ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কে এই তুলসি গ্যাবার্ড?

ট্রাম্প প্রশাসনে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (ডিএনআই) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাওয়াইয়ের সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান এবং কট্টর ট্রাম্প সমর্থক তুলসি গ্যাবার্ড।
ভারত সফরে এসে বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করে এখন তুমুল আলোচনায় গ্যাবার্ড। দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নিউজিল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কয়েকটি দেশে সফরের অংশ হিসেবে ভারতে সফর করছেন গ্যাবার্ড। সোমবার (১৭ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে আসছে, যা মার্কিন সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।'
বাংলাদেশে 'ইসলামপন্থী চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী উপাদানের উত্থান' নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন ক্যাবিনেট ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এটি এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় রয়ে গেছে।'
তবে তার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
তুলসি গ্যাবার্ড একজন ইউএস আর্মি রিজার্ভ কর্মকর্তা। গোয়েন্দাবিষয়ক গভীর অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি মস্কোর প্রতি সহানুভূতিশীল যুদ্ধবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত।
তবে ট্রাম্পের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে তুলসীকে বেছে নেওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তিনি ১৮টি গুপ্তচর সংস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তদারকি করছেন ৭৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্ক প্রস্তুতিতে ট্রাম্পকে সহায়তা করা তুলসি গ্যাবার্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর একটি পুরস্কারের প্রত্যাশা করেছিলেন।
ট্রাম্প দেশের গোয়েন্দা সেবাগুলো ঢেলে সাজাচ্ছেন, কারণ সেগুলোকে তিনি সন্দেহের চোখে দেখেন। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্রনীতি নীতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা গ্যাবার্ডের নিয়োগকে ট্রাম্পের পরিবর্তনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গ্যাবার্ডকে মনোনয়ন করার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, "দুই দশকের বেশি সময় ধরে তুলসি আমাদের দেশের এবং সকল আমেরিকানের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। একজন সাবেক ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তিনি উভয় দলেই ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। এখন তিনি গর্বিত রিপাবলিকান!"
কে এই তুলসী গ্যাবার্ড?
তুলসি গ্যাবার্ডের জন্ম আমেরিকান সামোয়ায়। ৪৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদে হাওয়াইয়ের চারবারের কংগ্রেস সদস্য, ডেমোক্র্যাটদের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং আর্মি রিজার্ভের লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তিনি ইরাকে সামরিক সেবা দিয়েছেন।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই গ্যাবার্ডের। তবে তিনি ২১ বছর বয়স থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি তখন হাওয়াই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৪২তম জেলা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি সিনেমাটোগ্রাফার আব্রাহাম উইলিয়ামসকে বিয়ে করেছেন। তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড হাওয়াই স্টেট সিনেটর, যিনি রিপাবলিকান থেকে ডেমোক্র্যাটে যোগদান করেন।
মার্কিন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিভে প্রথম হিন্দু
২০১২ সালে ১১৩তম কংগ্রেসে তুলসি গ্যাবার্ড ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে আসন জিতেন। তিনি রিপাবলিকান কাওভিকা ক্রাউলিকে পরাজিত করেছিলেন। গ্যাবার্ড পেয়েছিলেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫০৩ ভোট (৮০.৬ শতাংশ) এবং ক্রাউলি পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ৭০৭ ভোট (১৯.৪ শতাংশ)।
এর মাধ্যমে তিনি প্রথম হিন্দু হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন এবং প্রথম আমেরিকান সামোয়ান হিসেবে কংগ্রেসের সদস্য হন।
তার প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গ্যাবার্ড ভগবৎ গীতার ওপর শপথ নেন।
সে সময় তিনি বলেছিলেন, "আমি বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী।"
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এবং দল পরিবর্তন
তুলসী গ্যাবার্ড ২০২০ সালের ১১৭ তম কংগ্রেসে পুনঃনির্বাচনের প্রার্থী হননি এবং এর পরিবর্তে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চেষ্টা করেন।
তার নির্বাচনী প্রচারণা আমেরিকান সামরিক হস্তক্ষেপ এবং প্রগতিশীল এজেন্ডাগুলির উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। যদিও পরে তিনি প্রার্থী হিসেবে সরে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সমর্থন জানান।
তবে ২০২২ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ত্যাগ করেন এবং অভিযোগ করেন, পার্টি "একটি অভিজাত যুদ্ধে আগ্রহী গোষ্ঠী" এবং "উইওক" মতবাদীরা পার্টি নিয়ন্ত্রণ করছে।
এরপর গ্যাবার্ড ২০২২ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান এবং রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।