একদিনেই মৃত্যু চারশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর নেতানিয়াহু: গাজায় হামলা 'কেবল শুরু'

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার রাতে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ণ শক্তিতে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করেছে। খবর বিবিসির।
একটি ভিডিও বার্তায় তিনি সতর্ক করে বলেন, 'আলোচনা কেবল আগুনের মধ্যেই চলবে এবং এটি কেবল শুরু।'
ইসারায়েলি সামরিক বাহিনীর ব্যাপক বিমান হামলা চালানোর পর এ মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং শতাধিক আহত হয়েছে।
১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে এটাই ছিল সবচেয়ে ভারী বিমান হামলা।
ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বজায় ছিল। তবে এই নতুন হামলা ইঙ্গিত দিচ্ছে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির কোনো পরিকল্পনা নেই।
মঙ্গলবার বেইত লাহিয়া, রাফাহ, নুসাইরাত ও আল-মাওয়াসিতে চালানো বিমানহামলা চালানো হয়। হাসপাতালগুলো আবারও হতাহতদের ভিড়ে উপচে পড়ছে।
গাজায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী মিশর।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তামিম খাল্লাফ বলেছেন, বিমান হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
জাবালিয়া আল-বালাদের বাসিন্দা হেল বিবিসি আরবিকে বলেন, "যুদ্ধ আবার শুরু হওয়ায় আমি হতবাক হয়েছি। তবে একই সঙ্গে, ইসরায়েলিদের কাছ থেকে এটাই আমরা আশা করি।"
তিনি আরও বলেন, "একজন নাগরিক হিসেবে আমি ক্লান্ত। দেড় বছর ধরে আমরা যা সহ্য করছি, তা যথেষ্ট! আর নয়।"
বিমান হামলায় হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদ আবু ওয়াতফা এবং সংগঠনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়েছেন।
তার ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল এখনো গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, তিনি অভিযোগ করেন যে হামাস প্রতিবারই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে।
মার্চের শুরুতে প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপ কীভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে, তা নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।
চুক্তিটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল এবং ছয় সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি।
পরিবর্তে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এর শর্ত পরিবর্তন করতে চায় তখনই চুক্তিটি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
এর ফলে দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা বিলম্বিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা এবং ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করা।
তবে হামাস যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত এই পরিবর্তনকে অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেতানিয়াহু বলেন, "ইসরায়েল তার সব লক্ষ্য অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।"
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলার আগে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেন, 'হামাস যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর জন্য জিম্মিদের মুক্তি দিতে পারত, কিন্তু এর পরিবর্তে প্রত্যাখ্যান করে যুদ্ধ বেছে নিয়েছে।'
হামাস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যদি ইসরায়েল সহিংসতা পুনরায় শুরু করে, তাহলে গাজায় আটক জীবিত জিম্মিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে যে ইসরায়েলকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ গাজায় ফিলিস্তিনি ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. সাবরিনা দাস হামলার বিষয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, 'এটি খুব আকস্মিক ছিল। সবার মন ভেঙে গিয়েছিল, কারণ আমরা জানতাম যে যুদ্ধ আবার শুরু হয়েছে।'
তিনি জানান, নাসার হাসপাতালে তার সহকর্মীরা সারা রাত কাজ করেছেন, কারণ গণহত্যা আবার শুরু হয়েছে।
গাজা স্ট্রিপের হাসপাতালগুলোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাকোট বিবিসি আরবিকে বলেন, 'আক্রমণগুলো এতটাই আকস্মিক ছিল যে এত বড় হামলার মাত্রার তুলনায় চিকিৎসা কর্মীদের সংখ্যা অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ে। সাহায্যের জন্য অবিলম্বে অতিরিক্ত দলকে ডাকা হয়।'