মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে মোদির শীর্ষ উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সাক্ষাৎ

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন—ক্রেমলিন এ তথ্য জানিয়েছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা পরিষদের সচিব সের্গেই শোইগু এবং প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ। ভারতের পক্ষ থেকে অংশ নেন রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার।
অজিত ডোভাল বর্তমানে মস্কো সফরে রয়েছেন, যেখানে তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করছেন। এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন দুই দেশের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা হয়।
গত বছরের বৈঠকে অজিত ডোভালকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, 'আমাদের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গতিশীল ও দৃঢ় হচ্ছে, যা আমাদের আনন্দিত করে। আমরা এটিও দেখে খুশি যে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে ভারত তার রাষ্ট্রক্ষমতা শক্তিশালী করছে এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।'
বৃহস্পতিবারের শুরুতে অজিত ডোভাল আলাদাভাবে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন সের্গেই শোইগু ও অন্যান্য রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বৈঠকের সূচনাপর্বে শোইগু বলেন, 'রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে মজবুত, বিশ্বাসভাজন এবং পরীক্ষিত বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে।' তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মস্কোর জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বের।'
শোইগু আরও বলেন, 'উভয় দেশই একটি নতুন, আরও ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে চায়, যেখানে আন্তর্জাতিক আইনের প্রাধান্য নিশ্চিত থাকবে এবং আধুনিক চ্যালেঞ্জ ও হুমকির বিরুদ্ধে যৌথভাবে মোকাবিলা করা হবে।'
অন্যদিকে অজিত ডোভাল বলেন, এই বছরের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নয়াদিল্লিতে স্বাগত জানাতে পারলে ভারত সরকার আনন্দিত হবে। তিনি জানান, সফরের তারিখ প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
ডোভাল আরও বলেন, 'এই শীর্ষ বৈঠকগুলো সব সময়ই একেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে। এগুলো আমাদের সম্পর্ককে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়ে এসেছে বারবার।'
অজিত ডোভালের মস্কো সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, দেশটির ওপর রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার অভিযোগ এনে—মূলত রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে।
নয়াদিল্লি এই পদক্ষেপকে 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক' বলে মন্তব্য করেছে। ভারত জানিয়েছে, যেসব পদক্ষেপের কারণে তাদের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক বসানো হয়েছে, সেগুলো অনেক অন্যান্য দেশও তাদের জাতীয় স্বার্থে গ্রহণ করছে।
ভারত আগেও বলেছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি তাদের জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক ও জ্বালানি নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনাও করেছে, যারা ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ককে লক্ষ্যবস্তু বানালেও নিজেরা গ্যাস, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং সারসহ নানা খাতে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।