Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

প্যাডেল রিকশার জাদুঘরে যাওয়া কি ঠেকানো সম্ভব?

মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের কাছে রিকশা থামিয়ে চা খাচ্ছিলেন নাসির আলী। ইঞ্জিন রিকশা চালান তিনি। তার মতেও এই রিকশা রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেওয়া উচিত। বললেন, "ঝুঁকি আছে। কিন্তু যাত্রীরা এটা পছন্দ করে। মানুষ এখন খুব ব্যস্ত। সময় মেলাতে গিয়ে জীবনের দিকে খেয়াল রাখে না। রাস্তায় নামলে আমার নিজেরও হুঁশ থাকে না। সবার আগে যেতে চাই, এমনকি সিএনজির আগেও।”
প্যাডেল রিকশার জাদুঘরে যাওয়া কি ঠেকানো সম্ভব?

ফিচার

সালেহ শফিক
18 August, 2025, 02:10 pm
Last modified: 18 August, 2025, 02:07 pm

Related News

  • মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে রিকশা-প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে আহত ২
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলছে অটোরিকশা চালকদের ধর্মঘট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
  • ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: মাস্কের টেসলা যখন কঠিন সময়ে, ৪০ লাখ 'বাংলা টেসলা' তখন শহর ছাড়িয়ে গ্রামেগঞ্জে
  • আগস্টে ঢাকার ৩ এলাকায় নামছে ই-রিকশা
  • ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান

প্যাডেল রিকশার জাদুঘরে যাওয়া কি ঠেকানো সম্ভব?

মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের কাছে রিকশা থামিয়ে চা খাচ্ছিলেন নাসির আলী। ইঞ্জিন রিকশা চালান তিনি। তার মতেও এই রিকশা রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেওয়া উচিত। বললেন, "ঝুঁকি আছে। কিন্তু যাত্রীরা এটা পছন্দ করে। মানুষ এখন খুব ব্যস্ত। সময় মেলাতে গিয়ে জীবনের দিকে খেয়াল রাখে না। রাস্তায় নামলে আমার নিজেরও হুঁশ থাকে না। সবার আগে যেতে চাই, এমনকি সিএনজির আগেও।”
সালেহ শফিক
18 August, 2025, 02:10 pm
Last modified: 18 August, 2025, 02:07 pm
সুদিনে একটি সুন্দর প্যাডেল রিকশা। ছবি: কাঠমান্ডুঅ্যান্ডবিয়ন্ড ডট কম।

প্যাডেল বা পায়ে-চালিত রিকশার বড় দুঃসময় চলছে। মাইনু মহাজন চুপচাপ বসেছিলেন গ্যারেজের মুখের চায়ের দোকানে। ত্রিশ বছর ধরে গ্যারেজ চালালেও এত বিপদে আর কখনও পড়েননি। কে ভেবেছিল এমন দিন আসবে, যখন লিখে রাখতে হবে—'পায়ের রিকশা কিস্তিতে বিক্রি হয়'?

তার গ্যারেজে কয়েক ডজন পায়ের রিকশা গ্রীষ্মের দুপুরের মতো ঝিম মেরে বসে আছে। ভাঙারি হিসেবে বিক্রি হয়ে যাওয়ার আগে যদি কিস্তিতেও কিছু বিক্রি করা যায়, তবে কষ্ট কিছুটা কমবে।

কোনো কোনো রিকশার বয়স ১০ বছর, এমনকি ১৫ বছরও। সকালের নাশতাও বাদ গেছে, দুপুরে শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে রিকশা কিনেছিলেন মাইনু। সেই কষ্টের ধন ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করতে গেলে তার প্রাণ পুড়ে যায়। এরমধ্যে কয়েকটি রিকশা জায়গা নষ্ট করছিল, সেগুলোকে আর বাঁচানো যায়নি। সব রিকশা অবশ্য তার নিজের নয়, কিছু আছে চালকদেরও। সেগুলো থেকে মাইনু গ্যারেজ ভাড়া পান।

