রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও এমপি পদপ্রার্থীদের অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে নীতিমালা জারি সরকারের
রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের নিরাপত্তায় সাময়িক সময়ের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স এবং রিটেইনার বা নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের সুযোগ দিয়েছে সরকার।
এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল (১৫ ডিসেম্বর) এই নীতিমালা জারি করে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন রোধ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত সশস্ত্র বাহিনী গঠন প্রতিরোধ এবং প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকির ভিত্তিতে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান ও রিটেইনার নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া এর মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার কথাও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে ১৩ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে সরকার।
তিনি বলেন, "রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অস্ত্রের লাইসেন্স চাইলে তা দেওয়া হবে। আর যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তির লাইসেন্স বর্তমানে সরকারের কাছে জমা রয়েছে, তারা চাইলে তা ফেরত নিতে পারবেন।"
এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি রাজধানীর পুরানা পল্টনে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার দুপুরে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন।
কারা লাইসেন্স ও রিটেইনার লাইসেন্স পাবেন?
নীতিমালায় কারা লাইসেন্স ও রিটেইনার পাবেন, সে বিষয়ে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বর্তমান বা সাবেক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বোঝাবে। আর সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী বলতে নির্বাচন কমিশনে বৈধভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল ও গৃহীত জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীকে বোঝাবে।
রিটেইনার বলতে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ও অনুমোদিত সশস্ত্র ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীকে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে হবে অথবা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে।
আবেদনকারীর প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে কি না, তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ—প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থা—যাচাই করে নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে আবেদনকারীর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা থাকতে হবে এবং অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
কোন ধরনের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে?
নীতিমালায় কোন ধরনের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে, সে বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এই নীতিমালার আওতায় কেবল আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সীমিত ক্যালিবারের (এনপিবি) অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে। একাধিক অস্ত্রের লাইসেন্স অনুমোদন করা হবে না। অর্থাৎ যাদের আগে থেকেই অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে, তারা নতুন করে এই নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স পাবেন না। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় বা সামরিক অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ থাকছে না।
নীতিমালা অনুযায়ী, এই লাইসেন্সের মেয়াদ থাকবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর আরও ১৫ দিন পর্যন্ত। এরপর লাইসেন্সটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
তবে অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার সাধারণ নিয়ম ও শর্ত পূরণ করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সাময়িক লাইসেন্সকে সাধারণ লাইসেন্সে রূপান্তর করতে পারবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কেউ যদি ওই লাইসেন্সের বিপরীতে নেওয়া অস্ত্র নিজের কাছে রাখেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রিটেইনার নিয়োগের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, কেবল প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেই রিটেইনার নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হবে। রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের এ বিষয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। যাচাই-বাছাই শেষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দুই দিনের মধ্যে আবেদন অনুমোদন বা বাতিল করবেন।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য হলেও যদি তিনি আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সামর্থ্য না রাখেন অথবা অস্ত্র কিনতে না চান, সে ক্ষেত্রে বৈধ লাইসেন্সধারী ও অস্ত্র পরিচালনায় সক্ষম কোনো ব্যক্তি রিটেইনার হতে চাইলে তাকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ রিটেইনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
রিটেইনার বা নিরাপত্তারক্ষী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। তার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ২৫ বছর এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী বা বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন।
পাশাপাশি সরকারি হাসপাতাল থেকে মেডিকেল ফিটনেস সনদ থাকতে হবে। একজন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সর্বোচ্চ একজন রিটেইনার নিয়োগ করতে পারবেন।
