সোনা কিনতে চান? ক্রেতা হিসেবে যা খেয়াল রাখতে হবে

ঈদের পর মেয়ের বিয়ে। শাড়ির কেনাকাটা সেরে এবার গয়নার পালা। ফাতেমা বেগম এলেন বসুন্ধরা সিটিতে, উদ্দেশ্য—মেয়ের জন্য সোনার কানের দুল কেনা। দোকানে ঢুকে বিক্রেতাকে বললেন, 'দুই ভরি ওজনের এক জোড়া কানের দুল দেখান তো।'
মুহূর্তেই সামনে হাজির হলো ঝলমলে কানের দুলের বিশাল সংগ্রহ। এত গয়নার ভিড়ে খানিকটা বিহ্বল ফাতেমা বেগম। কোনটি বেছে নেবেন? আর আসল সোনা চিনবেন কীভাবে?
ফাতেমা বেগমের মতো অনেক ক্রেতাই গয়না কিনতে গিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, 'এত টাকা দিয়ে গয়না কিনতে এলাম, প্রতারিত হবো না তো?" সোনার দাম যেভাবে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে বিনিয়োগের দিক থেকেও এটি অনেকের কাছে সঞ্চয়ের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। কিন্তু এখানেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে—খাঁটি সোনা চিনবো কী করে?
সোনা শুধু অলঙ্কার বা বিনিয়োগের মাধ্যম নয়, বরং এটি ঐতিহ্য ও প্রতিশ্রুতির প্রতীক। তবে সোনা কেনার সময় প্রতারণার শিকার হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
বাজারে নকল সোনা, ওজন কমিয়ে দেওয়া, অতিরিক্ত দাম নেওয়া কিংবা ভেজাল মিশ্রিত সোনা বিক্রির মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তাই সোনা কেনার আগে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।
কেন বাড়ে সোনার দাম?
সোনা কেনার আগে এর উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা জরুরি—কী কারণে কিনতে চান? বিনিয়োগের জন্য নাকি নিরাপদ সম্পদ হিসেবে।
সোনা কেনার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যেমন—গোল্ড ব্যাকড এক্সচেঞ্জ, ডিজিটাল সোনা, গোল্ড বন্ড, গয়না, কয়েন কিংবা বার। প্রতিটি মাধ্যমেরই নিজস্ব সুবিধা ও শর্ত রয়েছে।
বাংলাদেশে সোনার বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সম্পর্কিত। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন পাউন্ড বা ডলারের দাম বাড়ে কিংবা শেয়ার মার্কেটের ঊর্ধ্বগতি হয়, তখনই স্বর্ণের বাজারের উপর প্রভাব পড়ে।
এই প্রভাব তথা ওঠা-নামার উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন নির্বাচনী অনিশ্চয়তা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ডলার নির্ভরতা হ্রাস এবং খুচরা পর্যায়ে সোনার সহজলভ্যতা মূলত দামের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে কাজ করেছে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, সংকটকালে সোনার দাম বৃদ্ধি পায়। যেমন—১৯৩০ সালের মহামন্দা, ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার পর ২০১১ সালে ১৯০০ ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি।
গবেষকদের মতে, মূল্যস্ফীতির তুলনায় আতঙ্কই সোনার দামের প্রধান নিয়ামক। বাংলাদেশের দিকে তাকালেও এর প্রমাণ পাওয়া যাবে স্পষ্ট।
'গোল্ড প্রাইস হিস্ট্রি ইন বাংলাদেশ' ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ২০০৭ সালের মার্চ মাসে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ছিলো ১৮ হাজার ৯০০ টাকা।

ঠিক ১৮ বছর পর ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। তাহলে হিসেব করে দেখুন, ১৮ বছরের ব্যবধানে সোনার দাম কত গুণ বেড়েছে?
চকচক করলে কি সোনা হয়?
সোনা কিনতে গেলেই ক্রেতার প্রথম চাহিদা থাকে, 'আমাকে বাহিরের গোল্ড দেখান,' বলেন বসুন্ধরা সিটির রিয়া জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী মাহমুদুল হাসান।
তিনি বলেন, 'সোনার ক্ষেত্রে আসলে দেশ আর বাহির কোনো বিষয় না। গোল্ডের মূল ভিত্তি হচ্ছে ক্যারেট। হলমার্ক থাকলে দেশেও যে ক্যারেট, বাহিরেরও তাই। গুণগত মান এক। বিষয়টা হলো আপনি কত ক্যারেট চাচ্ছেন। কিন্তু অনেক ক্রেতাই এটা বুঝতে চান না।'
মফস্বলের সাথে ঢাকা শহরের বড় জায়গা যেমন বায়তুল মোকাররম, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেটের দোকানে স্বর্ণের দামের তারতম্যের কথাও উল্লেখ করেন এই বিক্রেতা।
তিনি বলেন, 'দাম নিয়ে ক্রেতা বিড়ম্বনায় পড়েন। নারায়ণগঞ্জের কথা ধরুন, ধরে নেন ওখানে আজকের ভরি ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আর আমাদের এখানে ভরি ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা।
'এই যে সাড়ে ছয় হাজার টাকার ফারাক, গ্রামের দিকে দেখা যাবে ফারাক আরো বেশি। এর কারণ হচ্ছে আমরা ১০০ রত্তিতে ১ ভরি ধরি আর গ্রামে ৯৬ রত্তিতে ১ ভরি ধরা হয়। এখানে ৪ রত্তি কম। এর ফলে ক্রেতা টাকাও যেমন কম পাবেন, তেমনি গোল্ডও কিন্তু কম পাবেন।'
তিনি আরও বলেন, 'ধরুন, আপনি একটি চুড়ি বা চেইন কিনে দুই বছর ব্যবহার করলেন। এরপর সেটি গ্রামে বিক্রি করলেন, যেখানে বিক্রেতা কিছুটা বেশি দামে এটি কিনে নিলো। পরে সেই বিক্রেতা চুড়ি বা চেইনটি পরিষ্কার [ওয়াশ] করে নতুনের মতো করে আরেকজনের কাছে বিক্রি করলেন। এটাও দামের তারতম্যের আরেকটি বিষয়।'
দাম নিয়ে দরাদরি
দাম নিয়ে যে ক্রেতার রোষের মুখে পড়েন না, তা অস্বীকার করলেন না স্বর্ণ বিক্রেতা মাহমুদুল। তিনি বলেন, 'অনেকেই ভাবেন আমাদের দোকান বসুন্ধরা সিটিতে, তাই বোধহয় দোকান ভাড়া, আলোকসজ্জা নিয়ে আমাদের দাম বেশি হয়। আসলে কিন্তু তা না। আমরা বাজুসের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত দামেই গয়না বিক্রি করি।'
মাহমুদুল আরো বলেন, 'অনেকে বিদেশ থেকে ফেরার সময় ভাবেন, ক্যাশ টাকা নেওয়ার চেয়ে বরং সোনা কিনে নিয়ে যাই। আমাদের দেশীয় গয়নার সঙ্গে বিদেশি গয়নার কিছু পার্থক্য থাকে।
'উদাহরণস্বরূপ, ১০০ গ্রাম গয়না আনতে হলে অন্তত ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা বহন খরচ হয়। কিন্তু কেউ যদি বিদেশ থেকে গয়না কিনে এনে মফস্বলের কোনো দোকানে বিক্রি করেন, তিনি কিন্তু কোনো বহন খরচ ধরেন না। এরপর সেই মফস্বল দোকানদার কম দামে গয়নাটি অন্য ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন।'
এভাবে সোনার দাম সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। এ প্রসঙ্গে রিয়া জুয়েলার্সের এই বিক্রেতা উল্লেখ করেন, 'ধরুন, ২৫ বছর আগে কেউ যদি ৬ হাজার টাকা ভরিতে সোনা কিনে থাকেন, এখন যদি সেই গয়না এক্সচেঞ্জ করতে আসেন, তাহলে বর্তমান দামের ১০% বাদ দিয়ে এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন বা ১৭% বাদ দিয়ে নগদ টাকা নিতে পারবেন।

