বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ১৩৪তম বাংলাদেশ, ফের শীর্ষে ফিনল্যান্ড

ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ২০২৫-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনের তালিকায় পাঁচ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ১৪৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৪তম।
আজ (২০ মার্চ) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশ এখন বাংলাদেশের চেয়ে কম সুখী।
এদিকে টানা অষ্টমবারের মতো তালিকার শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েলবিং রিসার্চ সেন্টার প্রকাশিত এই বার্ষিক প্রতিবেদনে অন্যান্য নর্ডিক দেশও শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। ফিনল্যান্ডের পর যথাক্রমে রয়েছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও সুইডেন।
এই র্যাংকিং নির্ধারণ করা হয় সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের উপর ভিত্তি করে। গবেষণাটি অ্যানালিটিক্স সংস্থা গ্যালাপ ও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সলিউশন নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে।
গ্যালাপের সিইও জন ক্লিফটন বলেছেন, 'সুখ কেবল সম্পদ বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে হয় না। এটি বিশ্বাস, পারস্পরিক সংযোগ এবং এই অনুভূতির সঙ্গে জড়িত যে আপনার পাশে কেউ আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা যদি শক্তিশালী সম্প্রদায় ও অর্থনীতি গড়তে চাই, তাহলে আমাদের একে অপরের প্রতি বিনিয়োগ করতে হবে। এটি আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।'
খাবার ভাগাভাগি করা ও কারো উপর ভরসা করা
গবেষকদের মতে, স্বাস্থ্য ও সম্পদের বাইরে কিছু সাধারণ বিষয়ও সুখকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে রয়েছে— অন্যদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে নেওয়া, সামাজিক সহায়তার জন্য কাউকে নির্ভরযোগ্যভাবে পাশে পাওয়া এবং পরিবারের আকার। গবেষণায় বলা হয়েছে, মেক্সিকো ও ইউরোপে চার থেকে পাঁচ সদস্যের পরিবার সাধারণত সর্বোচ্চ মাত্রার সুখের পূর্বাভাস দেয়।
সর্বশেষ গবেষণা আরও দেখিয়েছে যে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও দয়া আগের ধারণার তুলনায় সুখের সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা বিশ্বাস করেন যে কেউ তাদের হারানো মানিব্যাগ ফেরত দেবে, তাহলে সে সমাজ সামগ্রিকভাবে সুখী বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক দেশগুলো হারানো মানিব্যাগের প্রত্যাশিত ও প্রকৃত ফেরতের ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থান অধিকার করে আছে।
সামগ্রিকভাবে গবেষকরা বলেন, হারানো মানিব্যাগের প্রত্যাশিত ও প্রকৃত ফেরতসংক্রান্ত বৈশ্বিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে মানুষ বাস্তবতার তুলনায় তাদের সমাজের উদারতা সম্পর্কে বেশি হতাশাবাদী। বাস্তবে, হারানো মানিব্যাগ ফেরতের হার মানুষের প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি।
সুখী দেশের র্যাংকিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সর্বনিম্নে আছে
যদিও ইউরোপীয় দেশগুলো শীর্ষ ২০-এ আধিপত্য বিস্তার করেছে, কিছু ব্যতিক্রমও দেখা গেছে। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ চলমান থাকলেও ইসরায়েল ৮ তম স্থানে রয়েছে। এদিকে, কোস্টারিকা ও মেক্সিকো প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০-এ উঠে এসেছে। তারা যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ১০ম স্থানে রয়েছে।
সুখের নিম্নমুখী ধারা অথবা ক্রমবর্ধমান অসন্তুষ্টির ক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ২৪তম স্থানে রয়েছে। ২০১২ সালে দেশটি ১১তম স্থানে ছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে একা খাওয়ার প্রবণতা ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে যুক্তরাজ্য রয়েছে ২৩তম স্থানে। ২০১৭ সালের পর থেকে এটি দেশটির সর্বনিম্ন গড় জীবন মূল্যায়ন।
আফগানিস্তান আবারও বিশ্বের সবচেয়ে অসুখী দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে, যেখানে বিশেষভাবে আফগান নারীরা তাদের জীবনকে অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করছেন।
পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওন দ্বিতীয় অসুখী দেশ হিসেবে তালিকায় রয়েছে, এর পরেই লেবানন, যা নীচ থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের কোনো সামাজিক সমর্থন নেই
একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বের ১৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ জানিয়েছেন, সামাজিকভাবে তাদের সমর্থন দিবে বা কারও উপর নির্ভর করার মতো তাদের কেউ নেই। ২০০৬ সালের তুলনায় এটি ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে স্ব-মূল্যায়িত জীবন মানের ভিত্তিতে দেশগুলোর র্যাংকিং করা হয়েছে।
অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা মাথাপিছু জিডিপি, স্বাস্থ্যকর আয়ুষ্কাল, সামাজিক নির্ভরতার সুযোগ, স্বাধীনতার অনুভূতি, উদারতা এবং দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশগুলোর মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন।