ছাত্র-জনতাকে 'শেষ' করার পরিকল্পনা ছিল 'গ্যাং অব ফোরের' সালমান-আনিসুলের: চিফ প্রসিকিউটর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গঠিত তথাকথিত 'গ্যাং অব ফোর'-এর সদস্য হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আন্দোলনকারীদের 'শেষ করে দেওয়ার' সব ধরনের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় এই দুই আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে কারফিউ জারির মাধ্যমে গণহারে হত্যায় উসকানির দায়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আবেদন জানান চিফ প্রসিকিউটর।
প্রেস ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, 'সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে গ্যাং অব ফোরের সদস্য বলা হয়। অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে চারজনের এই বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও ছিলেন।'
তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীন নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা বা নিঃশেষ-নির্মূল করার পরিকল্পনার জন্য এ চারজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে আন্দোলন দমনে কোথায়, কীভাবে অপারেশন হবে, কী অস্ত্র ব্যবহার হবে, কীভাবে হত্যা করা হবে, কাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে রাখা বা রিমান্ডে নেওয়া হবে—এসব কিছুর পরিকল্পনা করেছেন আনিসুল ও সালমান।'
চিফ প্রসিকিউটর জানান, জরুরি অবস্থা বা কারফিউ জারির জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং তা কার্যকরের ব্যবস্থাও করেছিলেন এই দুজন।
ট্রাইব্যুনালে প্রামাণিক দলিল হিসেবে একটি ফোনালাপ শোনানোর কথা উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, 'আমরা সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের একটি ফোনালাপের কিছু অংশ বাজিয়ে শুনিয়েছি ট্রাইব্যুনালে। ফোনালাপে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমন করার দুটি পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছিলেন তারা। একটা হলো কারফিউ দিয়ে আন্দোলনকারীদের একদম শেষ করে দেওয়া। দ্বিতীয়টি সামরিক শাসন জারি করে অভ্যুত্থান দমন করা। এই পরিকল্পনা তারা একইভাবে প্রধানমন্ত্রীকে দেন।'
তিনি আরও বলেন, 'এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ দলের বৈঠকে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুতরাং আমাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে। অর্থাৎ তাদের পরামর্শ, নির্দেশনা ও উসকানির মাধ্যমেই জুলাই-আগস্টে গণহত্যা হয়েছিল। তাদের এই সুপিরিয়র স্ট্যাটাস বা জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ—এ দুটোর সমন্বয়েই সংঘটিত হয়েছিল হত্যাযজ্ঞ।'
সবমিলিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ গঠনের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর।
