যে কারণে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনার জন্য সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন

ইউক্রেন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার স্থান হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটি ইঙ্গিত দেয়, ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার পর প্রায় একঘরে হয়ে পড়া দেশটি কূটনৈতিকভাবে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।
সে সময় যে অন্ধকার ছায়া দেশটির ওপর, বিশেষ করে 'ডি ফ্যাক্টো' শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ওপর পড়েছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এখনও আন্তর্জাতিক ফোরামে সৌদি আরবের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে মাঝে মাঝে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিনোদন ও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌদি আরব বিশ্ব মঞ্চে একটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে।
কূটনৈতিকভাবে সৌদি নেতৃত্ব তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে। বাইডেন প্রশাসনের সময় সৌদি আরব তার প্রধান আন্তর্জাতিক মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অন্য দিকে ঝুঁকেছে।
সৌদি আরব স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা প্রথমত নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে। এবং এ কারণে রাশিয়া ও চীনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফেরত আসাকেও তারা স্বাগত জানিয়েছে।
প্রথম মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফর ছিল সৌদি আরবে। আর তার লেনদেননির্ভর পররাষ্ট্রনীতি সৌদি নেতৃত্বের জন্য আরও সুবিধাজনক।
ট্রাম্পের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত কূটনৈতিক অর্জন হতে পারে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি, যা তার প্রথম মেয়াদের আব্রাহাম চুক্তির চূড়ান্ত রূপ হিসেবে দেখা হবে।
তবে গাজার যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি এই শান্তিচুক্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এতে সৌদি আরব যে শর্ত দেবে, তার মূল্য আরও বাড়তে পারে। ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সেখানে একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে সৌদি আরব তা দ্রুত ও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ কারণে সৌদি আরব অন্যান্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে একটি কার্যকরী বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেখানে গাজার বাসিন্দারা তাদের স্থানেই থাকবে এবং এলাকা পুনর্নির্মাণের পর দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সম্ভব হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান মনোভাব সম্ভবত এর সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। বিশেষ করে গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীর বিষয়ে তাদের নীতির দিক থেকে। এটি কীভাবে সমাধান হবে, তা সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তনশীল সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে এটি স্পষ্ট, হলো সৌদি আরব বৈশ্বিক কূটনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না।