মার্কিন সহায়তা ছাড়া যেমন হতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধ

সম্প্রতি ওভাল অফিসে প্রকাশ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। স্বাভাবিক আলোচনা দ্রুতই তীব্র মতবিরোধে রূপ নেয়।
তবে কিছু বাস্তবতা আগে থেকেই স্পষ্ট ছিল। যেমন, যুদ্ধ বন্ধ করতে ইউক্রেনকে কি যেকোনো শর্ত মেনে নিতে হবে না-কি সে নিজেই শর্ত নির্ধারণ করতে পারবে? ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি কি সম্ভব না-কি যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইউক্রেনকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হবে? আর যদি কিয়েভ তা প্রত্যাখ্যান করে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার সমর্থন পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়, তবে কি ইউক্রেন নিজের শক্তিতে টিকে থাকতে পারবে?
এই বৈঠকের আগেই হোয়াইট হাউস ধরে নিয়েছিল যে ইউক্রেনের কোনো শর্ত নির্ধারণের ক্ষমতা নেই। কিন্তু জেলেনস্কি একথা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিন বছরের ভয়াবহ সংঘাতের পর যুদ্ধ বন্ধ করাটাই ইউক্রেনের জন্য কাঙ্খিত লক্ষ্য। এছাড়া পূর্ববর্তী প্রশাসনের (মার্কিন) অধীনে নেওয়া কৌশলগুলো কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইউক্রেনের টিকে থাকার ক্ষেত্রে পশ্চিমা সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু অস্ত্রের ব্যবহার ও পরিসীমার সীমাবদ্ধতার কারণে যুদ্ধ মূলত এক ক্লান্তিকর পদাতিক সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে, যা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করেছে। তাছাড়া কোনো সুস্পষ্ট বিজয়ের পথও দেখায়নি।
অন্যদিকে, রাশিয়াও তার লক্ষ্যে পুরোপুরি পৌঁছাতে পারেনি বা যুদ্ধ জয়ের নিশ্চিত উপায় খুঁজে পায়নি। ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের প্রথম কয়েক মাসে রুশ বাহিনী কিছু এলাকা দখল করলেও তাদের অগ্রগতি ছিল অত্যন্ত ধীর ও ব্যয়বহুল।
তবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, কখনো কখনো যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা রাশিয়ার প্রচারণার সুরেই কথা বলছেন। এতে ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলোতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে এই ভুল নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, যা রাশিয়ার জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করে যুদ্ধবিরতির জন্য কার্যকর শর্ত আরোপ করতে পারতো। কিন্তু এখন উল্টো মস্কোর জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিয়েভ বহুবার বলেছে যে তারা উপযুক্ত শর্তের ভিত্তিতে যুদ্ধের অবসান ও শান্তি চায়।
সম্প্রতি ইউক্রেন পর্যায়ক্রমিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, যার প্রথম ধাপে বিমান ও নৌপথে হামলা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যদি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া নিঃশর্তভাবে ইউক্রেনকে একটি চুক্তি মানতে বাধ্য করে, তবে তা টেকসই শান্তির পরিবর্তে ভবিষ্যতের সংঘাতের ভিত্তি তৈরি করবে।
এ ধরনের নীতি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত দুর্বলতা প্রকাশ করবে। এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ রুদ্ধ করার পাশাপাশি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার ঝুঁকি তৈরি করবে। ইউক্রেনকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণে বাধ্য করার অর্থ হবে মস্কোর শর্তেই যুদ্ধের পরিণতি নির্ধারণ করা। এতে কিয়েভের সামনে দুটি কঠিন পথ খোলা থাকবে: আত্মসমর্পণ করা অথবা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।
তবে ইউক্রেন অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা আত্মসমর্পণ করবে না। দখলকৃত অঞ্চলে রাশিয়ার দখলদারিত্বের বাজে অভিজ্ঞতা তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে।
ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে ইউক্রেনকে নিজেদের শক্তিতেই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। কারণ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়া কিংবা অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়া—উভয় ক্ষেত্রেই একই পরিণতি ঘটবে।
দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা বন্ধ হলে ইউক্রেনের জন্য তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। ইউরোপের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত থাকলে পুতিন কিছু কৌশলগত অগ্রগতি অর্জন করলেও তার সর্বোচ্চ লক্ষ্যগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সমন্বিত কার্যক্রমে ইউক্রেন সক্রিয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র তার পশ্চিমা মিত্রদের আস্থা হারাবে। একই সঙ্গে পশ্চিমা মিত্রদের ঐক্য চিরতরে দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে ইউক্রেনের সামনে একমাত্র পথ হলো নিজেদের দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
তিন বছরের যুদ্ধে রাশিয়া প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রত্যাশার তুলনায় ব্যর্থ হয়েছে। ইউক্রেনকে দ্রুত দখল করা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে ২০২২ সালে পুতিন তার লক্ষ্যমাত্রা সীমিত করে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেন। যেমন, পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল সম্পূর্ণ দখল, দক্ষিণ ইউক্রেনের মাধ্যমে ক্রিমিয়ার সঙ্গে স্থল সংযোগ বজায় রাখা, ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সামরিক সম্পদ ধ্বংস করা এবং কৃষ্ণসাগরে অবরোধ বজায় রেখে ইউক্রেনীয় অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করা।
কিন্তু এসব লক্ষ্যও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। ইউক্রেনীয় নৌবাহিনী কৃষ্ণসাগরের পথ পুনরায় চালু করেছে, তীব্র ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মধ্যেও ইউক্রেন এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রেখেছে এবং জনগণ প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। ফলে রাশিয়া এখনো ডনবাস পুরোপুরি দখল করতে পারেনি।
বর্তমানে রুশ বাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। দেশটি পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন করতে পারছেনা এবং মস্কোর ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাদের ড্রোন ও অন্যান্য চালকবিহীন অস্ত্র ইউক্রেনীয় প্রযুক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।
অবশ্য ইউক্রেনও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। রাশিয়া সম্পূর্ণ আকাশের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারলেও ফ্রন্টলাইনের কাছাকাছি আকাশসীমায় তাদের প্রভাব বজায় রেখেছে। ফলে তারা শত শত নির্ভুল গাইডেড বোমা, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারছে।
ইউক্রেনে জনবল সংকটও গুরুতর সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিমান ও দূরপাল্লার হামলায় নানা বিধিনিষেধ থাকায় দেশটি পদাতিক বাহিনী ও ট্রেঞ্চ যুদ্ধে নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি সেনা নিহত এবং অসংখ্য আহত হয়েছেন। অস্ত্র, গোলাবারুদ ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
তবে এসকল প্রতিকূলতার মধ্যেও ইউক্রেন তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। বিশেষ করে উন্নত যুদ্ধকৌশল প্রয়োগ করে তারা রাশিয়ার বড় ধরনের অগ্রগতি ঠেকিয়ে দিয়েছে। ড্রোন ও অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিমান ও নৌ অভিযানের মাধ্যমে ইউক্রেন রাশিয়ার একাধিক বাহিনীকে ফ্রন্টলাইনের বাইরে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইউরোপের বাড়তি সহায়তা পেলে দেশটি পদাতিক বাহিনীর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে পারবে।
প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধকৌশলের অংশ হিসেবে 'ড্রোন লাইন' ধারণা ব্যবহার করে ইউক্রেন রুশ বাহিনীকে ফ্রন্টলাইনের কাছে আসতে বাধা দিতে পারে। এতে সেনা সংকট মোকাবিলা সহজ হবে এবং সামগ্রিকভাবে যুদ্ধের ভারসাম্য ইউক্রেনের পক্ষে রাখার সুযোগ তৈরি হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেন এখনও পুতিনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে। ইউরোপের বাড়তি সহায়তা পেলে আগামী বছরের মধ্যে ইউক্রেন রাশিয়ার অগ্রগতি পুরোপুরি থামিয়ে দিতে পারে। সংক্ষেপে, বিপুল সম্পদ ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো যুদ্ধ জিততে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।
ওয়াশিংটনের সামনে বেশ কিছু কৌশলগত সুযোগ রয়েছে। তারা রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে মস্কোর ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বাস্তবে, স্থিতিশীলতা দেখানোর আড়ালে ক্রেমলিন ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে।
