ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কের পর পালটা শুল্ক আরোপ করল ইইউ, কানাডা

বুধবার (১২ মার্চ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি মার্কিন উৎপাদনের জন্য সমান সুযোগ তৈরির একটি পদক্ষেপ বলে দাবি করা হলেও, এর ফলে আমেরিকান ভোক্তা ও শিল্প পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এই প্রথমবারের মতো মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পালটা ব্যবস্থা নিয়েছে, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কার্যকর করা হয়।
এছাড়া একই দিন সকালে কানাডাও ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের বহুমুখী শুল্ক নীতির সর্বশেষ পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা দূর করা এবং দেশীয় শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা। তবে, এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই প্রথমবার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলো, যা বিশ্বের সব দেশের জন্য প্রযোজ্য।
এই শুল্ক আরোপ ঝুঁকিপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। যদিও এটি আমেরিকার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পকে চাঙ্গা করতে পারে, একই সঙ্গে দেশটির নির্মাতাদের জন্য কাঁচামালের দাম বাড়িয়ে দেবে।
ফলে, এই বাড়তি খরচ শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর চাপানো হতে পারে। এতে উৎপাদন ব্যয় যে পরিমাণ বাড়বে, লাভ তার তুলনায় কম হতে পারে।
ট্রাম্পের আগের মেয়াদেও এমনটি ঘটেছিল। ২০১৮ সালে তার আরোপিত ধাতু শুল্ক সামান্য পরিমাণে মার্কিন উৎপাদন বাড়ালেও, গাড়ি, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই শুল্কের ফলে ২০২১ সাল নাগাদ সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোর উৎপাদন ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমে যায়।
শুল্ক আরোপের নেতিবাচক প্রভাব এর সুরক্ষিত শিল্পগুলোতেও পড়তে পারে। ট্রাম্পের নতুন শুল্কের ফলে অ্যালুমিনিয়াম খাতে ২০ হাজারসহ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন দেশটির অন্যতম বৃহত্তম অ্যালুমিনিয়াম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালকোয়া'র প্রধান নির্বাহী উইলিয়াম ওপলিংগার।
বুধবারের আগে পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন শুধু চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল।
তবে, মেক্সিকো ও কানাডার জন্য একটি শর্ত রাখা হয়—যদি তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ইউএসএমসিএ (যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি) অনুসরণ করে, তাহলে তারা ২ এপ্রিল পর্যন্ত শুল্ক এড়াতে পারবে।
বুধবার (১২ মার্চ) সকালে কানাডা ঘোষণা দেয়, এটি বেশ কিছু প্রতিশোধমূলক/পালটা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।
এর আওতায় ২৯.৮ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের (২০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে, যার মধ্যে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যও রয়েছে।
এছাড়া, কানাডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কোটি কোটি ডলারের কম্পিউটার, ক্রীড়া সামগ্রী ও ঢালাই লোহার পণ্যকে পালটা শুল্কের লক্ষ্যবস্তু করেছে।
'আমরা আমাদের পালটা ব্যবস্থা চালু রাখব এবং ২ এপ্রিল থেকে তা আরও বাড়াব,' বলেছেন কানাডার অর্থমন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্ক।
তিনি বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
'আগামীকালের [১৩ মার্চ] আলোচনার উদ্দেশ্য হবে উত্তেজনা কমানো এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্ধারিত প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা। লুটনিকের কাছে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় থাকবে বিশ্বব্যাপী শুল্ক সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার,' যোগ করেন লেব্ল্যাঙ্ক।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের 'অযৌক্তিক' শুল্কের জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বুধবার ২৬ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর পালটা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
এর আওতায় নৌকা, বার্বন ও মোটরসাইকেলের মতো পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো হয়েছে, যা আগামী এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
ইইউ এক বিবৃতিতে জানায়, এসব পদক্ষেপ 'দ্রুত ও আনুপাতিক'ভাবে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ইইউ থেকে রপ্তানিকৃত লোহা ও ইস্পাতের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার।
২০২৩ সালে ইউরোপীয় অ্যালুমিনিয়ামেরও দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা ছিল দেশটি।
তবে, ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস জানিয়েছে, সর্বশেষ শুল্ক বৃদ্ধি 'ইউরোপের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।'
সংস্থাটি আরও জানায়, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে এখন চীনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বড় বাজার হয়ে উঠেছে।
শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ একে 'সম্পূর্ণ অযৌক্তিক' ও 'আমাদের দুই দেশের স্থায়ী বন্ধুত্বের চেতনার বিরুদ্ধে' বলে মন্তব্য করেন।
তবে, তিনি স্পষ্ট করেন যে, অস্ট্রেলিয়া আমেরিকার বিরুদ্ধে পালটা কোনো শুল্ক আরোপ করবে না।