লুনা-২৫ চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণ খুঁজে বের করল রাশিয়া!

গত আগস্ট মাসে দীর্ঘ ৪৭ বছর পর রাশিয়া লুনা-২৫ নামের একটি মহাকাশযান চাঁদে পাঠিয়েছিল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রথম মহাকাশযান হিসেবে এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণের পূর্বেই এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনার পরপরই চন্দ্রযানটি বিধ্বস্তের আরও বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করতে একটি বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়। এবার সেই কমিটির তদন্তে সম্ভাব্য মূল সমস্যাটি খুঁজে বের করেছে রাশিয়া।
দেশটির মহাকাশ সংস্থা রসকসমস এর পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়, লুনা-২৫ মহাকাশযানের ইঞ্জিনগুলি নির্দিষ্ট একটি সময়ে নির্ধারিত ৮৪ সেকেন্ড ধরে জ্বলার কথা ছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সঠিক নির্দেশনার অভাবে নির্ধারিত সময়ের পরিবর্তে ইঞ্জিনগুলি ১২৭ সেকেন্ড ধরে জ্বলে। আর এতেই ঘটে বিপত্তি।
এরপর গত ৩ অক্টোবর রসকসমসের টেলিগ্রাম পোস্টে জানানো হয়, একটি অনবোর্ড কন্ট্রোল ইউনিট মহাকাশযানটির ইঞ্জিনগুলিকে সঠিক সময়ে বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। কেননা অ্যাক্সিলোমিটারগুলির একটি থেকে প্রয়োজনীয় ডেটা পাওয়া যাচ্ছিল না, যা গতি সনাক্ত ও পরিমাপে ব্যবহৃত হয়।
পোস্টে বলা হয়, "গোলযোগের কারণে অ্যাক্সিলোমিটার ইউনিট ঠিকঠাক কাজ করেনি। তাই কার্যকরভাবে গতি মাপা ও সঠিক সময়ে মহাকাশযানের প্রপালশন সিস্টেম বন্ধ করাও সম্ভব হয়নি। যার ফলে একটি অস্থায়ী সেটিং অনুসারে মহাকাশযানের ইঞ্জিনটি শাটডাউন হয়েছে।"
লুনা-২৫ ছিল রাশিয়ার ফের চন্দ্রাভিযান শুরুর এক উচ্চাভিলাষী মিশন। তবে এতে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়ছে না রাশিয়া। রসকসমস ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকে মিশনটি বাস্তবায়নে ফের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে অবশ্য আগে জানানো হয়েছিল, আগামী ২০২৭, ২০২৮ ও ২০৩০ সালে যথাক্রমে লুনা-২৬, লুনা-২৭ ও লুনা-২৮ মিশন পরিচালনা করা হবে। তবে লুনা-২৫ এর ব্যর্থতার ফলে এই মিশনগুলো আরও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে দেশটি।
গত সপ্তাহে রসকসমস প্রধান ইউরি বোরিসভ আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনটিক্যাল কংগ্রেস ২০২৩ এ অনেকটা এমনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। কনফারেন্সে ইউরি বোরিসভ বলেন, "আমরা কেউ হাত গুটিয়ে বসে থাকবো না। আমরা লুনার প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একইসাথে আমরা লুনা-২৬ ও লুনা-২৭ মিশনগুলো বাস্তবায়নের সময়সীমা আরও এগিয়ে আনার চেষ্টা করছি। যাতে করে আমরা দ্রুত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারি।"
লুনা-২৫ চন্দ্রযান বিধ্বস্ত হবার ঘটনা অবশ্য রসকসমস-এর জন্য বড়সড় এক ধাক্কা। এমনিতেই গত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বেশ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে। কেননা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বাজেটের একটি বড় অংশ সামরিক খাতে ব্যয় করছে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের জন্য রাশিয়ার লুনা-২৫ মূলত প্রতিযোগিতা করছিল ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর সাথে। লুনা-২৫ বিধ্বস্তের মাত্র ৪ দিন পর গত ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে চন্দ্রযান-৩।
যার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চন্দ্র জয়ের এলিট ক্লাবে জায়গা করে নেয় ভারত। একইসাথে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা প্রথম দেশ হিসেবে অনন্য গৌরব অর্জন করে দেশটি।
মহাকাশ অভিযানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন অবশ্য চমক দেখিয়েছিল। সোভিয়েত যুগ অবসানের পর রাশিয়া চাঁদে কয়েক যুগ অভিযান চালায়নি। সবশেষ ১৯৭৬ সালে চাঁদে অভিযান চালায় রাশিয়া। এসময় তাদের লুনা-২৪ চন্দ্রযান সফলভাবে চাঁদের পৃষ্ঠে নেমে সেখানকার মাটির নমুনা সংগ্রহ করে। সেসময় ক্রেমলিনের শাসক ছিলেন লিওনিদ ব্রেঝনেভ।