ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা, পৌঁছেছে ত্রাণ

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ করে দিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা। একই সঙ্গে, আটকে পড়া জীবিতদের উদ্ধার অভিযানও চলছে।
জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রোববার (৩০ মার্চ) থেকে দুই সপ্তাহের জন্য পিপল'স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) সামরিক হামলা স্থগিত রাখবে। দলটি ত্রাণ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতি সহায়তা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'অসংখ্য ঘরবাড়ি, ভবন, প্যাগোডা, মসজিদ, মন্দির, স্কুল এবং সেতু ধসে পড়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে। অনেক মানুষ জরুরি উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে।'
গত শুক্রবারে মিয়ানমারে সংঘটিত ৭.৭ মাত্রার শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পে ১ হাজার ৬০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মিয়ানমারের মোট দেশজ উৎপাদনকেও (জিডিপি) ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সাময়িক যুদ্ধবিরতির ফলে উদ্ধার তৎপরতা সহজ হতে পারে। তবে ২০২১ সাল থেকে সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণাধীন মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া জটিল হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
পিডিএফ পরিচালনাকারী অং সান সু চির মিত্রদের নিয়ে গঠিত এনইউজি জানিয়েছে যে জরুরি উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য প্রাথমিকভাবে এক মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে, বিশেষ করে এনইউজি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর জন্য।
সংস্থাটি আরও বলেছে, 'আমরা সব জাতি-গোষ্ঠী ও নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন এনইউজি ও বিপ্লবী বাহিনীর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সমন্বয় করে ভূমিকম্প-আক্রান্তদের জন্য সর্বাত্মক জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তা প্রদান করে।'
মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিডোতে ত্রাণবাহী ফ্লাইটের জন্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি মেরামত করা হয়েছে বলে তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত ভারত থেকে পাঁচটি বিমান পৌঁছেছে, যার মধ্যে রয়েছে ১১৮ সদস্যের ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ড হাসপাতাল ইউনিট। এটি মান্দালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (ওসিএইচএ) মিয়ানমারের জন্য প্রাথমিকভাবে ৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে এবং জরুরি উদ্ধার অভিযানে সহায়তা দিতে সক্রিয় হচ্ছে।
এদিকে, প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে এখনও উদ্ধারকর্মীরা ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের খুঁজছেন। ব্যাংকক মেট্রোপলিটন প্রশাসন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ভূমিকম্পে ব্যাংককে ১৭ জন নিহত হয়েছে এবং ৮০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছে।
চীন, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সহায়তা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকক গভর্নর চাদচার্ট সিট্টিপুন্ট।