ইউক্রেনে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা নিয়ে সন্দিহান রাশিয়া

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ইউক্রেনে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে রাশিয়ান সূত্রগুলো।
বুধবার তারা আরও জানায়, যদি কোনো সমঝোতা হয়, তবে সেক্ষেত্রে রাশিয়ার সামরিক অগ্রগতির [ইউক্রেনে] বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে এবং মস্কোর উদ্বেগের সমাধান করতে হবে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণে লাখ লাখ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে, মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর মস্কো ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে।
তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগের নীতি পরিবর্তন করেছেন, মস্কোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় স্থগিত করেছেন এবং বলেছেন ইউক্রেনকে যুদ্ধ বন্ধের শর্ত মেনে নিতে হবে।
কিয়েভ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত বলে জানানোর পর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ফের সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় শুরু করতে সম্মত হয়েছে।
রাশিয়ার একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাশিয়া চায় যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে তারা কিছু নিশ্চয়তা পাবে, যাতে ভবিষ্যতে তাদের ক্ষতি না হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র রয়টার্সকে বলেন, 'বর্তমানে যা বলা হচ্ছে সেভাবে পুতিনের পক্ষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়া কঠিন। পুতিনের অবস্থান শক্ত, কারণ রাশিয়া [ইউক্রেনে] এগিয়ে যাচ্ছে।'
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ, প্রায় ১১৩,০০০ বর্গ কিলোমিটার (৪৩,৬৩০ বর্গ মাইল), এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং কয়েক মাস ধরে যুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে।
যুদ্ধের ওপেন সোর্স মানচিত্র এবং রাশিয়ার অনুমান অনুসারে,গত আগস্টে ইউক্রেন দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে পশ্চিম রাশিয়ার একটি ছোট অংশ দখল করেছিল, তবে সেখানে তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
রুশ সূত্রটি বলেছে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে কোনো গ্যারান্টি না থাকলে রাশিয়ার অবস্থান দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং পরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে যুদ্ধ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করতে পারে।
আরেকটি শীর্ষ রাশিয়ান সূত্র জানিয়েছে, মস্কোর দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি একটি ফাঁদ মনে হচ্ছে, কারণ পুতিনের জন্য কিছু বাস্তব গ্যারান্টি বা প্রতিশ্রুতি ছাড়া যুদ্ধ থামানো কঠিন হবে।
তৃতীয় একটি রুশ সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে বড় কথা হলো যুক্তরাষ্ট্র ফের সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় শুরু করতে রাজি হয়েছে এবং সেই পদক্ষেপটি একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়ে সাজানো হয়েছে।
তবে ক্রেমলিন এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
যুদ্ধ ও শান্তি
পুতিন বারবার স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
গত ডিসেম্বরেও তিনি বলেছিলেন, 'আমাদের যুদ্ধবিরতি দরকার নেই, আমাদের দীর্ঘমেয়াদী শান্তির প্রয়োজন যা রাশিয়ান ফেডারেশন এবং তার নাগরিকদের জন্য গ্যারান্টি দ্বারা সুরক্ষিত হবে। এই গ্যারান্টি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তা একটি কঠিন প্রশ্ন।'
গত ২০ জানুয়ারি তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, 'সাময়িক যুদ্ধবিরতি উচিত নয়, যুদ্ধ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কোনো ধরনের বিরতির সুযোগে যাতে বাহিনী পুনর্গঠন ও পুনঃসশস্ত্রকরণের সুযোগ না পায়। আমাদের বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রয়োজন।'
গত বছরের জুনে পুতিন শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তার পক্ষ থেকে শর্ত ঘোষণা করেছিলেন: ইউক্রেনকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে তার ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে কিয়েভের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ এবং লুহানস্ক অঞ্চলের ৯৯ শতাংশের বেশি এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
রাশিয়া বলেছে, এই চারটি অঞ্চলের পুরোটাই এখন আইনত রাশিয়ার অংশ এবং এগুলো কখনোই ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। তবে ইউক্রেন বলছে এই অঞ্চলগুলো অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে এবং কিয়েভ কখনোই নিজ দেশের অভ্যন্তরে রাশিয়ার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করবে না।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের 'ময়দান বিপ্লব'-এ রুশবান্ধব এক প্রেসিডেন্টের পতন এবং রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করার পর পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাত শুরু হয় এবং রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর লড়াই শুরু করে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইউক্রেনের মাটিতে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সেনাবাহিনী মেনে নেবে না রাশিয়া।
অন্যদিকে, একজন প্রভাবশালী রাশিয়ান আইনপ্রণেতা বলেছেন যে কোনো শান্তি চুক্তি মস্কোর শর্তে হবে।
রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান কনস্তানতিন কোসাচেভ টেলিগ্রামে এক পোস্টে বলেছেন, 'রাশিয়া [ইউক্রেনে] এগিয়ে যাচ্ছে এবং তাই রাশিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যে কোনো চুক্তি - আমাদের শর্তে হবে, আমেরিকার শর্তে নয়।'