যেভাবে আবারও প্রবল দাপটে ফিরল হুয়াওয়ে

প্রযুক্তি শিল্পে এক অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে হুয়াওয়ে। চীনা বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বর্তমানে ৯০০ মিলিয়নেরও বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হুয়াওয়ের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম হারমনি ওএস ব্যবহার করছে।
শুক্রবার (২১ জুন) একটি ডেভেলপার ফোরামে হুয়াওয়ের কনজিউমার বিজনেস গ্রুপের চেয়ারম্যান রিচার্ড ইউ বলেন, 'আমাদের ইউরোপীয় এবং আমেরিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিজেদের অপারেটিং সিস্টেমের স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে যেখানে ৩০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে, আমরা তা ১০ বছরে অর্জন করেছি।'
হারমনি ওএস অপারেটিং সিস্টেমটি চীনা ভাষায় 'হংমেং' নামে পরিচিত। ২০১৯ সালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অপারেটিং সিস্টেমটি চালু করেছিল হুয়াওয়ে।
মার্কিন নীতিনির্ধারকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে এসেছেন, হুয়াওয়ে দেশটিতে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা অভিযোগ করেন, চীন সরকার প্রতিষ্ঠানটির সরঞ্জাম গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে।
হুয়াওয়ে বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করা সত্ত্বেও কিছু মার্কিন মিত্র দেশ, যেমন যুক্তরাজ্য ফাইভজি (৫জি) নেটওয়ার্ক তৈরিতে হুয়াওয়ের ভূমিকা সীমিত করেছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা গুগলের মতো কোম্পানিকে হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড ওএস সংস্করণের স্মার্টফোন সরবরাহ করতে বাধা দিয়েছে। এটি হুয়াওয়ের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। কিছু বিশ্লেষক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি হয়ত এখানেই মুখ থুবড়ে পড়বে।
হুয়াওয়ে একটি শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন করছে এবং নতুন বিভিন্ন ব্যবসায় পা দিচ্ছে। গত বছর এটি টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ির মডেল এস-এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একটি বৈদ্যুতিক সেডান বাজারে এনেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে কাজ করার বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির৷
এই বছরের শুরুর দিকে, এনভিডিয়া এআই সিস্টেমের জন্য প্রসেসর তৈরিতে হুয়াওয়েকে শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
রিচার্ড ইউ বলেন, অ্যাসেন্ড প্রসেসর ব্যবহার করে তৈরি করা হুয়াওয়ের নিজস্ব এআই কাঠামো মূলধারার আন্তর্জাতিক এআই কাঠামোগুলোর তুলনায় লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেল (বৃহৎ ভাষার মডেল) প্রশিক্ষণে ১.১ গুণ বেশি কার্যকর, যদিও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের নাম নেননি।
হুয়াওয়ের প্রত্যাবর্তন প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন বিক্রি থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়। মার্কিন বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথম পাঁচ মাসে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি ৭২ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির উন্নত প্রযুক্তির মেট ৬০ প্রো স্মার্টফোন অত্যাধুনিক প্রসেসরের জন্য গত বছর খবরের শিরোনাম হয়েছিল। বিদেশি চিপ প্রযুক্তিতে চীনের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার মার্কিন প্রচেষ্টার মধ্যেও হুয়াওয়ে কীভাবে এই ধরনের চিপগুলো ব্যবহার করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল মার্কিন প্রশাসন।
চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে হুয়াওয়ের গড় মুনাফা ৫৬৪ শতাংশ বেড়ে ২.৭১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। স্মার্টফোন মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য সরাসরি মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল-এর আধিপত্যকে প্রভাবিত করেছে।
কাউন্টারপয়েন্ট-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে প্রায় ২০ শতাংশ শেয়ার দখল করে চীনের স্মার্টফোন মার্কেটে প্রথম স্থানে থাকা অ্যাপল হুয়াওয়ের আধিপত্যে তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে।
অ্যাপলের মার্কেট শেয়ার ২০২৪ সালের শুরুতে ১৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে হুয়াওয়ের শেয়ার ২০২৩ সালে ৯.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়