কেরানীগঞ্জে মাদরাসায় বিস্ফোরণ: গ্রেপ্তার ৬ আসামি রিমান্ডে
ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাসনাবাদ হাউজিং এলাকায় একটি মাদরাসা বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার ৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমানের আদালত এই আদেশ।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- শাহিন ওরফে আবু বকর ওরফে মুসা ওরফে ডিবা সুলতানা, মো. আমিনুর ওরফে দর্জি আমিন, মো. শাফিয়ার রহমান ফকির, আছিয়া বেগম, ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানী খাতুন ওরফে আসমা।
এর আগে, আসামিদের আদালতে হাজির করেন পুলিশ। এরপর আসামি শাহিন, আমিনুর ও শাফিয়ারের ১০ দিন এবং আছিয়া বেগম, ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানী খাতুনের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুরুষ আসামিদের সাত দিন এবং নারী আসামিদের তিন করে জিজ্ঞেসাবাদ (রিমান্ড) মঞ্জুর করেন।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম রিমান্ড শুনানিতে বলেন, 'এ ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য কোথা থেকে আসলো? মাদরাসায় যারা ছিল তাদেরকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল কি না? এবং তারা একত্র হয়ে সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ষড়যন্ত্র করছেন কি না, সেটি বের করার জন্য আসামিদেরকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।'
এসময় বিচারকের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, 'যেহেতু মূল আসামির স্ত্রী ও তার সঙ্গে যারা আসামি তাদের বিরুদ্ধে পূর্বে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা ছিল, এজন্য তাদের এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'গ্রেপ্তার আসামি আসমানী খাতুন এক সময় জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে জেল খেটে সাত মাস জামিন পায়। অপর আসামি শাহিনের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃকত্তার মামলা আছে। এজন্যই তদন্তের স্বার্থে তাদের রিমান্ড প্রত্যেকের রিমান্ড আবেদন করেছি।'
এসময় মামলায় আসমানী খাতুন ছাড়া অন্যান্য আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলনা।
আসমানী খাতুনের আইনজীবী আদালতে বলেন, 'আগের মামলায় কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলেই আসমানী খাতুন খালাস পেয়েছেন। এজন্য তার এ মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার মত কোনো উপাদান নেই। এ ঘটনার সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা নেই। যদি সম্পৃক্ততা থাকতো তাহলে বিগত দুই মামলায় খালাস পেতেন না। এজন্য এ মামলায় আসামি আসমানী খাতুনের অন্তত রিমান্ড বাতিল করে জেলগেট জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হোক।'
তিনি আরও বলেন, 'তার বাচ্চার দিক বিবেচনা করে হলেও আদালতের কাছে এই আবেদন রাখছি। এ আসামির শুধু আগে মামলা ছিল, এছাড়া এ মামলায় কোনো অপরাধ নেই ।'
এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে শুনানিতে আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বলেন, 'আমার সঙ্গে মূল (পলাতক) আসামি গত একবছর ধরে ছিল না। মাদরাসাটা দিয়ে একা সংসার চালাইতাম। সে আমাকে নির্যাতন করত। সে অপরাধ করতে পারে, কিন্তু আমরা তো কিছু করিনি।'
তিনি বলেন, 'সে অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত ছিল আগে, কিন্তু গত একবছর ধরে সে ভালোই ছিল। কোনো মোবাইলও চালাতো না। এমন কিছু ঘটবে আমি আগে থেকে জানলে আইনকে জানাতাম। আমার তিনটা ছোট বাচ্চা আছে, তারা অসুস্থ।'
অপর আসামি আলামিনের স্ত্রী আছিয়ার ভাইয়ের বউ আসমানী খাতুন সম্পর্কে বলেন, 'সে তো আমাদেরকে দেখতে এসেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার ভাবি কোনোভাবেই জড়িত না, তাকে কেন নিয়ে আসা হলো?'
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামিদেরকে উদ্দেশে বলেন, 'এটা সেনসিটিভ মামলা। আপনারা তদন্তে সহযোগিতা করবেন। এ ধরনের মামলায় জিজ্ঞেসাবাদ করা প্রয়োজন আছে।'
শুনানি শেষে পুরুষদের সাত দিন এবং মহিলাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে, গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি ড্রামভর্তি প্রায় ৪০০ লিটার তরল রাসায়নিক, ৪টি ককটেলসদৃশ বস্তু, একটি ল্যাপটপ ও ২টি মনিটর উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে মাদরাসার পরিচালক ও শিক্ষক শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০ টা ২৫ মিনিটের এই মাদরাসার মধ্যে বিকট শব্দে কক্ষের চারদিকের দেয়ালসমূহ, ছাদের কিছু অংশ ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
এই ঘটনার খবর পেয়ে সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক সাইফুর রহমান এবং উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ একাধিক টিম ঘটনাস্থলে হাজির হয় এবং তারা উদ্ধার অভিযান ও আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে।
দীর্ঘ দুই দিনব্যপী উদ্ধার অভিযান শেষে আলামত সংগ্রহকালে দেখা যায়, পলাতক আসামি আল-আমিনের ভাড়া বাসা ভিতরে বিপুল পরিমাণে বোমা বানানোর সরঞ্জামাদিসহ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, এসিটোন, নাইট্রিক এসিড, সাদা রংয়ের পাউডারসহ একাধিক ক্যামিক্যালের জারকিন এবং কালো প্লাস্টিকে মোড়ানো ৯ টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেন সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিট।
এছাড়াও সেখানে অভিযান চালিয়ে ৪০০ লিটার তরল রাসায়নিক ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের থানার উপ-পরিদর্শক ইসলাম লিটন সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
