নাইজেরিয়ান তারকা প্যাটোরেঙ্কিং: কেন আফ্রিকার তরুণদের কাছে ফিরে গেলেন এই সংগীত শিল্পী?

নাইজেরিয়ান সংগীতশিল্পী প্যাটোরেঙ্কিং শুধু স্টেজের আলোতেই নয়, বাস্তব জীবনেও তরুণদের জন্য এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আফ্রো-ডান্সহল ঘরানার এই জনপ্রিয় গায়ক সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তবে তার স্বপ্ন এখানেই থেমে নেই। ২০৩৫ সালের মধ্যে এক মিলিয়ন তরুণের জীবন বদলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
শৈশবে অভাব-অনটনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া প্যাটোরেঙ্কিং এখন সেই অভিজ্ঞতা থেকেই পথ দেখাতে চান ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে—শিক্ষা, ক্রীড়া ও প্রযুক্তিতে উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে চান তিনি।
আসল নাম প্যাট্রিক ননেমেকা ওকোরি। বেড়ে ওঠা নাইজেরিয়ার এবুটে মেট্টার বস্তিতে, যেখানে স্বপ্ন দেখা ছিল বিলাসিতা। তার বাবা ছিলেন ছোটখাট ব্যবসায়ী, আর পরিবার চালানোর সংগ্রাম ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল না, তাই নিজের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে সংগীত সাধনার পথে হাঁটেন প্যাটোরেঙ্কিং।
'গেটোর সংগীত আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে,' বলেন তিনি। 'আমি চেয়েছিলাম নির্যাতিত ও অবহেলিত মানুষের কণ্ঠস্বর হতে।'
প্যাট্রিক বলেন, 'আমি এমন এক জায়গা থেকে এসেছি, যেখানে সফল হওয়ার সুযোগ খুব কম ছিল। জানতাম, শুধু নিজের জন্য নয়, আশপাশের মানুষদের জন্যও কিছু করতে হবে।'
তার সংগীতের অনুপ্রেরণা ছিলেন নাইজেরিয়ার জনপ্রিয় শিল্পীরা, যেমন—ড্যাডি শোকি, বাবা ফ্রাইও, টুফেস। ২০১৩ সালে তার ভাগ্য বদলে যায়, যখন নাইজেরিয়ান সংগীতশিল্পী টিমায়া তাকে সুযোগ দেন। তাদের যৌথ গান আলুবারিকা প্যাটোরেঙ্কিংকে পরিচিতি এনে দেয়। এরপর ২০১৪ সালে গার্লি ও গানটি তাকে শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যায়।
তারকা খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেও নিজের শিকড়কে ভুলে যাননি প্যাটোরেঙ্কিং। ২০১৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন প্যাটোরেঙ্কিং ফাউন্ডেশন, যা শিক্ষা, ক্রীড়া ও কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করছে। ছোটবেলায় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার, যা পূরণ না হলেও তিনি অন্যদের জন্য ক্রীড়া সুযোগ তৈরি করছেন।
তিনি বলেন, 'আমি ছোটবেলায় ফুটবলার হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তাই আমি অন্যদের জন্য সেই সুযোগ তৈরি করতে চাই।'
বিশেষ করে কিশোরদের জন্য ক্রীড়া সুযোগ বাড়াতে তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে স্পোর্টস সেন্টার নির্মাণ করছেন। প্রথম কেন্দ্রটি তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের জন্মস্থান এবুটে মেট্টায়।
সংগীতের পাশাপাশি প্রযুক্তিতেও তার গভীর আগ্রহ রয়েছে। উচ্চশিক্ষার ব্যয়ভার বহন করতে না পারায় প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি তার। সেই অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি স্কাই লেভেল ইনিশিয়েটিভ চালু করেন, যা নাইজেরিয়ার এবোনি রাজ্যের ১৭০ শিশুকে উন্নত প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে।
২০২০ সালে প্যাটোরেঙ্কিং আফ্রিকান লিডারশিপ ইউনিভার্সিটির (এএলইউ) সঙ্গে অংশীদারত্বে বৃত্তি চালু করেন, যা তরুণদের প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণে সহায়তা করে। প্রথম বছরে ১০ জন শিক্ষার্থী এই সুযোগ পান, আর চলতি বছর ফাউন্ডেশনটি অতিরিক্ত ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে, যাতে আরও ৪০ শিক্ষার্থী উপকৃত হতে পারে।
এএলইউ-এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেড সোয়ানিকার বলেন, 'আফ্রিকান তরুণদের মধ্যে উদ্ভাবনী ও উদ্যোক্তা মানসিকতা প্রবল। তারা আগামী দিনের বড় সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে।'
২০২৩ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে প্যাটোরেঙ্কিংকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যেখানে তিনি যুব উন্নয়ন ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, 'তরুণদের জন্য সবকিছুই সম্ভব। আমি শুধু তাদের দেখিয়ে দিতে চাই, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যায়।'