৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন, চালু হবে সামরিক সহায়তা

কিয়েভ জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব তারা মেনে নিতে প্রস্তুত। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সংলাপ শেষে এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে কিয়েভের এই সম্মতির কথা জানানো হয়েছে। ফলে, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান পুনরায় শুরুর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সৌদি আরবের জেদ্দায় আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা আলোচনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাব রাশিয়ার কাছে নিয়ে যাবে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব মস্কোর ওপর। তিনি বলেন, "আমাদের আশা রাশিয়া যত দ্রুত 'হ্যাঁ' বলবে, যাতে আমরা এর দ্বিতীয় ধাপে যেতে পারি। সেটি হবে আসল আলোচনা।"
ক্রেমলিন তিন বছর আগে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযান শুরু করার পর বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখলে নিয়েছে।
মার্কো রুবিও বলেন, ওয়াশিংটন চায় রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ের সঙ্গে দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হোক। তিনি বলেন, "প্রতিদিন এই যুদ্ধ চলতে থাকায় মানুষ মারা যাচ্ছে, বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, উভয় পক্ষই আহত হচ্ছে।"
তবে মস্কো কীভাবে এ প্রস্তাবে রাজি হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। তবে তিনি ও তার কূটনীতিকরা বারবার জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে এবং রাশিয়ার 'দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা' নিশ্চিত করে এমন একটি চুক্তি তারা করতে চান।
পুতিন ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন এবং বলেছেন, ইউক্রেনকে অবশ্যই সেই চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যেতে হবে, যেগুলোর দাবি রাশিয়া করেছে এবং আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগের সম্ভাবনাকে নাকচ করছেন না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সৌদি আরবে উপস্থিত থাকলেও শান্তি আলোচনায় অংশ নেননি। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি একটি "ইতিবাচক প্রস্তাব", যা কেবল আকাশ ও সমুদ্রের লড়াই নয়, সংঘাতের সম্মুখভাগকেও অন্তর্ভুক্ত করে।
তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া সম্মত হলে যুদ্ধবিরতি সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে।
জেলেনস্কি বলেন, "যখন এই চুক্তিগুলো কার্যকর হবে, তখন এই ৩০ দিনের 'নীরবতার' সময়ে আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে মিলে নির্ভরযোগ্য শান্তি ও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার সব দিক নিয়ে কাজের নথি প্রস্তুত করার সুযোগ পাব।"
রুবিও বলেন, এই পরিকল্পনাটি রাশিয়ার কাছে বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তার রুশ সমকক্ষের সঙ্গে দেখা করবেন এবং ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহে মস্কো সফর করে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন।
মঙ্গলবার ট্রাম্প দ্রুত যুদ্ধবিরতির আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং এই সপ্তাহেই পুতিনের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে হোয়াইট হাউজে উত্তপ্ত বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্ক নতুন মোড় নেয়। সেই বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ করে দেয়।