ফিলিস্তিনকে 'কয়েক মাসের মধ্যে' রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স: মাখোঁ

ফ্রান্স 'আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই' ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
বুধবার (৯ এপ্রিল) ফ্রান্স ফাইভ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে আগামী জুনে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ সম্মেলনে এই স্বীকৃতি চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে তার। ওই সম্মেলনে সৌদি আরবের সঙ্গে কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ফ্রান্স।
মাখোঁ বলেন, "স্বীকৃতি দেওয়ার পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা তা করব। আমি কাউকে খুশি করার জন্য এটি করব না। আমি এটি করব, কারণ এক পর্যায়ে এটি করাটাই সঠিক হবে।"
এ বিষয়ে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহিন বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ফ্রান্সের স্বীকৃতি হবে "ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধান রক্ষার পথে ইতিবাচক অগ্রগতি।"
অন্যদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেছেন, কোনো দেশের 'একতরফা স্বীকৃতি' বর্তমান বাস্তবতায় হামাসের জন্য 'উৎসাহ ও পুরস্কারস্বরূপ' হবে।
এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ দেওয়া বার্তায় তিনি লিখেছেন, "বর্তমান বাস্তবতায়, কোনো দেশের পক্ষ থেকে একটি কাল্পনিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে 'একতরফাভাবে স্বীকৃতি দেওয়া' হবে সন্ত্রাসের জন্য পুরস্কার এবং হামাসকে উৎসাহ দেওয়ার শামিল। এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আনবে না—বরং আরও দূরে সরিয়ে দেবে।"
বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৬টি দেশ ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত বছর এই তালিকায় যোগ দিয়েছে আর্মেনিয়া, স্লোভেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, বাহামা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, জ্যামাইকা ও বার্বাডোস।
তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমর্থন ক্রমেই বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো এখনো স্বীকৃতি দেয়নি।
মাখোঁ জানান, তিনি 'সমষ্টিগত উদ্যোগ' আশা করছেন, যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ইসরায়েলকেও স্বীকৃতি দেবে। বর্তমানে সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গে ম্যাখোঁ আরও বলেন, এতে করে ফ্রান্স "তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে পারবে, যারা ইসরায়েলের অস্তিত্ব অস্বীকার করে—যেমন ইরান। একইসঙ্গে এটি আমাদেরকে এ অঞ্চলের সমষ্টিগত নিরাপত্তায় আরও প্রতিশ্রুতিশীল করবে।"
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরও ফ্রান্স দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে প্যারিসের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে সেটি হবে বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন, যা ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ইসরায়েল মনে করে, এখনই এমন স্বীকৃতি দেওয়ার সময় আসেনি।