Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

সাগরের মাছ নিয়ে কাটছে দিন, জাহাজে বসবাসও রোমাঞ্চকর!

ভয়েজ শুরু হওয়ার পর জাহাজ এক মুহূর্তের জন্যও থামে না, টানা ২৪ ঘণ্টা চলে। মাছ ধরা চলে দিনরাত। একবার জাল ফেলা ও তোলার মধ্যবর্তী সময় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। এই ফাঁকে জেলেরা ঘুমায় বা অবসর সময় কাটায়।
সাগরের মাছ নিয়ে কাটছে দিন, জাহাজে বসবাসও রোমাঞ্চকর!

ফিচার

সালেহ শফিক
28 May, 2025, 08:00 am
Last modified: 28 May, 2025, 08:13 am

Related News

  • ২৩-২৮ মে'র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড় 'শক্তি'
  • বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপে দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা
  • সাগর থেকে ২২ জেলেসহ চার ট্রলার ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
  • বরগুনায় ৩০ কেজির ভোল মাছ সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি
  • দীর্ঘ ৮ বছর পর ৫ শর্তে নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি পেলেন জেলেরা

সাগরের মাছ নিয়ে কাটছে দিন, জাহাজে বসবাসও রোমাঞ্চকর!

ভয়েজ শুরু হওয়ার পর জাহাজ এক মুহূর্তের জন্যও থামে না, টানা ২৪ ঘণ্টা চলে। মাছ ধরা চলে দিনরাত। একবার জাল ফেলা ও তোলার মধ্যবর্তী সময় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। এই ফাঁকে জেলেরা ঘুমায় বা অবসর সময় কাটায়।
সালেহ শফিক
28 May, 2025, 08:00 am
Last modified: 28 May, 2025, 08:13 am

আমাদের সমুদ্রসীমায় চার শতাধিক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এর মধ্যে চাঁদা, পোয়া, বড় মোচ কাটা, রেড স্ন্যাপার, বাইম, আইলা, চাপিলা, ফাইসা, কোরাল, ছুরি, লইট্যা, টুনা, স্যামন—এসব মাছের নাম অনেকেরই জানা। কালো পোপাও বেশ পরিচিত একটি নাম। এর কারণও আছে—এই মাছের বায়ু থলি দিয়ে তৈরি হয় সার্জিক্যাল সুতা, আর চামড়া থেকে তৈরি জেলাটিন ব্যবহার হয় কসমেটিক ও ওষুধ শিল্পে।

বড় আকৃতির এই শাকাহারী মাছ সাধারণত শীতকালে বেশি ধরা পড়ে। স্বাদেও এটি অসাধারণ। এর বারবিকিউ, কালিয়া, কারি বা অনিয়ন চিলি রেসিপিগুলো বেশ জনপ্রিয়। কক্সবাজার, টেকনাফ, মহেশখালি ও সুন্দরবনের উপকূলে এটি বেশি পাওয়া যায়। সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি সমুদ্রেও অনেকবার ধরা পড়েছে এই মাছ। প্রতিবারই পত্রিকায় নাম তুলেছে। একটি মাছ লাখ-লাখ টাকায় বিক্রি হলে নিজের নাম পত্রিকায় ওঠানোর যোগ্যতা তৈরি হয় বৈকি! একে অনেকেই বলেন 'ব্ল্যাক গোল্ড'।

টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের পথে যে চ্যানেলটি রয়েছে, সেখানে লবণাক্ততা অনেক বেশি। আন্দামান বা মালদ্বীপ থেকে আসা মাছেরা এই পথ দিয়ে যাতায়াত করলেও সেখানে বসতি করে না। সেন্ট মার্টিনের জেলেরা সেখানে বটম ওয়াটার ফিশিং করেন, যদিও এই পদ্ধতি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অগভীর সমুদ্রের তলদেশে পাথরের ফাঁকে কালো পোপা লুকিয়ে থাকে। এসব মাছ সাধারণত বড় ফিশিং জাহাজে ধরা পড়ে না।

কুতুবদিয়া পার হওয়ার পর নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় জাহাজগুলো।

