শ্রমিকদের বেতন মেটাতে সম্পত্তি বিক্রি করছে নাসা গ্রুপ, চেয়ারম্যানের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সই

শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিশোধ করতে নাসা গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গ্রুপটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার কারাগারে বসেই নির্দিষ্ট কিছু জমি ও স্থাপনা বিক্রির জন্য খসড়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) দলিলে স্বাক্ষর করেছেন।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে, নাসা গ্রুপের পক্ষ থেকে এই স্বাক্ষর গ্রহণের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসা গ্রুপের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে জেলগেটে নজরুল ইসলাম মজুমদারের স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, যেসব সম্পত্তি বিক্রির জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো—গুলশান ৭ নম্বর রোডের ৬ নম্বর প্লট, আশুলিয়ার তৈয়বপুর মৌজায় ৫ বিঘা জমি ও তার ওপর নির্মিত একটি ৭ তলা ভবন, নারায়ণগঞ্জের চর চেঙ্গাকান্দি মৌজায় ১০ বিঘা জমি এবং রাজউকের একটি প্লট। এর পাশাপাশি প্রায় ৮৬ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারও বিক্রি করা হবে।
নাসা গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, গ্রুপের অধীন ৩৪টি কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।
গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ থাকা সত্ত্বেও গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই নাসা গ্রুপ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ৩০ জুন পর্যন্ত ২২টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট ৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে নাসা গ্রুপের।
ইউটিলিটি বিল বকেয়া হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এছাড়া শ্রমিকদের জুলাই মাসের বেতন বাকি ১১ কোটি টাকা।
কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছে না গ্রুপটি। বেতন এবং অন্যান্য পাওনার দাবিতে গ্রুপটির বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন।
নাসা গ্রুপের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি স্বাক্ষরিত হওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর ঢাকার গুলশান থেকে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর একাধিক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর শ্রম মন্ত্রণালয় এক জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়, ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ব্যর্থতায় মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নজরুল ইসলাম মজুমদার, তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের পাসপোর্ট বাতিলের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এদিকে খেলাপি ঋণ পরিশোধ করার জন্য ন্যুনতম ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে। এই ডাউন পেমেন্ট দিয়ে গ্রুপটি খেলাপী ঋণ নিয়মিত করার পরে আমদানি রপ্তানির এলসি খুলতে পারবে । এই ডাউন পেমেন্ট এর জন্য প্রায় ৮৭ কোটি টাকা লাগবে বলে জানা গেছে।