ট্রাম্পকে পাঠানো জেলেনস্কির আপসমূলক চিঠি তার বিকল্প না থাকারই ইঙ্গিত

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের সিদ্ধান্ত কতটা বুদ্ধিমানের কাজ, সেটির উত্তর ইউক্রেনে কার কাছে এ প্রশ্ন করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে। খবর বিবিসি'র।
ইউক্রেনের ব্লগার ও সেনাবাহিনীর সদস্য ইউরি কাসিয়ানভ বলেন, 'খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত।' তিনি মনে করেন, এই খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্র 'ইউক্রেনকে কোনো কিছুতেই সহায়তা করবে না'।
ইউক্রেনের সাবেক সংসদ সদস্য বরিসলাভ বেরেজা বলেন, 'প্রেসিডেন্ট (জেলেনস্কি) মর্যাদার সঙ্গে আচরণ করেছেন।' তিনি জেলেনস্কির নরম অবস্থানকে 'ক্ষমাপ্রার্থনা' হিসেবে দেখছেন।
গত রাতে কিয়েভে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরের আঙিনা থেকে ভলোদিমির জেলেনস্কি তার সন্ধ্যাকালীন ভাষণ দেন। এটাই সেই বিখ্যাত স্থান, যেখানে ২০২২ সালে রুশ আক্রমণের দ্বিতীয় দিনে তিনি তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে 'আমরা সবাই এখানে আছি' বক্তব্য দিয়েছিলেন।
সেই সময় তিনি দেশ ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পশ্চিমের অনেকেই ধারণা করেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যে রাশিয়া কিয়েভ দখল করবে এবং জেলেনস্কিকে আটক বা হত্যা করা হবে।
তিন বছর পর দেখা যাচ্ছে, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার তার সেই সিদ্ধান্ত ধীরে ধীরে তার হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে।
তিনি বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের 'শক্তিশালী নেতৃত্বে' কাজ করতে প্রস্তুত এবং এখন 'সবকিছু ঠিক করার সময় এসেছে'।
ওয়াশিংটনের শত্রুতাপূর্ণ বক্তব্য, ওভাল অফিসের সেই বৈঠক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা 'স্থগিত' করার সিদ্ধান্ত জেলেনস্কিকে ট্রাম্পের শান্তি নীতির কাছে নত হতে বাধ্য করেছে।
গত সপ্তাহ পর্যন্ত জেলেনস্কি দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, ইউক্রেন কেবল তখনই শান্তি চুক্তিতে সম্মত হবে, যখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে; অন্যথায় তারা লড়াই চালিয়ে যাবে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, মস্কোর কিছু দাবি পুনরাবৃত্তি করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প 'বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের জগতে' বসবাস করছেন।
এসব ঘটনার পটভূমিতেই শুক্রবার ট্রাম্প ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। সেখানে তারা জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রকে 'অশ্রদ্ধা' করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন এবং তাকে দেশ ছাড়ার কথা বলেন।
সপ্তাহের শেষে ইউরোপীয় নেতাদের কাছ থেকে জেলেনস্কি তুলনামূলকভাবে উষ্ণ সংবর্ধনা পেলেও তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।
এরপর মঙ্গলবার ট্রাম্প ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা স্থগিত করেন। এতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ইউক্রেন হয়তো কয়েক মাসের মধ্যেই প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে এবং জেলেনস্কিকে এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে এক চিঠিতে তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে কী কী অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, তার স্পষ্ট প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে নৌ ও আকাশপথে যুদ্ধবিরতি রয়েছে, যা প্রথমে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখোর পক্ষ থেকে সপ্তাহের শেষে প্রস্তাব করা হয়।
ট্রাম্প সেই চিঠির প্রশংসা করেন, যা দুই নেতার মধ্যে উত্তেজনা কমানোর ইঙ্গিত দেয়। তিনি জানান, জেলেনস্কি একটি শান্তিচুক্তিতে সম্মত হয়েছেন।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়াই খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে জেলেনস্কির বর্তমান আগ্রহ। অথচ এতদিন তিনি এটি অপরিহার্য হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাদের কোম্পানিগুলো ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে যুক্ত হলে তা রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন থেকে বিরত রাখতে যথেষ্ট হতে পারে। তবে, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা সংস্থাগুলোর উপস্থিতি মস্কোকে পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ শুরু করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
এর চেয়েও লক্ষণীয় বিষয় হলো, সম্ভাব্য কোনো শান্তি চুক্তিতে রাশিয়ার জন্য আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোনো বড় ধরনের ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না।
সম্ভবত জেলেনস্কির রাজনৈতিক বিকল্প ফুরিয়ে এসেছে। তার ইউরোপীয় মিত্ররা যখন স্বীকার করছেন যে তারা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল, তখন ওয়াশিংটনই জেলেনস্কির একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠছে।