২০২৫ সালেই মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো ফিরতে শুরু করবে: রাশিয়া

রাশিয়ার প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ তহবিলের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকেই বেশ কিছু মার্কিন প্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় ফেরত আসবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকের পর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা বলেন তিনি।
২০২২ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পর ম্যাকডোনাল্ডস এবং ক্যাটারপিলারসহ অনেক পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান রাশিয়া থেকে চলে যায়। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের সম্পত্তি বিক্রি করতে গিয়ে বড় মাপের ক্ষতির স্বীকার হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া এবং ইউক্রেন বিষয়ক পশ্চিমা নীতিতে বড় পরিবর্তন আনেন, ইউক্রেন বা ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আলাপ ছাড়াই রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরুর নির্দেশ দেন এবং তেলের দাম কমানোর কথা বলেন, যার বড় রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া।
রুশ ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে উদ্ধৃত করে বলেন, "২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেশ কিছু মার্কিন প্রতিষ্ঠান রুশ বাজারে ফিরে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।"
তিনি বলেন, "কিন্তু মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর ফিরে আসা সহজ হবে না, কারণ অনেক সেক্টর ইতোমধ্যেই দখল হয়ে গেছে।"
পশ্চিমা বিশ্ব যখন কোনো বড় অর্থনীতির ওপর সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তখন রাশিয়া দ্রুত নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলার ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং দেশীয় উৎপাদকরা আন্তর্জাতিক বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্বে দখল করা বাজার শেয়ার ছিনিয়ে নেয়।
দিমিত্রিয়েভ সৌদি আরবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সাথে আলাপের পর এসব কথা জানান। এটি আমেরিকা-রাশিয়া আলোচনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বৈঠক ছিল।
ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করবেন। তিনি জানিয়েছেন, এই মাসে তার পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে। সৌদি আরবে আলোচনা থেকে ইউক্রেনের বাদ পড়ার বিষয়ে তাদের উদ্বেগকে গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকট পরবর্তী সময়ে রাশিয়ায় কিছু মানুষ আশা করছেন, দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্কও পুনরুদ্ধার হবে
কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়া ছাড়ার কারণে ৩২৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আইটি ও মিডিয়া সেক্টর ১২৩ বিলিয়ন, কনজিউমার ও হেলথকেয়ার ৯৪ বিলিয়ন, এবং ফাইন্যান্স সেক্টরের ৭১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
দিমিত্রিয়েভ রয়টার্সকে বলেন, "অনেক সম্পত্তি অত্যন্ত সস্তায় বিক্রি করা হয়েছে, বিশাল ডিসকাউন্টে।"
পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো ১০৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ইউক্রেন দাবি করেছে, যারা রাশিয়া ছাড়েনি তারা রুশ যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে।
দিমিত্রিয়েভ বিশ্বাস করেন, রাশিয়ায় সফল ব্যবসা পরিচালনা করা যুক্তরাষ্ট্রের তেলভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় রাশিয়ায় ফিরে আসবে। তিনি বলেন, "কেন তারা রাশিয়ার খনিজ সম্পদে প্রবেশের সুযোগ ত্যাগ করবে?"
ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি তেলের মূল্য কমাতে চান এবং এজন্য তার সৌদি আরব ও রাশিয়ার সাহায্য প্রয়োজন।
রিয়াদে অনুষ্ঠিত আলোচনায় রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে আলোচনার জন্য টিম গঠন করতে সম্মত হয় এবং একে অপরের কূটনৈতিক মিশন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করার কথা জানিয়েছে।