মাছের নাম হামুর

আমাদের সমুদ্রে আরেকটি বিশেষ মাছ পাওয়া যায়—এর নাম হামুর। আরব দেশগুলোতে এর আলাদা কদর। একে বলা হয় 'আরব দেশের রাজা'। আরববাসীরা এই মাছ খুব আহ্লাদ করে খায়, বিশেষ করে বিরিয়ানিতে।

সুরত ও চলন অনুযায়ী অনেক মাছের নাম স্থানীয়ভাবে ভিন্ন ভিন্ন—যেমন 'রিকশা মাছ', 'ঘণ্টা মাছ', বা 'পাখি মাছ' (ফ্লাইং ফিশ)। যারা সি-ট্রাকে করে সেন্ট মার্টিন গেছেন, তারা উড়ুক্কু মাছের অবাক স্মৃতি মনের মণিকোঠোয় বন্দি করে নিয়ে এসেছেন। সাধারণত ডলফিন, ম্যাকারেল বা অন্য শিকারি মাছের তাড়া খেয়ে মাছগুলো উড়ে গিয়ে দূরে পড়ে।

মোটাদাগে সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য দুই ধরনের জলযান ব্যবহৃত হয়—ফিশিং বোট ও ফিশিং জাহাজ। চল্লিশ মিটার বা একশ বিশ ফুট পর্যন্ত গভীর জলে বড় ফিশিং জাহাজ মাছ ধরতে পারে না, কারণ এই এলাকায় মা মাছগুলো ডিম পাড়ে। ফিশিং বোটে যারা মাছ ধরেন, তাদের বলা হয় জেলে। আর জাহাজে যারা কাজ করেন, তারা নাবিক নামে পরিচিত।

কালো পোপা।

ফিশিং জাহাজে থাকে ডেক, ফিশ হোল্ড, ব্রিজরুম, কেবিন রুম, কিচেন, ডাইনিং ইত্যাদি। প্রযুক্তির মধ্যে থাকে জিপিএস, ইকো সাউন্ডার ও সোনার। যেহেতু মাছ ধরা মুখ্য উদ্দেশ্য, তাই জাল তো থাকেই। এসব জাহাজের বেশিরভাগই তৈরি হয় থাইল্যান্ডে, কিছু আসে ভিয়েতনাম ও চীন থেকে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও কিছু ফিশিং জাহাজ তৈরি হচ্ছে।

ফিশিং জাহাজ দুটি ভাগে বিভক্ত—বাংলা জাহাজ ও চিংড়ি জাহাজ। গঠন একই হলেও মাছ ধরা, প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যবহৃত জাল—সবকিছুতেই পার্থক্য রয়েছে। চিংড়ি মাছ সাধারণত ধরা পড়ে সুন্দরবনের দক্ষিণে, সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের কাছাকাছি। বাংলা জাহাজ মূলত চিংড়ি ছাড়া অন্য মাছ ধরার জন্য তৈরি, যদিও মাঝে মাঝে চিংড়িও ধরা পড়ে।

মিড ওয়াটার ফিশিং জাহাজ

শহিদ সরদার কাজ করেন একটি বাংলা জাহাজে। এসব জাহাজের জাল হয় ১২০ থেকে ১৮০ মিটার লম্বা এবং ২০ থেকে ৩০ মিটার চওড়া। এক কেজি জালের দাম এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। একটি সম্পূর্ণ জালের দাম পড়ে যায় ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে। জাল ফেলার জন্য এসব জাহাজে আলাদা হাইড্রলিক ইঞ্জিন থাকে। এই জাহাজগুলো সাধারণত ৭০-৮০ মিটার গভীরতায় মাছ ধরে, যদিও ১০০ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে। এজন্য এগুলোকে বলা হয় মিড ওয়াটার ফিশিং জাহাজ।

কালো রূপচাঁদার বিশাল ঝাঁক ধরা পড়েছিল যেদিন।

'সি পাওয়ার ফিশিং লিমিটেড' কোম্পানির পাঁচটি জাহাজের একটি 'এফভি সি পাওয়ার টু'। এর চিফ কুক শহিদ সরদার, তবে নিজেকে 'জেলে' বলতেই বেশি পছন্দ করেন। তার বাড়ি ভোলার লালমোহনে। বয়স ছত্রিশ, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক সন্তানের জনক তিনি।