গ্যারেজ ভাড়াই ভরসা

পায়ের রিকশা চালান ইমদাদ ও সুরুজ। মামাত-ফুপাত দুই ভাই তারা। পনেরো বছর আগে ঢাকায় এসেছিলেন। দেশের বাড়িতে চাষবাস করতেন, কিন্তু চাষে টাকা মিলত না—অনেক সময় মাঠের ফসল মাঠেই পচে সার হয়ে যেত। তাই ঢাকায় এসে রিকশা কিনে বস্তিতে ঘর ভাড়া নেন।

একজনের আয়ে সংসার চালানো কঠিন হওয়ায় স্ত্রী গার্মেন্টে কাজ নেন। জানেন ঠিক হচ্ছে না, তবু সংসারের ভার লাঘবে মেয়েকে বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে পড়াচ্ছেন মাদ্রাসায়, কারণ সেখানে খরচ কম।

রিকশাওয়ালাদের জীবনের কাহিনী প্রায় একই। আলোচনায় যোগ দেন আমিনুল। তিনি জানালেন, "তবুও সংসার চলছিল টেনেটুনে। কিন্তু গত এক বছর ধরে এমন বিপদ, কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না।"

দিনের পর দিন প্যাডেল রিকশাগুলো বসে থাকে গ্যারেজে।

গ্যারেজটি মিরপুর-৭ নম্বরের শেষ দিকে। এখন সেখানে ৫টি অটো বা ইঞ্জিনচালিত রিকশাও আছে। প্রতিটি থেকে মাসে ৩,০০০ টাকা গ্যারেজ ভাড়া পান মাইনু। বিদ্যুৎ খরচ বাদ দিয়ে তার হাতে থাকে ১২,৫০০ টাকা। এটিই এখন তার প্রধান আয়।

এই গ্যারেজেই অটো রাখেন রাইসুল ইসলাম। আগে মাইক্রোবাস চালাতেন। কিন্তু অন্যের অধীনে থাকতে ভালো লাগছিল না। শেষমেশ নিজে দুটি অটো রিকশা কিনলেন। একটি নিজে চালান, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন। 

মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে 

ইঞ্জিন রিকশা আসার পর থেকে প্যাডেল রিকশার যাত্রী পাওয়া যায় না। দিনে ৮–১০ ঘণ্টা চালিয়েও আয় হয় ৪০০–৫০০ টাকা। কোনো কোনো দিন ২৫০ টাকার মধ্যেই শেষ। এরমধ্যে মহাজনকে দিতে হয় ৬০–৭০ টাকা। যাদের নিজেদের রিকশা, তাদের কেবল মাসে ৫০০ টাকা গ্যারেজ ভাড়া দিতে হয়।

রাস্তায় বের হলে প্রতিদিনই কিছু রোড খরচ থাকে—চা, পান বা বিস্কুট খাওয়ার মতো। এ খরচ ধরা যায় ৫০ টাকা। নতুন একটি প্যাডেল রিকশা তৈরিতে খরচ পড়ে প্রায় ২০,০০০ টাকা। তবে এখন আর নতুন প্যাডেল রিকশা কেউ বানায় না। বরং অনেকেই পুরোনো রিকশা অটোতে রূপান্তর করছেন। তাতেও খরচ কম নয়—প্রায় ৪০,০০০ টাকা। কারণ বারো ভোল্টের চারটি ভালো ব্যাটারির দামই প্রায় ৩০,০০০ টাকা। একটি নতুন অটো রিকশার দাম ৭০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে।

কেন যাত্রীরা প্যাডেল রিকশা পছন্দ করেন না? — এ প্রশ্নে আমিনুল বলেন, "মানুষের এখন অনেক তাড়াহুড়া। সবাই দ্রুত চলতে চায়। যে পথ প্যাডেল রিকশায় যেতে ২০ মিনিট লাগে, অটোতে লাগে ১০ মিনিট। তবে কেউ কেউ ভয়ে ইঞ্জিন রিকশায় ওঠেন না। এই রিকশা কন্ট্রোল করা কঠিন। আবার কিছু লোক মায়া করে প্যাডেল রিকশায় ওঠেন।"

অটো রিকশার দিন এখন।

মনার ভয় করে 

কিশোরগঞ্জের ইটনার মানুষ মনা চন্দ্র বর্মন। হাওরে ছয় মাস কোনো কাজ থাকে না। বৈশাখে ধান কাটার সময় দিনে মজুরি মেলে ৬০০ টাকা, কিন্তু তারপর বসে থাকতে হয়। তাই পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসেছেন তিনি। মিরপুরের কালাপানি এলাকায় ৪,০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন। মাসে খাওয়ার খরচ ৮,০০০ টাকা, গ্যারেজ ভাড়া ৫০০, ওষুধপত্রে যায় আরও ১,০০০ মতো।

মনা নিজস্ব প্যাডেল রিকশা চালান। আগের চেয়ে এখন দুই ঘণ্টা বেশি রাস্তায় নামতে হয়, নইলে ভাতের টাকাও ওঠে না। তার গাড়ির ছাউনি ছেঁড়া, সিটও ফাটা, কিন্তু টাকা না থাকায় ঠিক করাতে পারছেন না।

তিনি বলেন, "আঠারো লাখ ইঞ্জিন রিকশা চলে এখন ঢাকায়। যে যেভাবে পারছে নামাচ্ছে। এতে ইনকাম আছে। দিনে হাজার-বারোশ টাকা পাওয়া যায়। মহাজনের টাকা (প্রতিদিন সাড়ে চারশ) জমা দিয়েও পাঁচ-ছয়শ টাকা হাতে থাকে।"

তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কেন ইঞ্জিন রিকশা চালান না। মনা উত্তর দিলেন, "পারব না। ভয় করে। অভ্যাস নেই।"

এমদাদুল ও তার সঙ্গী কয়েকজন প্যাডেল রিকশাচালক।

মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের কাছে মনা চন্দ্রের পাশে গাড়ি থামিয়ে চা খাচ্ছিলেন নাসির আলী। তিনি নিজেও ইঞ্জিন রিকশা চালান। তবে তার মতে, "এই রিকশা রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেওয়া উচিত। ঝুঁকি আছে। কিন্তু যাত্রীরা এটা পছন্দ করে। মানুষ এখন খুব ব্যস্ত। সময় মেলাতে গিয়ে জীবনের দিকে খেয়াল রাখে না। রাস্তায় নামলে আমার নিজেরও হুঁশ থাকে না। সবার আগে যেতে চাই, এমনকি সিএনজির আগেও।"

কিছু দূরেই দেখা হলো সবুজ মিয়ার সঙ্গে। সেও ইঞ্জিন রিকশা চালান। তার রিকশাটি সেকেন্ড হ্যান্ড। বছর খানেক আগে কিনেছেন ৫০,০০০ টাকা দিয়ে। কেনার পর দুটি ব্যাটারি বদলেছেন, খরচ পড়েছে আরও ৬,০০০ টাকা।

তিনি জানালেন, ব্যাটারি ভালো থাকলে এক চার্জে সারাদিন চালানো যায়—পথের হিসাবে প্রায় ১২০ কিলোমিটার। মিরপুর থেকে লালবাগ বা বংশাল পর্যন্ত যাতায়াত করেন। ভাড়া নেন ২০০-২৫০ টাকা। এতে সিএনজিচালকদের রাগ হয়, কারণ তারা এই দূরত্ব ৪০০ টাকার কমে নেয় না। জমা বেশি পড়ায় সিএনজি ও ইঞ্জিন রিকশার মধ্যে প্রায়ই দ্বন্দ্ব হয়। এরসঙ্গে যুক্ত হয় প্যাডেল রিকশাওয়ালাদের ক্ষোভ।

ইঞ্জিনে শরীর নষ্ট

ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবের সামনে দেখা হলো ইঞ্জিন রিকশা চালক আমিনউদ্দীনের সঙ্গে। প্রায় বিশ বছর তিনি প্যাডেল রিকশা চালিয়েছেন। তিন মাস হলো ইঞ্জিন রিকশা চালাচ্ছেন। তবে আবার প্যাডেল রিকশায় ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

কারণ, ইঞ্জিন রিকশা পুলিশ ধরে—যেহেতু বৈধ নয়। চুরি হওয়ার ভয়ও আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, শরীর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভুড়ি বেড়ে যাচ্ছে, শরীর আগের মতো টানটান নেই।

পঞ্চাশ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন রুবেল মিয়া, একবারও দুর্ঘটনা ঘটাননি।

