তাহলে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো খুবই কঠিন হবে।' ইয়াতোম এক সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাকের প্রধান সচিব ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বেও ছিলেন। তিনি আরও কয়েকজন সাবেক গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে ইসরায়েল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
এই সাবেক গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তারা এবং কিছু সংরক্ষিত সদস্য জোর দিয়ে বলেছেন, অন্তত ৫৯ জন জিম্মিকে মুক্ত করার বিনিময়ে গাজা যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, এদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম এখন জীবিত।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক চিঠিতে গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান, ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর প্রায় ১ হাজার সংরক্ষিত সদস্য ও সাবেক কর্মকর্তা। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই খোলা চিঠিতে তাদের স্বাক্ষর থাকায় সেনাবাহিনী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায় —যারা এই চিঠিতে নাম লিখিয়েছেন, তাদের বরখাস্ত করা হবে। তবে কতজন বরখাস্ত হবেন বা এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে চালানো এক ভয়াবহ হামলার পর গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস ২৫ জন জীবিত ও ৮ জনের মরদেহ ফিরিয়ে দেয়, যার বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। এরপর আরও শান্তি আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও গত মার্চের শুরুতে ইসরায়েল ফের হামলা শুরু করে। এতে ভেঙে পড়ে যুদ্ধবিরতির চুক্তি।
এ নিয়ে ড্যানি ইয়াতোম বলেন, 'এটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে নেতানিয়াহুর লক্ষ্য ইসরায়েলি সমাজের লক্ষ্য থেকে আলাদা। তার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রধানমন্ত্রীর পদ ধরে রাখা।' তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহুর সরকার কট্টর ডানপন্থি নেতাদের ওপর নির্ভরশীল, যাদের কেউ কেউ স্পষ্টভাবে গাজা যুদ্ধ থামলে সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দিয়েছেন।
এর মধ্যে একজন কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে জানুয়ারিতে সরকারের পদ থেকে ইস্তফা দেন। তবে গাজায় পুনরায় অভিযান শুরু হলে তিনি মন্ত্রিসভায় ফেরেন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এরান ডুভদেভানি, যিনি সাবেক ও রিজার্ভ প্যারাট্রুপারদের সই করা একটি পৃথক খোলা চিঠি সংগঠনে সহায়তা করেছেন, বলেন, 'ইসরায়েল শুরুতে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যেন যুদ্ধ শেষ করার কোনো সদিচ্ছাই নেই।'
তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, ৭ অক্টোবর হামাস ভয়াবহ কাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এমন যুদ্ধ চালানো যায় না।'
ডুভদেভানি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন পাওয়ার পর নেতানিয়াহুর মনে হচ্ছে তিনি যা খুশি, তাই করতে পারেন। 'কিন্তু বিষয়টা এমন হওয়া উচিত নয়,' বলেন তিনি।