সংগীতজ্ঞ মুস্তাফা জামান আব্বাসী মারা গেছেন

খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক ড. মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বনানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
তার মৃত্যু খবর নিশ্চিত করেছেন মেয়ে শারমিনী আব্বাসী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবার একটি ছবি প্রকাশ করে তিনি লেখেন, 'আমার সোনার চান পাখী .. আর দেখা হবে না?'
বয়সজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন ড. মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সর্বশেষ শুক্রবার শ্বাসকষ্টজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় তার মৃত্যু হয়।
১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কলকাতায়। তাদের পরিবারের সাথে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। শিক্ষাজীবনের শুরু কলকাতায় হলেও তিনি ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬০ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর পিতা ছিলেন কিংবদন্তি পল্লিগীতিশিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদ। এ দেশের পল্লিসংগীতকে তিনিই প্রথম বিশ্বের দেশে দেশে জনপ্রিয় করেছেন।
তার চাচা আব্দুল করিম ও বোন ফেরদৌসী রহমানও ছিলেন সংগীতজগতে সুপরিচিত নাম। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন আইনজ্ঞ এবং তার মেয়ে নাশিদ কামালও এক বরেণ্য সংগীতশিল্পী।
পেশাগত জীবনে তিনি শিল্পগোষ্ঠীর মহাব্যবস্থাপক এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের বাইরেও সংগীত পরিবেশনায় সক্রিয় ছিলেন তিনি—বিশ্বের ২৫টির বেশি দেশে তিনি ভাটিয়ালি, বিচ্ছেদি, ভাওয়াইয়া, চটকা ও নজরুলসংগীত পরিবেশন করেছেন।
কবি, লেখক ও সংগীতগবেষক হিসেবে তার ২১টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আজীবন অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, লালন পদক, নজরুল একাডেমি পুরস্কার, আব্বাসউদ্দীন স্বর্ণপদক, জাতীয় প্রেসক্লাব লেখক পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।