তার রিকশার মালিক একটি ওষুধ কোম্পানির ডিলার। স্ট্যাম্পে সই দিয়ে রিকশা নিতে হয়েছে। সেখানে লেখা, রিকশার যেকোনো ক্ষয়ক্ষতির দায় আমিনউদ্দীনের। এত ঝক্কিঝামেলার মধ্যে আর থাকতে চান না তিনি। তাই আবার প্যাডেল রিকশায় ফিরতে চান।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে গল্প করছিলেন মহসিন ও সুজাউদ্দিন। দুজনেই ইঞ্জিন রিকশা চালক। তারা বললেন, "ইঞ্জিন রিকশা ধরার পর থেকেই মুখের রুচি কমে গেছে। সকালে রুটি খেয়ে বের হলে সারাদিনে আর ভাতের ক্ষুধা লাগে না। অথচ আগে দুপুরে দুই-আড়াই প্লেট ভাত খেয়ে ফেলতাম। মুশকিল হলো যাত্রীদের নব্বই ভাগই ইঞ্জিন রিকশার পক্ষে। শুধু কিছু বয়স্ক মানুষ প্যাডেল রিকশার অপেক্ষায় থাকেন, কারণ তাদের তাড়া কম।"

৬৪ বছর বয়সী কিতাব আলী ইঞ্জিন রিকশা নিয়েছেন মাত্র ১৮ দিন হলো। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি রিকশা চালাচ্ছেন। ইঞ্জিন রিকশা আসার পর থেকে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সাদা দাড়ি দেখেও অনেকে উঠতে চাইত না। বলত, "চাচা, আপনার কষ্ট হবে।" কিন্তু পেটে ভাত না থাকার কষ্ট যে অনেক বেশি, তা খেয়াল করত না কেউ। শেষমেশ দাড়ি ঢাকতে সার্জিক্যাল মাস্ক পরে রাস্তায় নামতেন, যেন কমবয়সী দেখায়। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।

মাথায় টোপর আছে বলে আদর করে এগুলোকে বউ রিকশা ডাকা হয়।

ইস্কাটনের হায়দার আলীর গ্যারেজে দেখা গেল মো. রুবেল মিয়াকে। ৭০ বছর বয়সী এই মানুষটি ৫০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন। বাম হাত অকেজো হওয়া সত্ত্বেও এক হাতেই রিকশা চালান, কোনোদিন দুর্ঘটনা ঘটেনি। তিনজনের সংসার তার। কোনো সঞ্চয় নেই, জায়গা-জমি নেই। ভেবেছিলেন কোনোভাবে চলে যাবে, কিন্তু অটো আসার পর দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন।

রিকশার প্রকারভেদ

'রিকশা কত প্রকার?'—চার-পাঁচ বছর আগেও প্রশ্নটি ছিল হাস্যকর। তখনো ঢাকার রাস্তায় টুং টাং শব্দ তুলে ছন্দ তুলত পায়ের রিকশা। বাতাস খেতে খেতে প্রেমিক-প্রেমিকারা ঘুরে বেড়াত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। ঘণ্টা চুক্তিতে রিকশা ভাড়া নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করত অনেকে।

রিকশার গায়ে নায়ক-নায়িকাদের মুখ আঁকা থাকত, ছাউনিতে থাকত ঝিকমিকে জরি। দুর্ঘটনার ভয় ছিল না। আজ সেসব স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে একসময় হয়তো প্যাডেল রিকশা শুধু জাদুঘরেই থাকবে। মানুষ টিকিট কেটে দেখতে যাবে।

এটা কি ঠেকানো সম্ভব? জানতে চাইলে সিএনজি চালক শাহিন মোল্লা প্রস্তাব দিলেন—

  • অটো রিকশাকে সরকারি নীতিমালার আওতায় আনতে হবে।
  • এলাকাভেদে চলাচল নির্দিষ্ট করতে হবে।
  • প্রতিটি এলাকার জন্য আলাদা রঙের পোশাক চালু করা যেতে পারে, যাতে সীমানা অতিক্রম করলেই সহজে চেনা যায়।
  • উপযুক্ত ট্যাক্স বসাতে হবে এবং চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
  • মেইন রোডে অটো চলতে পারবে না, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে না।
প্যাডেল রিকশার যাত্রী পাওয়া যায় না।

