বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়ন: গ্রেপ্তার দুইজনের স্বীকারোক্তি, একজন রিমান্ডে

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর এলাকায় রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও দুই নারী যাত্রীর ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার আন্তঃজেলা ডাকাত দলের দুই সদস্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর এক আসামি স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় আদালত তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরিন করিম গ্রেপ্তারকৃতদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।
স্বীকারোক্তি দেওয়া দুইজন হলেন শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. সবুজ (৩০) ও ঢাকার সাভারের টানগেন্ডা গ্রামের মো. শরীফুজ্জামান শরীফ (২৮)।
অন্যদিকে, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম মুহিতের (২৯) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই আহসানুজ্জামান জানান, 'স্বীকারোক্তি দেওয়া দুইজন দাবি করেছেন, এটি তাদের প্রথম ডাকাতি।'
তারা আরও জানিয়েছেন, রিমান্ডে থাকা মুহিত ও তাদের শ্যালক-দুলাভাইসহ মোট ছয়জন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। 'বাসে ডাকাতির সময় দুই নারী যাত্রীর অলংকার ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তাদের শ্লীলতাহানি করা হয়।'
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার সাভার মডেল থানাধীন গেন্ডা এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া তিনটি মোবাইল ফোন, একটি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত অনুমানিক ১টা ৪৫ মিনিট থেকে ৪টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'ডাকাতির ঘটনায় মামলা দায়েরের ১৪ ঘণ্টার মধ্যে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।'
পুলিশ জানিয়েছে, রিমান্ডে থাকা শহিদুল ইসলাম মুহিতের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি ও ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় একটিসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে।
গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস-এর আমরি ট্রাভেলস-এর একটি বাসে এ ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।
যাত্রীদের ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে ডাকাতি শুরু হয়, যা তিন ঘণ্টা ধরে চলে। পরে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে বাস ঘুরিয়ে একই স্থানে ডাকাতেরা নেমে যায়। এরপর বাসের চালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার নানা তালবাহানা করেন এবং বাসে তেলের অভাবের কথা বলেন।
শেষে যাত্রীদের চাপে তারা রাজশাহীর উদ্দেশে বাস ছাড়েন। যাত্রীরা প্রথমে বাসটি মামলা করার জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় নেন। তবে সেখানে 'ওসি না থাকায়' তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় বাসটি বড়াইগ্রাম থানায় নেওয়া হয়।
এদিকে, বাসের সুপারভাইজার, চালক ও সহকারীকে আটক করা হলেও নির্দিষ্ট অভিযোগের অভাবে তারা জামিনে মুক্তি পান।