শহিদ অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। সেখানে পিজি হাসপাতালের (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) ডক্টরস ক্যান্টিনে সহকারী কুক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে একই হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির ক্যান্টিনে চাকরি পান। ২০১২ সালে স্ত্রীর বড় ভাইয়ের মাধ্যমে একটি ফিশিং জাহাজে কাজ নেন।

ঢাকার ধোঁয়া আর দূষণে অতিষ্ঠ শহিদ একসময় চট্টগ্রামে গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। এখন কর্নফুলী নদীর অপরপারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তবে মাসের ২৫-২৬ দিন কেটে যায় সাগরের গভীরে, জাহাজেই।

কুইন ফিশ হাতে দুই নাবিক।

বড় আকারের একটি জাহাজ এক দফায় সাগরে এক মাসের জন্য ফিশিং পারমিশন পায়। তখন জাহাজের নাবিকদের তালিকা সরকারের কাছে জমা দিতে হয়, যাকে বলা হয় 'সেইলিং পারমিশন'। ফিরে আসার পর ধরা পড়া মাছের তালিকাও জমা দিতে হয়।

চারটি প্রধান ফিশিং গ্রাউন্ড

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় চারটি প্রধান ফিশিং গ্রাউন্ড রয়েছে। এগুলোর নাম—মিডল গ্রাউন্ড, সাউথ প্যাচেস, সাউথ অব সাউথ প্যাচেস এবং সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। জেলেরা নিজেদের সুবিধার্থে এলিফ্যান্ট এবং কোহিনূর নামে আরও দুটি গ্রাউন্ডের নাম ব্যবহার করেন।

এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। এটি যেমন অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গাঠনিক দিক থেকেও ব্যতিক্রমী। এটি একটি সামুদ্রিক গিরিখাত—অতল তলের মহীসোপান নামেও পরিচিত। প্রস্থে ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার। মহীসোপানের কিনারায় খাদের গভীরতা প্রায় ১২০০ মিটার। এই অতল খাদে সূর্যালোক পৌঁছায় না বলেই এ অঞ্চলের জল গাঢ় রঙের দেখা যায়। এটি পৃথিবীর ১১তম গভীর সমুদ্রখাত। এখানে নানারকম সামুদ্রিক মাছ ছাড়াও বিরল প্রজাতির তিমি, ডলফিন, হাঙর, কচ্ছপসহ নানা জলজ প্রাণী দেখা যায়।

৪০ মিটার পর্যন্ত গভীর জলে মাছ ধরার অনুমতি নেই ফিশিং জাহাজগুলোর।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৮৬৩ সালে 'গ্যাডফ্লাই' নামের ২১২ টন ওজনের একটি গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে রওনা হয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে এবং এখানেই ডুবে যায়। এরপর 'গ্যাডফ্লাই'-এর সন্ধানে আরও কয়েকটি জাহাজ এসেছিল। কিন্তু খুঁজে না পাওয়ায় এই অঞ্চলটির নাম রাখা হয় 'সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড'—অর্থাৎ অতল জলরাশি। স্থানীয় জেলেরা একে বলেন 'নাই বাম'। তারা সমুদ্রের গভীরতা মাপেন 'বাম' দিয়ে—যেমন ১০ বাম, ২০ বাম। এই খাদ এতটাই গভীর যে এর গভীরতা মাপা যায় না—সেজন্যই এর নাম হয়েছে 'নাই বাম'। সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে এটি মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড

শহিদ সরদার বহুবার গেছেন সোয়াচে। একাধিকবার তিনি ডলফিনের ঝাঁক দেখেছেন, তিমিও দেখেছেন চার–পাঁচবার। তিনি বলছিলেন, 'সমুদ্র এমন এক জায়গা, যার কোনো স্থান আলাদা করে চেনা যায় না। সর্বত্র অসীম নীল জলরাশি—সবই দেখতে এক রকম। ঘটনাও ভিন্ন কিছু ঘটে না, প্রতিদিন একই রকম কাটে। কুতুবদিয়া পার হওয়ার পর আমরা পৃথিবী থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। ফোনে নেটওয়ার্ক থাকে না। ভয়েজ (Voyage) শুরুর আগে ছবি, নাটক, গান মেমোরি কার্ডে ভরে নিয়ে যাই—সেগুলোই বিনোদনের সঙ্গী। তবে কাজের চাপ এত বেশি থাকে যে অবসর খুব একটা মেলে না।'

