একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন দিল সরকার
আজ (২৩ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ের মোট ২২টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার।
এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৩০ হাজার ৪৮২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১ হাজার ৬৮৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৪ হাজার ২৪৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নতুন প্রকল্প ১৪টি, সংশোধিত প্রকল্প ৫টি এবং মেয়াদ বৃদ্ধি প্রকল্প ৩টি।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
আজকের সভায় অনুমোদিত ২২টি প্রকল্প হলো—সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প— 'কর্ণফুলী টানেল (আনোয়ারা) হইতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের গাছবাড়িয়া পর্যন্ত সংযোগ সড়ক (জেড-১০৪০) উন্নয়ন প্রকল্প; দিনাজপুর সড়ক বিভাগাধীন হিলি (স্থলবন্দর)-ডুগডুগি ঘোড়াঘাট জাতীয় মহাসড়ক (এন-৫২১ যথাযথ মানে উন্নীতকরণসহ ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিদ্যমান জরাজীর্ণ কালভার্ট সমূহপুনঃনির্মাণ এবং বাজার অংশে রিজিডপেভমেন্ট ও ড্রেন নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প; এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প: সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ এবং উভয়পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুদমদিত ১টি প্রকল্প হলো—নারায়ণগঞ্জস্থ আলীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারিদের জন্য ৮টি ১৫ তলা ভবনে ৬৭২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ৫টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে—ঢাকা ওয়াসা প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা একাডেমি স্থাপন প্রকল্প; সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট এন্ড লাইভলিহুড এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট প্রকল্প; পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; এবং সিলেট বিভাগেরগুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে—মোংলা কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েন্ট (কমফ্লোট ওয়েস্ট)-এর অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প এবং সাভারে আর্মি ইনস্টিটিউট অফ ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র পুন:নির্মাণ কোনাবাড়ি, গাজীপুর (১ম সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১টি অনুমোদিত প্রকল্প হলো—এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ প্রকল্প। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে—হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্পের মধ্যে আছে—রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কর্ণফুলী এবং সংযুক্ত নদীসমূহের (কাচালং, রাইখিয়ং ও শলকনদী) টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প; গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প; সুরমা-কুশিয়ারা নদী অববাহিকার উন্নয়ন এবং বন্যা ও সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (১ম পর্যায়) প্রকল্প এবং ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (কম্পোনেন্ট–১, বিডব্লিউডিবি অংশ) (প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ১টি প্রকল্প হলো—বগুড়া কৃষি অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প। এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দারুল আরকাম ইসলামী শিক্ষা পরিচালনা ও সুসংহতকরণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত ৫০ কোটি টাকার কম ব্যয়সম্বলিত ১০টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেক সভাকে অবহিত করা হয়। প্রকল্পগুলো হলো—নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনী জেলার ২টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প; সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্প; শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত); অ্যাডাপটেশন ইনিশিয়েটিভ ফর ক্লাইমেট ভালনারেবল অফশোর স্মল আইল্যান্ডস অ্যান্ড রিভারাইন চরল্যান্ড ইন বাংলাদেশ (প্রথম সংশোধন) প্রকল্প; ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ঢোলভাঙ্গা নদীর ডান তীর এবং উজানচর ইউনিয়নে লোয়ার তিতাস নদীর ডান তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প; নোয়াখালী জেলার বামনী নদী অববাহিকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প; র্যাব ফোর্সেসের অভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প; পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ক্যাম্পাসের ভবনসমূহের স্থাপনাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মপরিবেশ উন্নতকরণ (প্রথম সংশোধনী) প্রকল্প; ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা লেক উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প এবং অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৩ (প্রথম সংশোধিত)।
