যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদিকে নিয়ে বিবিসির ডকুমেন্টারি বাধা ছাড়া প্রদর্শিত হলো

বিবিসির তৈরিকৃত 'ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চন' ডকুমেন্টারি নিয়ে উত্তপ্ত ভারতের রাজনীতি। ডকুমেন্টারিকে 'প্রোপাগান্ডা' হিসেবে উল্লেখ করে ইতিমধ্যেই এ সম্পর্কিত লিঙ্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গতকাল (বৃহস্পতিবার) সরস্বতী পূজা এবং প্রজাতন্ত্র দিবসে ডকুমেন্টারিটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রদর্শিত হয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
যাদবপুরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ এ ডকুমেন্টারিটি দেখানোর সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের সামনে শিক্ষার্থীদের ভিড় জমতে শুরু করে। নির্ধারিত সময়ে ডকুমেন্টারিটি বড় প্রজেক্টরে দেখানো শুরু হয়। তবে বেশ কিছুক্ষণ প্রদর্শনের পর প্রজেক্টরে সমস্যা হওয়ায় ল্যাপটপ উঁচু করে ডকুমেন্টারিটির সম্প্রচার শেষ করা হয়।
গতকালের এ প্রদর্শনে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এই 'বিতর্কিত' ডকুমেন্টারি দেখেছেন। তবে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রদর্শনী নিয়ে কোনও ঝামেলা বা বিরোধিতা হয়নি। এমনটাই জানিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার (এসএফআই) আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক শুভঙ্কর মজুদার।
মোদিকে নিয়ে বিবিসির এই ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া সংগঠন এসএফআই জানিয়েছে, যাদবপুরের মতো আজ (শুক্রবার) প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও ডকুমেন্টারিটি দেখানো হবে। বিকেল ৪টার সময় ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। একইসাথে প্রদর্শনের ভ্যানু নির্ধারণের জন্য বাম ছাত্র নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাডমিন্টন কোর্ট প্রাঙ্গণ বুক করতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ইমেল পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শন নিয়ে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক গোলযোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গত মঙ্গলবার কেরালার রাজধানী তিরুঅনন্তপুরমেও ডকুমেন্টারিটি দেখানো নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সেখানে বাম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং কংগ্রেসের ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শনের পৃথক উদ্যোগের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করে এবিভিপি এবং বিজেপি। এই ঘটনায় বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পিনারাই বিজয়নের পুলিশ।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এই ডকুমেন্টারি খতিয়ে দেখেছে। তাদের দাবি, এই ডকুমেন্টারি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আর তাই ২০২১ তথ্যপ্রযুক্তি আইনে বিশেষ ক্ষমতাবলে কেন্দ্রের তরফে এই ডকুমেন্টারি সম্পর্কিত ভিডিও ও টুইটকে ব্লক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০০২ সালে যখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়, তখন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ভয়াবহ সেই দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান। মূলত হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে আগুন লেগে ৫৯ জন নিহত হওয়ার পর এই সহিংসতা শুরু হয়েছিল।
বিবিসির ডকুমেন্টারিতে দেখানো যুক্তরাজ্যের তদন্তের প্রতিবেদনটিতে দাঙ্গার ঘটনাকে 'পদ্ধতিগত সহিংসতা' হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ডকুমেন্টারিতে দাবি করা হয়েছে, এই সহিংসতায় 'জাতিগত নির্মূলের সকল বৈশিষ্ট্য' রয়েছে এবং নরেন্দ্র মোদির ওপর সরাসরি দায় চাপানো হয়েছে। যদিও দেশটির সুপ্রিম কোর্ট মোদিকে গুজরাট দাঙ্গার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা