আফটারশকে এখনও কাঁপছে মিয়ানমার, মান্দালয়ে জীবিতদের উদ্ধারে তৎপর উদ্ধারকারীরা

ভূমিকম্পে মিয়ানমারের মান্দালয় শহরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই বেঁচে থাকা লোকদের সন্ধানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। গত দুই দিন আগে ভূমিকম্পে মিয়ানমারে দেড় হাজারের বেশি এবং থাইল্যান্ডে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত শুক্রবার মিয়ানমারের কেন্দ্রে মান্দালয় শহরের কাছাকাছি স্থানে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। তার কয়েক মিনিট পর ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরেকটি আফটারশক অনুভূত হয়।
এই ভূমিকম্পে ভবন, সেতু ধসের পড়েছে এবং রাস্তাঘাটও ভেঙে গেছে। শহরটির ১৭ লাখ বাসিন্দা এখন এ ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই দিনাতিপাত করছে।
আজ রবিবার ভোরে এলাকায় চায়ের দোকানের মালিক উইন লুইন প্রধান সড়কের পাশেই একটি রেস্তোরার ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে হেটে যাচ্ছেন এবং ভাঙা ইট সরিয়ে সরিয়ে দেখছেন।
তিনি এএফপিকে বলেন, "ভূমিকম্পে এখানে সাত জন মানুষ মারা গেছেন। আমি আরও খুঁজছি, কিন্তু আমি জানি, এখানে আমি জীবিত কাউকে খুঁজে পাবো না।"
তিনি আরও বলেন, "আমি জানি না এখানে কতজনের মরদেহ থাকতে পারে। তারপরও আমি খুঁজছি।"
ভূমিকম্পের এক ঘণ্টা পরই একটি ছোট আফটারশক অনুভূত হয়। এ আফটারশকের কারণে অনেকেই হোটেল থেকে নেমে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যেতে বাধ্য হন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায়ও এমনই আরেকটি আফটারশক অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের পরপরই দমকলের প্রধান কার্যালয় থেকে ট্রাকভর্তি করে দমকল কর্মীদের মান্দালয়ে পাঠানো হয়।
গতকাল রাতেই উদ্ধারকারীরা একটি ধ্বংস হওয়া অ্যাপার্টমেন্টের ভেতর থেকে এক জীবিত নারীকে উদ্ধা করে। তাদের স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার সময় সবাই করতালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানায়।
মিয়ানমারের শাসক জান্তা বাহিনী গতকাল শনিবার একটি বিবৃতিতে বলেছে, দেশে কমপক্ষে এক হাজার ৬৪৪ জন মারা গেছেন এবং তিন হাজার ৪০০ এর বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এছাড়া কমপক্ষে ১৩৯ জন নিখোঁজ রয়েছে।
কিন্তু ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সামরিক শাসিত নির্বাসিত দেশটির বিপর্যয়ের প্রকৃত আকার এখনও স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।
জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছেন, যা অত্যন্ত বিরল। তার এ আহ্বান দুর্যোগের তীব্রতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আগে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসলেও পূর্ববর্তী সামরিক সরকারগুলো বিদেশি সাহায্য চাওয়া থেকে সবসময় বিরত থেকেছে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার চার বছর ধরে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির জান্তা বিরোধী যোদ্ধারা গত রবিবার থেকে ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চলে দুই সপ্তাহের জন্য আংশিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন।
নির্বাসিত সরকার একটি বিবৃতিতে বলেছে, "তারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তাদের সহযোগিতায় দেশটির নিরাপত্তা, পরিবহন এবং জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমন অঞ্চলে অস্থায়ী উদ্ধার কাজ ও চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করতে চায় জান্তা সরকার।
সাহায্য সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে যে মিয়ানমার এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত নয়।
ভূমিকম্পের আগে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ গৃহযুদ্ধের ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অনেকে এখনও অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ব্যাংককে ভবন ধসে পড়েছে
শুক্রবার ভূমিকম্পের পর নির্মাণাধীন ভবন ধসে পর উদ্ধারকারীরা কাজ শুরু করেছে। ৩০ তলা ওই বহুতল ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে এখনও কাজ করে যাচ্ছে উদ্ধারকারীরা।
ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে ধ্বংসাবশেষের নিচে আরও অনেক মানুষ চাপা পড়ে আছেন।
ব্যাংকক কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সময় সকাল ৯ টায় আরেকটি বিবৃতিতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানায়।
ওই ধ্বংসাবশেষে উদ্ধারকারীরা রবিবার সকাল থেকে আরও ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু করেছে।
উদ্ধারকাজে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কুকুর ও তাপমাত্রা নির্ধারণকারী ড্রোনগুলোও ধ্বংসাবশেষে জীবিতদের উদ্ধারে কাজ করছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা রবিবার শহরের ১৬৫টি ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পর্যালোচনা এবং মেরামত করার জন্য প্রকৌশলীদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।