মহাকাশে নয় মাস যেসব কাজ করে সময় কাটিয়েছেন নাসা'র দুই নভোচারী

ভোট দেওয়া, বড়দিন উদযাপন এবং শূন্য মাধ্যাকর্ষণে শরীর ফিট রাখা—এভাবেই ব্যস্ত সময় কেটেছে নাসার নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়ামসের। দীর্ঘ নয় মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) থাকার পর তারা স্পেসএক্স ড্রাগন ক্যাপসুলে করে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন।
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ওপরে থাকা এই দুই নভোচারীর মহাকাশে কাটানো সময় নিয়ে লিখেছে বিবিসি।
মহাকাশে ব্যস্ত সময়
বুচ (৬২) ও সুনি (৫৯) মহাকাশ স্টেশনে বিভিন্ন গবেষণা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তারা সেখানে একাধিক স্পেসওয়াকও পরিচালনা করেছেন।
গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সুনি তার সহকর্মী নিক হেগের সঙ্গে স্টেশনের জরুরি মেরামতের কাজে অংশ নেন। মাসের শেষদিকে তিনি ও বুচ একসঙ্গে স্টেশনের বাইরে গিয়ে আরও কিছু কাজ করেন।
তাদের কাজের মধ্যে ছিল স্টেশনের ঘূর্ণন নিয়ন্ত্রণকারী সরঞ্জাম মেরামত, এনআইসিইআর এক্স-রে টেলিস্কোপে লাইট ফিল্টার যুক্ত করা এবং আন্তর্জাতিক ডকিং অ্যাডাপ্টারে প্রতিফলক ডিভাইস প্রতিস্থাপন।
পৃথিবীকে নতুনভাবে দেখা
বুচ ও সুনি মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেছেন, 'আমাদের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।'
নিয়মিত সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা তাদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা ছিল। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় আইএসএস পৃথিবীকে ১৬ বার প্রদক্ষিণ করে, যার ফলে ৪৫ মিনিট পরপরই একবার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পান নভোচারীরা।
সুনি বলেন, 'এমন দৃশ্য সত্যিই ভাবনার দিগন্ত খুলে দেয়। এটা আমাদের একমাত্র গ্রহ, আমাদেরই এর যত্ন নেওয়া উচিত।'
বুচ যোগ করেন, 'পৃথিবী থেকে অনেক মানুষ আমাদের বার্তা পাঠায়। এতে মনে হয় যেন সবার সঙ্গেই আমরা আছি।'
মহাকাশ থেকে ভোট
বুচ, সুনি ও তাদের দুই আমেরিকান সহকর্মী—ডন পেটিট ও নিক হেগ—গত মার্কিন নির্বাচনে মহাকাশ থেকেই ভোট দিয়েছেন।
সুনি বলেন, 'একজন নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।'
নাসার সহায়তায় হিউস্টনের মিশন কন্ট্রোল সেন্টার থেকে তাদের জন্য এনক্রিপ্টেড ইমেলের মাধ্যমে ব্যালট পাঠানো হয়। নভোচারীরা তা পূরণ করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিউ মেক্সিকোর গ্রাউন্ড টার্মিনালে পাঠান।
এরপর সেখান থেকে ব্যালটগুলো ল্যান্ডলাইনের মাধ্যমে মিশন কন্ট্রোলে পৌঁছে যায়, যা পরবর্তীতে ইলেকট্রনিকভাবে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ফিট থাকা
বুচ প্রতিদিন সকাল ৪টা ৩০ মিনিটে এবং সুনি সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দিন শুরু করতেন।
শূন্য মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব মোকাবিলায় তারা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা ব্যায়াম করতেন। বুচ বলেন, 'এখানে জয়েন্টে কোনো ব্যথা হয় না, যা বেশ ভালো।'
ব্যায়ামের জন্য তিন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করেন তারা। এর মধ্য রয়েছে অ্যাডভান্সড রেজিস্টিভ এক্সারসাইজ ডিভাইস যা স্কোয়াট, ডেডলিফট এবং অন্যান্য ব্যায়ামের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ট্রেডমিলে ক্রুদের নিজেদের শরীর বেল্ট দিয়ে আটকে রাখতে হয়, যাতে তারা শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ভেসে না যান। আর সাইকেল আর্গোগোমিটার সহনশীলতা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করতেন তারা।

মহাকাশে বড়দিন
বড়দিন উপলক্ষে আইএসএস ক্রুদের একটি ভিডিও বার্তায় দেখা যায়, তারা সান্তা টুপি ও রেইনডিয়ার হরিণের শিং পরে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কথোপকথনের সময় তারা ধীরে ধীরে ভাসমান মাইক্রোফোন একে অপরের দিকে ছুড়ে দিচ্ছিলেন, আর তাদের মাথার চারপাশে ক্যান্ডি কেইন ভাসছিল।
সুনি মজা করে বলেন, 'শূন্য মাধ্যাকর্ষণে চুল এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, যা পৃথিবীতে সম্ভব করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে!'
আইএসএস-এ বুচ ও সুনির শেষ দায়িত্ব ছিল তাদের প্রতিস্থাপনকারী নতুন ক্রুকে স্বাগত জানানো।
১৬ মার্চ, নতুন ক্রু বহনকারী স্পেসএক্স ক্যাপসুল আইএসএস-এ পৌঁছায়। এরপর কমান্ড হস্তান্তর করে সুনি মহাকাশচারী আলেক্সি ওভচিনিনের কাছে দায়িত্ব দেন, আর বুচ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘণ্টা বাজিয়ে তা ঘোষণা করেন।
অবশেষে মঙ্গলবার আইএসএস থেকে ক্যাপসুলটি আনডক করে। এটির ফ্লোরিডার উপকূলে অবতরণের কথা রয়েছে।