‘চোখের পলকেই ধসে গেল’: ব্যাংককে সুউচ্চ ভবনধসের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শোনালেন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা

মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাংককের একটি নির্মাণাধীন সুউচ্চ ভবন 'চোখের পলকে' ধসে পড়েছিল। ভবনটির একজন নির্মাণ শ্রমিক আজ (২৯ মার্চ) জানিয়েছেন, কীভাবে তিনি মৃত্যুকে জয় করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
ধসে পড়া ভবনটির ধ্বংসাবশেষের সামনে নির্মাণ শ্রমিকদের পরিবার সদস্যরা জড়ো হতে দেখা গিয়েছিল। ভবনটি গতকালের (২৮ মার্চ) ভূমিকম্পে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ধসে পড়ে। আত্মীয়রা আশায় বুক বেঁধে আছেন, যারা ভবনটির ভেতরে কাজ করছিলেন, তাদেরকে হয়ত জীবিত অবস্থায় ফেরত পাওয়া যাবে।
ভবনটি সরকারি অফিসের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছিল। নির্মাণ শ্রমিক খিন অং এএফপিকে জানান, কীভাবে তার ভাই কাজের জন্য ভবনটি প্রবেশ করার ঠিক সাথেসাথেই সেটি ধসে পড়ে।
খিন বলেন, "যখন প্রায় দুপুর ১টার দিকে আমার শিফট শেষ হয়, আমি বাইরে পানি নিতে গিয়েছিলাম এবং বের হওয়ার আগে আমার ছোট ভাইকে দেখেছিলাম।"
মিয়ানমারে উৎপত্তি হওয়া ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কম্পন স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২০ মিনিটে ব্যাংককে আঘাত হানে।
খিন আরও বলেন, "যখন আমি বাইরে গেলাম, চারপাশে ধুলা দেখলাম এবং আমি শুধু ধসে পড়া ভবন থেকে পালানোর জন্য দৌড় দিলাম।"
তিনি বলেন, "আমি আমার ভাই ও বন্ধুদের ভিডিও কল করেছিলাম। কিন্তু শুধু একজন ফোনটি ধরেছিল। কিন্তু আমি তার মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না এবং শুনতে পেলাম, সে দৌড়াচ্ছিল।"
"তখন পুরো ভবনই কাঁপছিল। কিন্তু আমি যখন তার সাথে ফোনে ছিলাম, তখন ফোন কেটে গেল এবং ভবনটি ধসে পড়ল।"
কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবনটির ধ্বংসাবশেষের ভেতর ১০০ জন পর্যন্ত শ্রমিক আটকে থাকতে পারে। কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা গেলেও, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
খিন বলেন, "আমার কেমন লাগছে, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। চোখের পলকেই এটি ধসে পড়ল।"
"যখন এটি ধসে পড়ে, আমার সব বন্ধু এবং ভাই ভবনটির ভেতরে ছিল। বলার মতো আমার কোনো ভাষা নেই।"
ব্যাকুল স্বজনরা
ব্যাংককে প্রতিনিয়ত পুরাতন ভবনগুলো একে একে ভেঙে ফেলা হচ্ছে এবং নতুন নতুন সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এই নির্মাণ কাজে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের অনেকেই শান্তিপূর্ণ কাজের পরিবেশ এবং দেশের চেয়ে ভালো মজুরি পাওয়ার আশায় মিয়ানমার থেকে নিয়মিত থাইল্যান্ডে কাজের জন্য আসেন।
মিয়ানমারের অনেক শ্রমিকের স্বজন ২৯ মার্চ ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে তাদের নিখোঁজ স্বজনের খবর পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
খিন অং ও তার ভাই, যিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের বাবা,ছয় মাস ধরে ব্যাংককে কাজ করছেন।
খিন বলেন, "শুনেছি তারা ২০ জন শ্রমিককে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তবে আমি জানি না, তারা কে এবং আমার বন্ধুরা ও ভাই তাদের মধ্যে আছেন কি না।"
তিনি বলেন, "আমি আশা করি আমার ভাই এবং বন্ধুরা হাসপাতালে আছেন। যদি তারা হাসপাতালে থাকে, তবে আমার কিছু আশা রয়েছে। কিন্তু যদি তারা এই ভবনের নিচে থাকে, তাদের বেঁচে থাকার কোনো আশা নেই।"
থাই নারী চানপেন কেওনয় (৩৯) উদ্বিগ্নভাবে তার মা ও বোনের খবরের অপেক্ষায় ছিলেন। তারা ভবনটি ধসে পড়ার সময় ভেতরে ছিলেন।
চানপেন এএফপি বলেন, "আমার সহকর্মী ফোন করে বলল, সে আমার মা বা বোনকে খুঁজে পাচ্ছে না। আমি ভেবেছিলাম মা হয়ত পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন এবং হয়ত আমার বোন তাকে সাহায্য করতে থেকে যেতে পারে।"
তিনি বলেন, "আমি তাদের দেখতে চাই। আমি আশা করি আমি তাদের খুঁজে পাব। আমি আশা করি, তারা হারিয়ে যাবে না। আমি এখনো ৫০ শতাংশ আশা রাখছি।"
হতাশায় ডুবে থাকা পরিবারগুলো খবরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেও, উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সাবধানের সাথেই খোঁজার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, যাতে আরও ধস না হয়।