সংসদ ভবন এলাকায় 'জুলাই যোদ্ধাদের' সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গাড়ি ভাঙচুর-সড়কে আগুন
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে থেকে 'জুলাই যোদ্ধাদের' সরিয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে তিন দাবিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন শতাধিক 'জুলাই যোদ্ধা'। দুপুর ২টা নাগাদ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সকালে যেসব 'জুলাই যোদ্ধা' জোর করে সংসদ চত্বরে ঢুকেছিলেন, তাদের অনুষ্ঠানস্থল থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে।
আন্দোলনকারীরা এসময় সংসদ ভবনের সামনের সড়ক মানিক মিয়া এভিনিউতে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর করেন। আগুন ধরিয়ে দেন অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিত অস্থায়ী অভ্যর্থনা কক্ষ, কন্ট্রোল রুম এবং আসবাবপত্রে।
মানিক মিয়া এভিনিউ ফাঁকা করতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, সোয়াট, বিজিবি ও আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের একটি দলকে পুলিশ খামারবাড়ি মোড়ের দিকে, আরেকটি দলকে আসাদ গেটের প্লাজার প্রান্তের দিকে সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


এর আগে পুলিশ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা 'জুলাই যোদ্ধাদের' সঙ্গে কথা বলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মঞ্চ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে 'জুলাই যোদ্ধাদের' শান্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সকাল ১০টার দিকে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে 'জুলাই যোদ্ধারা' প্রধান ফটক ও দেয়াল টপকে জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে তারা দক্ষিণ প্লাজায় মঞ্চের সামনে চলে যান। অনেকে বসে পড়েন অনুষ্ঠানস্থলে অতিথিদের আসনে। সেখানে তিন দাবিতে অবস্থান গ্রহণ করেন তারা।


তাদের তিন দাবি হলো—জুলাই সনদে জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে, জুলাইয়ে শহীদ ও আহতদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে এবং সুরক্ষা আইনসহ দায়মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তবে সকালে 'জুলাই যোদ্ধাদের' একটি দল সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে পারলেও আরেকটি দলকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এরপরেই প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ারা সংসদের ১২ নম্বর গেটের সামনে বসে পড়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।


তারা বলেন, 'আমাদের রক্তের বিনিময়ে এক গ্রুপ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এক গ্রুপকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এজন্য তারা এই সংসদে আসতে পেরেছে। এখন তারা আমাদের এখানে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমরা যদি আবার রক্ত দিই, তাহলে কিন্তু এরাও টিকবে না। আমাদের কেন জাতীয় সংসদে ঢুকতে তাদের কাছ থেকে পাশ নিতে হবে।'
আজ বিকেল চারটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় 'জুলাই সনদ' স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সরকার। অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা এতে সই করবে না।
অন্যদিকে, বাম ধারার চারটি দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ—বলে দিয়েছে, সংশোধিত খসড়া হাতে না পেলে তারাও জুলাই জাতীয় সনদে সই করবে না।