তবে, বিএসএফ নামের হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ওয়াকিটকির মাধ্যমে প্রতিদিন ক্যাচ রিপোর্ট—মানে কত মাছ ধরা পড়েছে—তা চট্টগ্রাম অফিসে পাঠানো হয়। একই মাধ্যমে অফিস থেকে জাহাজে জরুরি আবহাওয়া বার্তা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও পাঠানো হয়।

জাহাজের ডেকে জাল থেকে মাছ বের হওয়ার মুহূর্ত।

শহিদদের জাহাজে মোট ৪৫ জন সেইলর বা নাবিক রয়েছেন। এদের মধ্যে ৮ জন কর্মকর্তা। বাকিরা সাধারণ নাবিক। কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন হলেন চিফ অফিসার, সঙ্গে থাকেন সেকেন্ড অফিসার, ডেক ক্যাডেট। ইঞ্জিন সেকশনে রয়েছেন চিফ, সেকেন্ড ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার এবং গ্রিজার। সাধারণ নাবিকদের মধ্যে বাবুর্চি ও ডুবুরিও থাকেন। জেলে যারা, তারা জাল ফেলা, টেনে তোলা, মাছ বাছাই, প্যাকিং ও ফ্রিজিংয়ের কাজ করেন। কর্মকর্তারা জাহাজ পরিচালনা, দিক নির্ধারণ, মাছের ঝাঁক খোঁজা, ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ এবং ফিশ হোল্ডের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন।

ফিশ হোল্ড হলো একটি কোল্ড স্টোরেজ, যার তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং ধারণক্ষমতা ৪০০ টন। এখানে ঢোকার আগে কর্মীরা মাংকিটুপি, জ্যাকেট, বিশেষ ধরণের গামবুট ও গ্লাভস পরিধান করেন।

ফুড বিল ১০০ টাকা

সাধারণ নাবিকরা প্রতিদিনের জন্য কোম্পানির কাছ থেকে ১০০ টাকা করে ফুড বিল পান। কর্মকর্তারা পান ২০০ টাকা। দুই শ্রেণির জন্য থাকে আলাদা মেস ও কিচেন। ভয়েজ শুরুর আগে শহিদরা ডাঙ্গা থেকেই গোশত, চাল, ডাল, তেল, প্যাকেট মসলা, সবজি ইত্যাদি কিনে নেন। প্রতি শুক্রবার মেসে ভালো খাওয়াদাওয়া হয়। মেন্যুতে থাকে পোলাও, রোস্ট, চাঁদা মাছের ফ্রাই ইত্যাদি।

জাল থেকে মাছ বের করার পর বাছাইয়ের কাজ চলে।

শহিদ বলছিলেন, 'ভালোমানের মাছ বেশি পরিমাণে ধরা পড়লে আমাদের মাছ খেতে কোনো বাধা থাকে না। তখন ইলিশ কিংবা টাইগার চিংড়িও খাওয়া যায়। সামুদ্রিক মাছ সাধারণত ভুনা খাওয়া ভালো। সবজির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার চল নেই—তবে মাঝেমধ্যে ভাজি বা ভর্তা হিসেবে খাই।'

ভয়েজ শুরু হওয়ার পর জাহাজ এক মুহূর্তের জন্যও থামে না, টানা ২৪ ঘণ্টা চলে। মাছ ধরা চলে দিনরাত। একবার জাল ফেলা ও তোলার মধ্যবর্তী সময় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। এই ফাঁকে জেলেরা ঘুমায় বা অবসর সময় কাটায়।