শাহিন মোল্লা বললেন, "এগুলো বাস্তবায়িত হলে আমরাও বাঁচব, প্যাডেল রিকশাও বাঁচবে। প্রতিদিনের জমা ১২০০ টাকা, গ্যাস খরচ ৫০০ টাকা, খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য খরচ ৪০০ টাকা। এরপর যা বাঁচে তা নিয়ে ঘরে যাই। সপ্তাহে একদিনও বিশ্রাম নিতে পারি না। সন্ধ্যার পর ইঞ্জিন রিকশার দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। সদরঘাট থেকে উত্তরা বা মিরপুর পর্যন্তও যাত্রী বহন করে। ফ্লাইওভারেও উঠে যায়। তখন আমাদের যাত্রী পাওয়ার সুযোগ একদমই থাকে না।"

ইঞ্জিন রিকশা পাঁচ সিট, তিন সিট ও দুই সিটের হয়। প্রকারভেদে জমার তারতম্য আছে। তিন সিটের রিকশার মাথায় টোপর থাকে বলে একে সবাই আদর করে 'বউ রিকশা' নামে ডাকে।

শাহিনের সঙ্গী সিএনজি চালক আলী মিয়া বললেন, "আমাদের এখন খেতে না পাওয়ার দশা। মহাজনের জমা শোধ করব, না সংসার চালাব? স্বল্প দূরত্ব—যেমন শাহবাগ থেকে ধানমন্ডি বা মতিঝিল থেকে বেইলি রোড—এসব রুটে এখন আর একদমই যাত্রী পাই না। দীর্ঘ পথেও অটোরা বাগড়া দেয়। আমাদেরও বাঁচতে হবে, কিন্তু করব কী?"

অটোয় কারা বিনিয়োগ করছেন

আগে রিকশায় বিনিয়োগ করতেন মিস্ত্রি ও মহাজনরা। এখন বাইরের পেশাজীবীরাও যুক্ত হচ্ছেন। পুলিশ, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, কন্ট্রাক্টর, চিকিৎসক, ওষুধ কোম্পানির ডিলার, বিদেশ ফেরত বেকার কিংবা ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী—অনেকেই বিনিয়োগ করছেন ইঞ্জিন রিকশায়।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে দেখা হওয়া মহসিনের রিকশাটির মালিক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তিনি ও তার ভাই মিলে ১২টি রিকশা তৈরি করিয়েছেন। মহসিনের পরিচিত আরেকজন, যিনি বারডেম হাসপাতালের ডাক্তার, ইতোমধ্যেই ১০টি রিকশা নামিয়েছেন। পরিকল্পনা আছে ১০০টি রিকশা নামানোর। এজন্য তিনি একটি গ্যারেজও ভাড়া নিয়েছেন। এতে স্পষ্ট, যাদের বাড়তি টাকা আছে তারা ইঞ্জিন রিকশায় বিনিয়োগে ঝুঁকছেন।

রিকশা পেইন্টিংয়ের হালচাল

বাংলাদেশের হাতে আঁকা রিকশা পেইন্টিংয়ের সুনাম দেশের বাইরেও রয়েছে। আগের যেসব বডি মেকার বা রিকশা পেইন্টার ছিলেন, তারা এখন ইঞ্জিন রিকশায় কাজ করছেন এবং আয়ও পাচ্ছেন আগের তুলনায় বেশি।

তবে পেইন্টিংয়ের বিষয়বস্তু বদলে গেছে। ইঞ্জিন রিকশায় এখন উন্নয়নচিত্র যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল আঁকা হচ্ছে। পাশাপাশি গ্রামীণ দৃশ্যও দেখা যায়। অনেক রিকশায় লাগানো হচ্ছে ডিজিটালি প্রিন্ট করা দৃশ্য।

রিকশা পেইন্টিংও মুছে যাচ্ছে। ছবি: কাঠমান্ডুঅ্যান্ডবিয়ন্ড ডট কম।

অথচ হাতে আঁকা রিকশা পেইন্টিং নিয়ে হেনরি গ্লাসি, জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিকের মতো বিশ্বখ্যাত গবেষকরা গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কিপার আসমা ফেরদৌসির গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, রিকশা পেইন্টিংয়ের তুঙ্গকাল ছিল আশির দশক।

