১০০ মিনিটের রেকর্ড ভাষণে বিশ্ব নিয়ে যেসব পরিকল্পনার কথা বললেন ট্রাম্প

নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া প্রথম ভাষণে টানা ১০০ মিনিট কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো প্রেসিডেন্টকে এত সময় ধরে ভাষণ দিতে দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় যে 'স্বর্ণযুগে' ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবে পরিণত করতে চান তিনি।
তিনি বলেন, 'আমেরিকার গতি ফিরে এসেছে। আমাদের গৌরব ফিরে এসেছে। আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে।'
ট্রাম্পের মতে, তার এই বক্তব্য ছিল বিশ্বের একটি রেকর্ড-ব্রেকিং ১০০ মিনিট।
তিনি তার ভাষণে অভিবাসন থেকে খেলাধুলা; আমেরিকান জীবনের প্রতিটি দিক নিয়ে ঐতিহাসিক পরিমাণ নির্বাহী আদেশের কথা উল্লেখ করেন।
ভাষণে তার এই মেয়াদের আগামী চার বছর কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চালাবেন, সে বিষয়ে সেনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের ধারণা দেন তিনি।
ট্রাম্প তার ভাষণের শুরুতেই তার বিশেষ ঘনিষ্ট ধনকুবের ইলন মাস্কের নাম নেন। এসময় মাস্ককে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'তিনি (মাস্ক) অনেক পরিশ্রম করছেন।'
এরপর সরকারের বাড়তি কয়েকটি খরচের উদাহরণ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, সরকারের ব্যয় কমাতে মাস্কের উদ্যোগের কারণে অপচয়মূলক ব্যয় কমানো গেছে।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে একটি নতুন শিপবিল্ডিং অফিস নির্মাণের ঘোষণা দেন, যা 'বাণিজ্যিক জাহাজ নির্মাণ এবং সামরিক জাহাজ নির্মাণসহ আমেরিকান জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে'।
তিনি তার নির্বাচনী প্রচারের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার অঙ্গীকার করেন।
ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা এখন আরও নিকটে। কারণ দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাকে দেওয়া এক 'গুরুত্বপূর্ণ চিঠি'তে জানিয়েছেন, 'তিনি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।'
মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ও চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক এবং এর জেরে বাজারে চলমান অস্থিরতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমেরিকাকে আবার ধনী ও মহান করার জন্যই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আমরা দ্রুতই ধনী হয়ে যাব। সামান্য বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, কিন্তু বেশি হবে না।'
এসময় আগামী ২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের কথা জানান ট্রাম্প।
২০১৭ সালে কংগ্রেসে ট্রাম্পের প্রথম ভাষণের সঙ্গে তার এবারের ভাষণের পার্থক্য ছিল উল্লেখযোগ্য। সেসময় ট্রাম্প বলেন, 'নভেম্বর ৮ তারিখে নির্বাচনের পর থেকে শেয়ার বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়েছে, যা একটি রেকর্ড।'
তবে এবার এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যান দেননি তিনি।
ট্রাম্প বলেন, 'এটি হবে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ।'
তিনি বলেন, 'প্রিয় আমেরিকাবাসী, অবিশ্বাস্য ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হও, কারণ আমেরিকার স্বর্ণযুগ মাত্র শুরু হয়েছে।'
ভাষণের সময় কিছু ডেমোক্র্যাট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওয়াকআউট করেন। আর একজন, টেক্সাসের রিপাবলিকান আল গ্রিনকে বারবার ট্রাম্পকে বাধা দেওয়ায় হাউস চেম্বার থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়।
রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের তার ভাষণের ভূয়সি প্রশংসা করতে দেখা যায়, তবে ডেমোক্র্যাটদের খুব কমই হাততালি দিতে দেখা যায়।
কিছু ডেমোক্র্যাট ট্রাম্পের বক্তৃতা চলাকালীন বের হয়ে যান। এবং টেক্সাসের ডেমোক্রেট প্রতিনিধি আল গ্রিন বারবার ট্রাম্পকে বাধা দেওয়ায়, সংসদ কক্ষ থেকে তাকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া হয়।