'ফলে তিনি ভরি বাবদ ৬ হাজার টাকায় কেনা সোনার বিনিময়ে এখন ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা ক্যাশ পেয়ে যাবেন।'
বিশুদ্ধ গয়না কিন্তু নিত্য ব্যবহারযোগ্য নয়
কথায় আছে, 'খাঁটি সোনা ছাড়িয়া যে নেয় নকল সোনা, সে জন সোনা চেনে না।' গয়না কেনার ক্ষেত্রে কিন্তু খাদের পরিমাণ মাথায় রাখা জরুরি।
খাঁটি সোনা ভীষণ নরম এবং ভঙ্গুর হয়। বাঁকা হয়ে যায় খুব সহজে। তাই মেশাতে হয় খাদ। খাদের উপর নির্ভর করে ক্যারেট নির্ধারণ করা হয়, যার উপর নির্ভর করে গয়নার মান ও স্থায়িত্ব।
যদি গয়না খাঁটি হয়, অর্থাৎ ২৪ ক্যারেট হয়, তবে নিত্যদিন ব্যবহারের দিক থেকে অনুপোযোগী। ২৪ ক্যারেট হচ্ছে সোনার বিশুদ্ধতম রূপ। তাকে শোধন করে তৈরি করা হয় ২২ ক্যারেট।
২৪ ক্যারেটে ৯৯.৯৯ শতাংশ সোনা থাকে। ২২ ক্যারেটে ৯১.৬ শতাংশ, অর্থাৎ ১০০০ ভাগের মধ্যে ৯১৬ ভাগ বিশুদ্ধতা থাকে। অপরদিকে ২১ ক্যারেটে সোনার বিশুদ্ধতা থাকে ৮৭.৫ ভাগ। বাকি অংশে যুক্ত থাকে খাদ।
মাহমুদুল বলেন, 'গয়নার ডিজাইনের উপরেও গয়নার ক্যারেট নির্ভর করে। কিছু চুড়ির ডিজাইনে ২২ ক্যারেট লাগে, আবার কিছু ২১ ক্যারেটেই হয়ে যায়।
'আবার বালার কথা ধরুন, ২১ ক্যারেট হলে ভালো হয়। ২১-২২ যেটাই হোক, তা নিয়ে বেশি ভাবনার কারণ নেই। কেউ যদি রিপ্লেস করতে আসে, তবে সে যেই ক্যারেটের গয়না কিনেছে, সেই অনুযায়ীই গয়নার দাম পাবে।'
২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশে সোনার শুদ্ধতা যাচাইয়ের ল্যাব আছে। বাংলা গোল্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে যাচাই করে দেখা যায় সোনা।
তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভোক্তার আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজ উদ্যোগেই যাচাই করেন সোনা। খাঁটি সোনার নিশ্চয়তা পেতে অ্যাসিড টেস্ট, এক্সরে-ফ্লুরোসেন্ট বা অন্যান্য মান যাচাই পদ্ধতিও অনেকে ব্যবহার করেন।
সোনার শুদ্ধতার উপর নির্ভর করে গয়নায় বসানো হয় হলমার্ক। হলমার্ক হলো সোনা বিশুদ্ধকারী চিহ্ন, যা প্রতিটি গয়নার উপরেই থাকে। তাই সোনার গয়না কিনতে গেলে হলমার্ক দেখে কেনাই বাঞ্ছনীয়।
বার কিংবা কয়েনেই লাভ বেশি
'আমার হাতে এখন বেশ কিছু টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে কি সোনা কিনে রাখা ঠিক হবে?' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে তাকালে এমন কিছু প্রশ্ন প্রায়শই চোখে পড়ে।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। উত্তর হলো, যদি বিনিয়োগের জন্য সোনা কেনা হয়, তবে অলঙ্কারের পরিবর্তে গহনা বানানোর খরচবিহীন বার বা কয়েন কেনা লাভজনক। কারণ অলঙ্কার বিক্রি করলে তার তৈরি খরচ ফেরত পাওয়া যায় না।

এছাড়া বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং বাংলাদেশি বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। মান যাচাই করে সোনা কেনার পরামর্শ দেন বিক্রয়কর্মী মাহমুদুল।
সোনার গয়না বানাতে গেলে সোনার দাম ছাড়াও আলাদা থাকে মেকিং চার্জ এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট। অর্থাৎ ভরি অনুযায়ী সোনার যত টাকাই দাম থাকুক না কেন, তার সাথে অতিরিক্ত যুক্ত হবে ভ্যাট এবং মেকিং চার্জ।
তবে বার কেনার সময় কোনো মেকিং চার্জ দিতে হয় না। মাহমুদুল বলেন, 'মেকিং চার্জ গয়নার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। একটি গয়না তৈরির সময় কী পরিমাণ ওয়েস্টেজ হয়, তার উপর নির্ভর করেই মেকিং চার্জ নির্ধারণ করা হয়।
'বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি আমাদের নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, এক ভরির গয়নায় ন্যূনতম ৬ শতাংশ মেকিং চার্জ নিতে হবে। তারপর গয়নাভেদে দোকানদার দাম নির্ধারণ করে।'
গয়না বিক্রির জন্য রাখতে হবে ক্যাশ মেমো
পুরোনো গয়না বিক্রির জন্য গ্রাহকের ক্যাশ মেমো রাখা অত্যন্ত জরুরি। ক্যাশ মেমো থাকলেই গয়নার সঠিক দাম পাওয়া যায়।
সোনা কেনার ক্ষেত্রে রসিদে সোনার ক্যারেট, ওজন, মূল্য ও বিক্রেতার তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। তবে যে দোকান থেকে গয়না কেনা হচ্ছে, সেখানেই বিক্রির পরামর্শ দেন বিক্রেতারা।
এক দোকান থেকে কেনা সোনা অন্য দোকানে বিক্রি করতে চাইলে দাম ঠিকঠাক না পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেন রুদ্র জুয়েলার্সের প্রতিষ্ঠাতা ভাষ্কর। তিনি বলেন, 'যদি ক্যাশ মেমো কেউ হারিয়ে ফেলে, তবে তা পরিচিত দোকানের মাধ্যমেই বিক্রি করা উচিত।'
এই বিষয়ে মাহমুদুল যোগ করেন, 'বর্তমান সময়ে অনেকে নিজের মায়ের গয়না বা স্ত্রীর গয়না না জানিয়ে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। পরে এটি নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়, যার ভুক্তভোগী সোনার দোকানদারেরা হয়ে থাকেন।'
গোল্ড প্লেটেড গয়নার জনপ্রিয়তা
ইদানিং বাজারে জনপ্রিয় হচ্ছে গোল্ড প্লেটেড গয়না। স্বর্ণের ঊর্ধ্বমুখী বাজার দেখেই অনেকেই কম খরচে বিয়ের গয়না হিসেবে গোল্ড প্লেটেড গয়না বেছে নিচ্ছেন।
গোল্ড প্লেটেড গয়না হল তামা বা রূপা দিয়ে তৈরি গয়না, যার উপরে সোনার খুব পাতলা স্তর প্রয়োগ করা হয়। সোনার গয়না ও গোল্ড প্লেটেড গয়নার পার্থক্য বুঝতে চাইলে নজর দিতে হবে এর ওজনের উপর।
রূপা দিয়ে তৈরি গোল্ড প্লেটেড গয়না সোনার গয়নার তুলনায় অনেক বেশি ভারী হয়।
স্বর্ণ শুধু গয়নার জন্য নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি অবলম্বনও। তবে ভুল সিদ্ধান্ত কিংবা প্রতারণা এড়িয়ে সঠিকভাবে কেনা জরুরি। ক্রেতার সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা প্রয়োজন, যাতে তিনি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে গয়না কিনতে পারেন। তাই কেনার আগে বারবার বাজার বিশ্লেষণ করা এবং বিশ্বস্ত উৎস থেকে কেনার পরামর্শই দেন বিক্রেতারা।