বর্ষীয়ান চিত্রকর হানিফ পাপ্পু পেইন্ট শুরু করেন ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'নিশান' চলচ্চিত্র দিয়ে। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত নায়িকা রোজিনার 'সুলতানা ডাকু' ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। রিকশাচিত্রে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল 'বারুদ', 'রংবাজ', 'নসিব', 'দুশমন', 'আলিফ লায়লা', 'ছুটির ঘণ্টা' ইত্যাদি ছবির দৃশ্য।

১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা রিকশাচিত্রের বিষয় হয়েছিল। ব্রিটিশ মিউজিয়াম তখন তাদের সংগ্রহে থাকা একটি রিকশা প্রদর্শন করে বন্যার্তদের সহায়তার আবেদন জানিয়েছিল। করোনাকালেও রিকশা পেইন্টাররা এঁকেছেন সচেতনতামূলক বাণী—'স্টে ইন হোম'।

কিন্তু এখন ঢাকাসহ সারাদেশেই রিকশা চিত্রশিল্পীর সংখ্যা কমে গেছে। ভালো রিকশাচিত্রের মূল্য বেশি হওয়ায় ক্রেতারা ডিজিটাল বোর্ডের দিকেই ঝুঁকছেন।

প্রযুক্তির অগ্রগতি ঠেকিয়ে রাখা যায় না। বরং গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে একইসঙ্গে ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্বও নিতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।


বিশেষ দ্রষ্টব্য: ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে কয়েকজন তথ্যদাতার আসল নাম প্রকাশ করা হলো না।

ছবি: সালেহ শফিক/দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড   
 

Related Topics

টপ নিউজ

পায়ে-চালিত রিকশা / পায়ের রিকশা / ইঞ্জিন রিকশা / অটোরিকশা / অটো / রিকশা / রিকশা আর্ট

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আল-আরাফাহ ব্যাংকের ৫৪৭ কর্মকর্তা পুনর্বহালে বাংলাদেশ ব্যাংককে দ্রুত সিদ্ধান্তের নির্দেশ
  • সীমানা নির্ধারণী শুনানিতে সিইসির সামনেই দুই পক্ষের হট্টগোল-মারামারি
  • রাজশাহীতে আত্মগোপনে থাকা সাবেক এসআই ‘ডিবি হাসান’কে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
  • একাত্তর ইস্যু অমীমাংসিত নয়, দু’বার সমাধান হয়েছে, দাবি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর
  • বিতর্কিত মন্তব্য করায় বিএনপির ফজলুর রহমানকে শোকজ
  • বিএনপির অন্যতম আওয়ামী বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা: হাসনাত

Related News

  • মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে রিকশা-প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে আহত ২
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলছে অটোরিকশা চালকদের ধর্মঘট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
  • ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: মাস্কের টেসলা যখন কঠিন সময়ে, ৪০ লাখ 'বাংলা টেসলা' তখন শহর ছাড়িয়ে গ্রামেগঞ্জে
  • আগস্টে ঢাকার ৩ এলাকায় নামছে ই-রিকশা
  • ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান

Most Read

1
বাংলাদেশ

আল-আরাফাহ ব্যাংকের ৫৪৭ কর্মকর্তা পুনর্বহালে বাংলাদেশ ব্যাংককে দ্রুত সিদ্ধান্তের নির্দেশ

2
বাংলাদেশ

সীমানা নির্ধারণী শুনানিতে সিইসির সামনেই দুই পক্ষের হট্টগোল-মারামারি

3
বাংলাদেশ

রাজশাহীতে আত্মগোপনে থাকা সাবেক এসআই ‘ডিবি হাসান’কে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

4
বাংলাদেশ

একাত্তর ইস্যু অমীমাংসিত নয়, দু’বার সমাধান হয়েছে, দাবি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর

5
বাংলাদেশ

বিতর্কিত মন্তব্য করায় বিএনপির ফজলুর রহমানকে শোকজ

6
বাংলাদেশ

বিএনপির অন্যতম আওয়ামী বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা: হাসনাত

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab