রাশিয়ার ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে হোয়াইট হাউস

রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এজন্য ওয়াশিংটন বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলো থেকে রাশিয়াকে ছাড় দেওয়ার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এসব তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ এবিষয়ে অবহিত আরেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি।
সূত্রগুলো জানায়, ইতোমধ্যে যেসব নিষেধাজ্ঞা থেকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ছাড় দিতে পারবে— তার একটি খসড়া তালিকা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র ও অর্থ বিভাগকে। মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের বৃহত্তর আলোচনার অংশ হিসেবে, এগুলো নিয়ে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
নিষেধাজ্ঞা প্রদানকারী দপ্তর বা বিভাগগুলো বর্তমানে রাশিয়ার বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খসড়া তৈরির কাজ করছে। এদের মধ্যে রাশিয়ার কয়েকজন অলিগার্কও রয়েছেন বলে জানান তাঁরা।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যেসব মার্কিন কর্মকর্তারা কাজ করেন, মূলত তারাই কথিত এই অপশন পেপার বা 'উপায়পত্রের' খসড়া নিয়ে কাজ করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে যে উপায়পত্র চাওয়া হয়েছে— তাতে আরও স্পষ্ট যে, মস্কোর সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তির অংশ হিসেবে ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করতে আগ্রহী।
নিষেধাজ্ঞা শিথিল বা ছাড়ের বিনিময়ে ওয়াশিংটন রাশিয়ার কাছে কী চাইবে– তা এখনও স্পষ্টভাবে জানতে পারেনি রয়টার্স।
রাশিয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী দেশ। ট্রাম্প ওপেক-সদস্য ইরানের তেল রপ্তানি বন্ধে আরও কঠোর হতে পারেন। তাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের বড় উত্থান ঘটতে পারে। কিন্তু, রাশিয়ার কিছু জ্বালানি কোম্পানির ওপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে— দরের উত্থান ঠেকানো যাবে বলে ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে।
এবিষয়ে মন্তব্যের জন্য হোয়াইট হাউস, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, ট্রেজারি বিভাগ এবং ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় রয়টার্সের পক্ষ থেকে। তবে তারা কেউই এতে সাড়া দেয়নি।
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকার সময় গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে বলে মন্তব্য করেছিল ক্রেমলিন। কারণ, বাইডেন ইউক্রেনকে অস্ত্রসহ বিভিন্ন রকম ত্রাণ দিয়ে সহায়তা করেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
তবে নির্বাচনি প্রচারের সময়েই দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাগ্রহণের পরেই তিনি আগের প্রশাসনের নীতি পরিবর্তন করে মস্কোর সাথে সরাসরি সংলাপের উদ্যোগ নেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে টেলিফোন করে তার সঙ্গে আলাপ করেন ট্রাম্প। এরপরে সৌদি আরব ও তুরস্কে শীর্ষ রুশ ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে সংলাপ হয়েছে।
রাশিয়ার তেল ও গ্যাস শিল্প বিশাল, কিন্তু এখাত থেকে মস্কোর আয়কে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা দেয় ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর। যাতে মস্কোর পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু, এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া বিকল্প বাজারে জ্বালানি তেল রপ্তানির মাধ্যমে এই বাণিজ্যকে সচল রাখে।