ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ভারতের পর্যটন গ্রাম ছেড়ে দলে দলে চলে যাচ্ছেন পর্যটকরা

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের হাম্পি শহরের কাছাকাছি অবস্থিত ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইটের কাছে একজন ইসরায়েলি পর্যটক ও স্থানীয় এক হোমস্টের মালিক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া একজন পুরুষ পর্যটককে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে অনেক বিদেশি পর্যটক সেখান থেকে চলে গেছেন। খবর বিবিসি'র।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) হাম্পির প্রধান ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার (১৭ মাইল) দূরে অবস্থিত সানাপুর গ্রামে ওই দুই নারী ধর্ষণের শিকার হন।
পুলিশ জানিয়েছে, তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে এই অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এক সময় হিন্দু বিজয়নগর রাজ্যের রাজধানী হাম্পি বর্তমানে একটি উন্মুক্ত যাদুঘরের মতো। সেখানে তুংভাভদ্রা নদীর তীরে বিস্ময়কর পাথরের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ১৯৮৬ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।
হাম্পির নদীর অপর পারে অবস্থিত সানাপুর গ্রামকে "একটি অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন এলাকা" হিসেবে বর্ণনা করেছেন জেলা পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট রাম আরাসিদ্দি।
অনেক বিদেশি পর্যটক, বিশেষ করে ইসরায়েল ও ইউরোপের অনেকেই হাম্পি ভ্রমণ করেন। তারা সানাপুরে থাকেন। সেখানেও বিশাল ধ্বংসাবশেষ এবং একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির রয়েছে।
কর্ণাটক টুরিস্ট গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিরূপাক্ষ ভি হাম্পি বলেন, "মোটামুটি ১ লাখ বা তারও বেশি বিদেশি পর্যটক প্রতি বছর এই এলাকায় আসেন।"
তবে হামলার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বেশিরভাগ পর্যটকই তাদের বুকিং বাতিল করেছেন বা চলে গেছেন।
সাঈদ ইসমাইল নামে একজন ট্যুর গাইড বিবিসিকে বলেন, "প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যটক, যাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলি, বৃহস্পতিবারের পর থেকে হোমস্টে ছেড়ে, এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।"
তিনি আরও জানান, যারা এখনও এখানে রয়েছেন, তাদের দলবেঁধে চলাচল করার এবং খুব দূরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কিছু পর্যটক বলেছেন, তারা তাদের পরিকল্পনায় শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।
২১ বছর বয়সী ইসরায়েলি পর্যটক তালিয়া জিলবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে বলেন, "এই ঘটনা সত্যিই ভীতিকর এবং আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের এখানে হোলি উৎসব পর্যন্ত থাকার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু এখন আমরা রাজস্থানে যাচ্ছি।"
রাজ্য মন্ত্রী শিবরাজ তাঙ্গাদাগি এলাকাতে রাতের বেলা ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
একজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তাদের একটি দল মন্দিরের কাছে তারা পর্যবেক্ষণ করছিল। তখন তিনজন পুরুষ মোটরসাইকেল নিয়ে এসে তাদের কাছে পেট্রোল কোথায় পাওয়া যায় তা জানতে চায়।
তারা তাদের পথের নির্দেশনা দিলেও ওই ব্যক্তিরা ১০০ রুপি দাবি করে। দলটি প্রথমে টাকা দিতে রাজি হয়নি, কারণ তারা ওই ব্যক্তিদের চিনত না। কিন্তু এক পর্যটক শেষ পর্যন্ত তাদের ২০ রুপি দেয়।
পুলিশ সুপারেন্টিন্ডেন্ট রাম আরাসিদ্দি বলেন, এরপর তারা পর্যটকদের সাথে তর্ক শুরু করে এবং আক্রমণকারীরা একসময় তিনজন পুরুষ পর্যটককে কাছাকাছি একটি খালে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর ওই দুই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। খালে ফেলে দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ডুবে মারা যান।
পুলিশ জানায়, তারা বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের জবানবন্দির ভিত্তিতে হত্যাচেষ্টা, ডাকাতি এবং ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছেন।
শনিবার দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রোববার তামিলনাড়ু রাজ্য থেকে আরও একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।