ইতিহাস বলছে, রাশিয়া মানবিক ক্ষতির চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়কেই বেশি গুরুত্ব দেয়। ইউক্রেনীয় বাহিনী যদি দখলকৃত অঞ্চল থেকে রুশ সেনাদের পিছু হটাতে পারে, তাহলে পুতিন তার কৌশল পুনর্বিবেচনায় বাধ্য হবেন। যদি রুশ আক্রমণ ব্যর্থ হতে শুরু করে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনী দখলকৃত এলাকার কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করতে পারে, তবে ক্রেমলিন আরও বড় পরাজয়ের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে।
এ ধরনের পরাজয় পুতিনের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। এতে তার ক্ষমতা হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার জন্য যুদ্ধ সীমিত করা এবং সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্প হবে।
তবে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হলে রাশিয়ার নতুন করে হামলা ঠেকানোই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। মস্কো সুযোগ পেলেই আবার সামরিক অভিযান শুরু করতে চাইবে। ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে এ ধরনের অভিযান সবচেয়ে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যেত। তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে এতটাই শক্তিশালী করা সম্ভব যাতে তারা রুশ আক্রমণ চূড়ান্তভাবে প্রতিহত করতে পারে।
সামরিক বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাঠামো কেমন হবে তা নিয়ে কাজ করছেন। কিছু ইউরোপীয় দেশ শান্তিরক্ষী বা সহায়ক বাহিনী হিসেবে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তাদের কার্যক্রমের সীমা স্পষ্ট করতে হবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের পূর্ণ ক্ষমতা থাকতে হবে।
যদি ইউরোপ এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতারা সম্মতি দেন, তাহলে ওয়াশিংটনের ভূমিকা হবে নির্দিষ্ট সামরিক সহায়তা সরবরাহ করা। এর মধ্যে থাকবে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্য নির্ধারণের সহায়তা, তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য এবং নির্দিষ্ট কিছু সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ।
ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে বাড়তি চাপ ছাড়াই রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ইউক্রেন রাশিয়ার শর্তে কোনো চুক্তি করলেও প্রকৃত শান্তি আসবে না। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির নিরাপত্তার নিশ্চয়তার দাবি শুধু রাজনৈতিক অবস্থান নয় বরং বাস্তব আশঙ্কার ভিত্তিতে করা। রাশিয়া ভবিষ্যতের আরও বড় হামলার প্রস্তুতির জন্য সাময়িক অস্ত্রবিরতি ব্যবহার করতে পারে।
ফলে আরও শক্তিশালী ও পুনর্গঠিত রাশিয়ার আক্রমণ ইউক্রেনের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে, ইউক্রেন পরবর্তী হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবে না, যা যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
অস্ত্রবিরতির পর নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার ধারণাটিও ভুল। কারণ এটি রাশিয়াকে কূটনৈতিকভাবে সময়ক্ষেপণের সুযোগ করে দেবে। তখন তারা অস্ত্রবিরতি ভাঙার হুমকি দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে যুদ্ধে না জড়ানোর জন্য চাপ দিতে পারে।
রাশিয়ার তাৎক্ষণিক লক্ষ্যগুলো স্পষ্ট— দখলকৃত অঞ্চলকে বৈধতা দেওয়া, যুদ্ধাপরাধের দায় এড়িয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক পতন রোধ করা এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। পাশাপাশি, ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লক্ষ্যও অপরিবর্তিত রয়েছে।
যদি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত এই পরিবর্তনের কারণে ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে থাকা পুতিন বিজয়ী হয়ে ওঠেন, তবে বৈশ্বিক নিরাপত্তার চিত্র বিপজ্জনকভাবে বদলে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামনে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে দেশটি নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা গড়ে তুলেছে এবং বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলা করতে সক্ষম।
একইভাবে, ইউক্রেনেও সুপরিকল্পিত অস্ত্রবিরতি ও কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।