ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে হামলা: সুষ্ঠু তদন্তের দাবি কর্তৃপক্ষের
রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে বিক্ষুব্ধ জনতা কর্তৃক ভাঙচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার পর ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা সংঘবদ্ধ হয়ে জোরপূর্বক ভবনটিতে প্রবেশ করে এই হামলা চালায়।
ছায়ানট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলাকারীরা ছয়তলা ভবনের সবকটি সিসি ক্যামেরাসহ অধিকাংশ কক্ষ, প্রক্ষালন কক্ষ, মিলনায়তন, কম্পিউটার এবং আসবাবপত্র ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। ধ্বংস করা হয়েছে অসংখ্য মূল্যবান বাদ্যযন্ত্র। দুর্বৃত্তরা সার্ভারসহ কিছু আসবাব ও বাদ্যযন্ত্রে অগ্নিসংযোগও করে। এছাড়া অন্তত ৭টি ল্যাপটপ, ৪টি মোবাইল ফোন এবং বেশ কিছু হার্ড ডিস্ক লুট করে নিয়ে গেছে তারা। হামলাকারীদের তাণ্ডবে ভবনের বৈদ্যুতিক সংযোগ ও সরঞ্জামাদিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই বর্বরোচিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোরালো অনুরোধ জানিয়েছে ছায়ানট। প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্ট করে বলেছে, ছায়ানট একটি স্বেচ্ছাসেবী ও স্বনির্ভর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো সরকার, বিদেশি সংস্থা বা করপোরেট অনুদান গ্রহণ করে না। ফলে উদ্ভূত এই বিশাল ক্ষয়ক্ষতি ছায়ানট তার নিজস্ব আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়েই কাটিয়ে উঠবে। সংগীত শিক্ষা ও শিশুদের সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রমে যে সাময়িক বিঘ্ন ঘটেছে, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।
ছায়ানট কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের কাজের ক্ষেত্র রাজনীতি নয়; বরং সংগীত ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করাই তাদের মূল লক্ষ্য। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সমাজ গড়তে ছায়ানট সর্বদা সচেষ্ট। ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুলেছে— ওই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কেন ছায়ানটে হামলা চালানো হলো তা মোটেই বোধগম্য নয়। ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে কোনো এক সংস্কৃতিবিরোধী গোষ্ঠী।
উপমহাদেশের বৃহত্তম অনানুষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছায়ানটের খ্যাতি রয়েছে। বাংলা গানের প্রসার এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ছায়ানটের ঐতিহাসিক ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। এমন একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর এই নিন্দনীয় হামলা বিশ্বদরবারে মাতৃভূমি সম্পর্কে একটি নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।
হামলার ঘটনার পর দেশ ও বিদেশ থেকে অগনিত শুভাকাঙ্ক্ষী ছায়ানটের প্রতি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তাদের সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
