'উলি মাইস' তৈরির মাধ্যমে বরফ যুগের ম্যামথ পুনরুজ্জীবনের পথে বিজ্ঞানীরা

প্রাগৈতিহাসিক বরফ যুগের ম্যামথকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা আরও একধাপ এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এর অংশ হিসেবে তারা সম্প্রতি 'উলি মাউস' নামে নতুন এক প্রজাতির ইঁদুর তৈরি করেছেন, যা ঠান্ডা সহনশীলতার জন্য বিশেষভাবে জিনগতভাবে পরিবর্তিত।
মার্কিন বায়োটেক কোম্পানি কোলোসাল বায়োসায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ম্যামথকে পুনরুজ্জীবিত করতে এশীয় হাতির জিন পরিবর্তন করে তাদের মধ্যে ম্যামথের বৈশিষ্ট্য যুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন। তাদের আশা, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রথম ম্যামথ জাতের বাচ্চা জন্ম নেবে।
কোলোসালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী বেন ল্যাম জানিয়েছেন, তাদের দল ম্যামথের প্রাচীন জিনোম বিশ্লেষণ করে তা এশীয় হাতির জিনোমের সঙ্গে তুলনা করছে, যাতে পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করা যায়। ইতোমধ্যে তারা এশীয় হাতির কোষে জিন সম্পাদনার কাজ শুরু করেছেন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাইয়ে তারা একটি নতুন পরীক্ষা চালিয়েছেন, যেখানে ইঁদুরের জিন সম্পাদনা করে তাদের গায়ে লোমশ স্তর তৈরি করা হয়েছে। পরীক্ষাটি এখনো পর্যালোচনার (পিয়ার-রিভিউ) অপেক্ষায় রয়েছে।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা একাধিক জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। তারা কিছু ক্ষেত্রে নিষিক্ত ইঁদুর ডিম্বাণুর জিন পরিবর্তন করেছেন, আবার কিছু ক্ষেত্রে স্টেম সেলের জিন সম্পাদনা করে তা ভ্রূণের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছেন এবং পরবর্তীতে সেগুলোকে সারোগেট মায়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করেছেন।
গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল ইঁদুরের লোমের রং, গঠন, দৈর্ঘ্য ও গঠন সম্পর্কিত নয়টি জিন পরিবর্তন করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা এমন জিন বেছে নিয়েছেন যা সাধারণত ইঁদুরের লোমের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই পরিবর্তনের ফলে ইঁদুরগুলোর লোম ম্যামথের মতো উলিযুক্ত ও সোনালি রঙের হয়েছে।
এছাড়াও, বিজ্ঞানীরা এমন দুটি জিনের পরিবর্তন করেছেন, যা ম্যামথের লোমশ শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এছাড়া তারা একটি বিশেষ জিনেও পরিবর্তন এনেছেন, যা ফ্যাট মেটাবলিজমের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং ঠান্ডা সহনশীলতার জন্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, বেশ কিছু ইঁদুর ম্যামথের মতো লম্বা ও উলিযুক্ত লোম পেয়েছে। তবে ফ্যাট মেটাবলিজম জিন পরিবর্তন করা হলেও ইঁদুরের শরীরের গড় ওজন অপরিবর্তিত ছিল।
ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ রবিন লাভেল-ব্যাজ এই গবেষণার কারিগরি দিকগুলো প্রশংসা করেছেন। তবে তিনি মনে করেন, গবেষণাটি লোম গঠনের প্রকৃত কার্যপ্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেনি এবং শুধুমাত্র কয়েকটি জিন পরিবর্তন করে ম্যামথের মতো প্রাণী তৈরি করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, 'ম্যামথ পুনর্জীবিত করা শুধু ঠান্ডা সহনশীলতার জন্য কয়েকটি জিন পরিবর্তন করলেই সম্ভব হবে না। তাছাড়া, এসব পরিবর্তনের ফলে হাতিগুলো শুধু দেখতে ম্যামথের মতো হবে, নাকি তাদের আচরণও মিলবে, তা স্পষ্ট নয়।'
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টরি হেরিজ বলেন, 'ইঁদুরের জিন পরিবর্তন করে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য তৈরি করা সম্ভব হলেও ম্যামথের মতো একটি জটিল প্রাণী সৃষ্টি করা আরও কঠিন হবে। এই গবেষণায় আসলে ম্যামথের জিন ইঁদুরে প্রতিস্থাপন করা হয়নি, বরং ইঁদুরের জিন পরিবর্তন করে পরিচিত বৈশিষ্ট্য তৈরি করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'একটি ম্যামথ-সদৃশ হাতি তৈরি করতে অনেক বেশি জিন সংশোধন করা লাগবে, যার অনেকগুলোর কার্যকারিতা এখনো পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়নি।'
গবেষকরা আশা করছেন, আগামী মাসগুলোতে এই পরিবর্তিত ইঁদুরের ঠান্ডা সহনশীলতা পরীক্ষা করা হবে। তবে সমালোচকদের মতে, এই গবেষণা ম্যামথ পুনর্জীবনের দিকে কতটা অগ্রগতি আনতে পারবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।