শ্বশুরের হামাস সংশ্লিষ্টতায় যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতীয় শিক্ষাবিদ

ভারতীয় গবেষক বদর খান সুরির জীবন বদলে গিয়েছিল ১৫ বছর আগে, যখন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক সহপাঠীর আমন্ত্রণে তিনি গাজায় একটি আন্তর্জাতিক সহায়তা বহরে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যাবাসনের মুখোমুখি, কারণ তার বিরুদ্ধে হামাসের এক সদস্যের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। খবর বিবিসি'র।
সুরি যখন গাজায় যান, তখন সেটি ছিল ইসরায়েলের অবরোধে বন্দী এবং হামাসের নিয়ন্ত্রণে। কনফ্লিক্ট স্টাডিজ (সংঘর্ষ অধ্যয়ন)-এর একজন ছাত্র হিসেবে এটি ছিল তার জন্য বিরল সুযোগ, ছিল সংঘাতকে কাছ থেকে বোঝার সুযোগ। সুরি তৎক্ষণাৎ রাজি হইয়েছিলেন বলে জানান এক সহপাঠী।
সফরে তার পরিচয় হয় মাফেজ সালেহের সঙ্গে, যিনি হামাসের এক সাবেক উপদেষ্টার মেয়ে। কয়েক মাস পর তারা বিয়ে করেন। দীর্ঘ এক দশক দিল্লিতে কাটানোর পর তারা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সুরি যোগ দেন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে।
ভার্জিনিয়ায় তিন বছর বসবাসের পর, ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় পুলিশ তার বাসায় গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। ২০ মার্চ মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের সহকারী সচিব ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন টুইট করে জানান, 'হামাসের এক শীর্ষ উপদেষ্টা, একজন চিহ্নিত বা সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার' অভিযোগে সুরিকে আটক করা হয়েছে। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এই গ্রেপ্তারের পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কঠোর নীতির প্রভাব রয়েছে, যা অবৈধ অভিবাসী ও ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এসব আন্দোলনকে ইহুদিবিদ্বেষ ও হামাস-সমর্থনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করছে। তবে ভারত এখনো হামাসকে নিষিদ্ধ করেনি।
আইনসম্মতভাবে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সুরি আপাতত আদালতের আদেশে প্রত্যাবাসনের হাত থেকে রক্ষা পেলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ তাকে চেনেন এমন সবাইকে (দেশে) হতবাক করেছে।
তার পরিচিতজনরা জানান, সুরি ছিলেন বিনয়ী, লাজুক ও পরিশ্রমী। বিশ্ব সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন তিনি। সহপাঠী ও শিক্ষকদের মতে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ 'অত্যন্ত দুর্বল'।
ঐতিহাসিকভাবে ভারত ফিলিস্তিনের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং দিল্লি প্রায়ই ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা থেকে বিরত থেকেছে।
দিল্লির জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বিবিসিকে বলেন, 'কোনোভাবেই সুরিকে বেআইনি কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়ানো যায় না।' তিনি বলেন, 'চলমান সংঘাত নিয়ে মতামত প্রকাশ করা কোনো অপরাধ নয়। সংঘর্ষ অধ্যয়নের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গাজার যুদ্ধ নিয়ে বিশ্লেষণ করা তার পেশাগত দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।'
সফরে তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরাও একই মত পোষণ করেন।
আন্তর্জাতিক সহায়তা বহরের অন্যতম সংগঠক ফিরোজ মিঠিবরওয়ালা বলেন, 'সে সবসময় ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান নিত। সে কোনোভাবেই ডানপন্থি ইসলামপন্থি চরিত্রের ছিল না।'
২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে দিল্লি থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা বহরের যাত্রা শুরু হয়। পাকিস্তান তাদের ভ্রমণের অনুমতি না দেওয়ায়, দলটি ইরান, তুরস্ক, সিরিয়া ও মিশর হয়ে গাজায় পৌঁছায়। সেই সফর সংঘর্ষ অধ্যয়নের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা।
সুরির এক বন্ধু জানান, গাজার মানবিক সংকট তাকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল এবং তিনি বিধবা ও বৃদ্ধদের সহায়তায় মনোনিবেশ করেছিলেন।
দ্বিতীয়বারের মতো সুরি গাজায় যান নিজের বিয়ের জন্য। তার স্ত্রী সালেহ তখন গাজায় দোভাষী ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন।
আদালতে জমা দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সালেহ'র বাবা, যিনি একসময় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি গাজা প্রশাসন ছেড়ে 'হাউজ অব উইজডম' নামে একটি শান্তি ও সংঘাত নিরসনকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান গঠন করেন।
বিয়ের পর এই দম্পতি প্রায় আট বছর দিল্লিতে বসবাস করেন। সালেহ জামিয়ায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং পরে কাতার দূতাবাসে কাজ করেন। ২০২৩ সালে সুরি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং কিছুদিন পর সালেহও সেখানে চলে আসেন। গ্রেপ্তারের সময় তিনি ফেলোশিপের শেষ পর্যায়ে ছিলেন।
সুরির বাবা বলেন, 'হামাস বা ফিলিস্তিনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই (বিয়ে ছাড়া)। তার অপরাধ একটাই, সে একজন ফিলিস্তিনি নারীকে বিয়ে করেছে।'
তবে তিনি আশাবাদী, তার ছেলেকে প্রত্যাবাসন করা হবে না। তিনি বলেন, 'শেষ পর্যন্ত, এসব কেবল অভিযোগ মাত্র। কোনো অপরাধের প্রমাণ নেই।'