অনেক সময় মাছ বেশি ধরলে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়, তবুও কাজ থামে না। ভয়েজপ্রতি লিখিত কোনো টার্গেট কোম্পানি নির্ধারণ করে না, তবে অলিখিতভাবে দুই কোটি টাকার মাছ ধরার একটি লক্ষ্য অনুসরণ করা হয়।

জালের দাম হয়ে থাকে ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি টন মাছে একটি নির্দিষ্ট হারে অতিরিক্ত আর্থিক প্রণোদনা পান, যা সাধারণত ১০ থেকে ২০ টাকার মধ্যে থাকে। বর্তমানে কোম্পানিগুলো কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি ফিশের প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এতে তাদের একদিকে আর্থিক প্রণোদনা কম দিতে হয়, অন্যদিকে জেনারেটরের তেলের খরচও বাঁচে।

বর্ষাকালে মাছ বেশি

এখন সাগরে ৫৮ দিনব্যাপী মাছ ধরা বন্ধ। আগে এটি ছিল ৬৫ দিন, কিন্তু তাতে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যেত। এটি ঠেকাতে এখন ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময় ৫৮ দিন করা হয়েছে।

এবারের নিষেধাজ্ঞা ১১ জুন উঠে যাবে। এরপর জাহাজগুলো ১১-১২ দিনের শর্ট ভয়েজে যাবে, কারণ তখন সমুদ্র উত্তাল থাকে। তবে এই সময় যেসব মাছ ধরা পড়ে, তার পরিমাণ শীতকালের ২০ দিনের সমান হয়। বর্ষায় লইটা, পোয়া—এ ধরনের কোয়ালিটি মাছ পাওয়া যায় বেশি। কাকড়াও ধরা পড়ে প্রচুর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শহিদকে অনুসরণকারীরা কানুরামের চিকিৎসায় দেড় লাখ টাকা অর্থসাহায্য দিয়েছিলেন।

ধরা নিষিদ্ধ প্রাণীগুলো জালে আটকা পড়লে কী করা হয়? শহিদ বললেন, 'স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো ধরাই নিষিদ্ধ। এছাড়া কচ্ছপ, শাপলা পাতা [মাছ] ইত্যাদিও জালে উঠে আসে। যত দ্রুত সম্ভব, জীবিত থাকা অবস্থায়ই এগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।'

ভয়েজ শেষে জাহাজ যখন চট্টগ্রাম জেটিতে ফেরে, তখন প্রথমে অফিসে পাঠানো ক্যাচ রিপোর্টের সঙ্গে মাস্টার ব্রিজে থাকা খাতার হিসাব মিলিয়ে দেখা হয়। এর মধ্যেই লাইসেন্সধারী ক্রেতারা জাহাজের ফেরার খবর পেয়ে যান। তারা এসে অফিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে দাম নির্ধারণ করেন। এরপর উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে মাছ ওজন করা হয়।

সাধারণত ক্রেতারা অর্ধেক মূল্য অগ্রিম দিয়ে থাকেন, আর বাকি টাকা ফিশ হোল্ড থেকে মাছ খালাসের পর পরিশোধ করেন।

রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই চলে মাছ ধরার কাজ।

ছুটিতে কাচ্চি বিরিয়ানি

শহিদকে জিজ্ঞেস করলাম, বছরে ছুটি কেমন পান, তখন কী করেন?

শহিদ বললেন, ছুটি খুব একটা পাওয়া যায় না। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ১২-১৫ দিনের ছুটি মেলে। 'তখন গ্রামের বাড়ি যাই, খাসির গোশত দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি রান্না করি। স্বাদু পানির মাছ আর শাকসবজি খাই অনেক।'

স্বাদু পানির মাছ খেতে ভালো লাগে, তবে সামুদ্রিক মাছ মানবদেহের জন্য বেশি উপকারী।

জাহাজের ফিশ হোল্ডের ধারণক্ষমতা ৪০০ টন।

মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালে ভেসেলগুলো ডকে তোলা হয় এবং প্রয়োজনীয় মেরামত করা হয়। জাল মেরামতের কাজও চলে এই সময়। সাধারণত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দুই বছরে একবার জাহাজগুলোকে ডকে তুলতে হয়।

শহিদকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল একটি ফেসবুক পেইজ মারফত। তার দুটি ফেসবুক পেইজ আছে—একটির নাম 'বিডি ফিশারম্যান', অন্যটির নাম 'ফিশারম্যান শহিদ'। দুটিরই ফলোয়ার প্রায় তিন লাখ। দুটি পেইজ করেছেন এ কারণে যে, একটি নষ্ট হলে যেন অন্যটি দিয়ে কাজ চালানো যায়। তবে শুরুতে সহকর্মীরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি; বিরক্তি প্রকাশ করতেন।

কিন্তু পরবর্তীকালে এক ডুবুরি সহকর্মী কানুরামের লিভার ক্যানসার হলে শহিদ তার পেইজে মানবিক আবেদন জানিয়ে একটি পোস্ট দেন। ফলোয়ারদের কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা সহায়তা আসে। এই ঘটনাই পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সতীর্থরা তো বটেই, অফিসের কর্তারাও তাকে সাধুবাদ জানান। এরপর থেকে আর কোনো বাধার সম্মুখীন হননি শহিদ।

ফিশ হোল্ডে নেওয়ার আগে ফিশ প্যাকিং।

তিনি মূলত মোবাইল দিয়েই ভিডিও করেন। শুরুতে অপো ব্যবহার করতেন, তারপর রেডমি, এখন একটি আইফোন।

শেষে শহিদের কাছে জানতে চাইলাম, কেমন লাগে সমুদ্রের জীবন?

শহিদ বললেন, 'আমার খারাপ লাগে না। অনেকেই ডাঙ্গার জীবনে ফিরে গেছেন। তারা বিচ্ছিন্নতা সহ্য করতে পারেননি। কিন্তু আমার কাছে সমুদ্র শান্তির আঁধার। এখানে জীবন ঝামেলামুক্ত। সমুদ্রের মাছের রং অনেক বেশি—চোখ জুড়িয়ে যায়। যখন ভিউয়ারদের দেখাই, তারাও খুশি হন, ইতিবাচক মন্তব্য করেন। অনেক ভালো লাগে।'


ছবি সৌজন্য: শহিদ সরদার

Related Topics

সমুদ্রে মাছ ধরা / সাগরে মাছ ধরা / বঙ্গোপসাগর / ফিশিং বোট / ফিশিং জাহাজ / মাছ ধরা / সামুদ্রিক মাছ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আন্তঃনগর ট্রেনে আরও বেশি যাত্রাবিরতি দেওয়ার চাপে রেলওয়ে
  • যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ হলে কানাডাকে বিনামূল্যে ‘গোল্ডেন ডোম’ সুরক্ষা দেবেন ট্রাম্প
  • মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হারের ধাক্কা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে
  • ইউক্রেনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ‘পাল্লার সীমাবদ্ধতা’ তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ
  • ‘সরকারের মাথা থেকে পচন ধরেছে’: তারুণ্যের সমাবেশে মির্জা আব্বাস
  • ‘ড. ইউনূসের কাছে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন’: সালাহউদ্দিন আহমদ

Related News

  • ২৩-২৮ মে'র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড় 'শক্তি'
  • বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপে দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা
  • সাগর থেকে ২২ জেলেসহ চার ট্রলার ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
  • বরগুনায় ৩০ কেজির ভোল মাছ সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি
  • দীর্ঘ ৮ বছর পর ৫ শর্তে নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি পেলেন জেলেরা

Most Read

1
বাংলাদেশ

আন্তঃনগর ট্রেনে আরও বেশি যাত্রাবিরতি দেওয়ার চাপে রেলওয়ে

2
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ হলে কানাডাকে বিনামূল্যে ‘গোল্ডেন ডোম’ সুরক্ষা দেবেন ট্রাম্প

3
অর্থনীতি

মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হারের ধাক্কা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে

4
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ‘পাল্লার সীমাবদ্ধতা’ তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ

5
বাংলাদেশ

‘সরকারের মাথা থেকে পচন ধরেছে’: তারুণ্যের সমাবেশে মির্জা আব্বাস

6
বাংলাদেশ

‘ড. ইউনূসের কাছে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন’: সালাহউদ্দিন আহমদ

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab