বিদেশি সুতার ডাম্পিং ও ব্যয় বৃদ্ধি: অস্তিত্ব সংকটে দেশীয় স্পিনিং শিল্প, সুরক্ষার দাবি
বিদেশি সুতার ডাম্পিং, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার চাপে দেশের স্পিনিং শিল্প অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বলে দাবি করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের কাছে জরুরি সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্পিনিং শিল্পের মালিকরা এই সংকটের চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় তারা শিল্প রক্ষায় অ্যান্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স ও সেইফগার্ড ডিউটি আরোপসহ বেশ কিছু নীতিগত সহায়তার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সালমা গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার ইঞ্জিনিয়ার আজহার আলী বলেন, 'বৈদেশিক বাজারে অনেক দেশ সরকারি ভর্তুকির কারণে তুলনামূলক কম দামে সুতা রপ্তানি করায় বাংলাদেশে উৎপাদিত সুতা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এর ফলে দেশে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে সুতা আমদানি হচ্ছে, যা কার্যত ডাম্পিংয়ের শামিল।'
তিনি আরও বলেন, 'স্থানীয় শিল্পকে বাঁচাতে এবং বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সুতা আমদানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স বা সেইফগার্ড ডিউটি আরোপ এখন সময়ের দাবি।'
স্পিনিং শিল্পের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, 'কোভিড-পরবর্তী মন্দা, ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, জ্বালানি–বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি—এই সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে দেশের ৪০ শতাংশ স্পিনিং মিল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক ও কর্মচারী বেকার হয়েছেন। যেসব কারখানা চলছে সেগুলোও ৫০–৬০ শতাংশ সক্ষমতায় উৎপাদনে রয়েছে।'
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও গ্রিনটেক্স কম্পোজিট মিলস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক রুহুল আমিন সতর্ক করে বলেন, 'ডাম্পিংয়ের কারণে দেশীয় সুতা বাজার হারাচ্ছে।'
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্পিনিং শিল্প মালিকরা বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে—স্থানীয় সুতা ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে গার্মেন্টস রপ্তানিতে দেশীয় সুতার ব্যবহারকারীদের ১০ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান এবং একই সঙ্গে সুতা আমদানিতে ১০ শতাংশ সেইফগার্ড ডিউটি আরোপ করা।
উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে আজহার আলী বলেন, 'পরপর তিন ধাপে গ্যাস–বিদ্যুতের দাম ৩৫০ শতাংশ বেড়ে গেলেও টেক্সটাইল ও ব্যাকওয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রির পণ্যমূল্য সমন্বয় হয়নি। ফলে মিলগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে।' এ অবস্থায় রপ্তানিমুখী কারখানার জন্য ৩০ শতাংশ বিল রিবেট দিয়ে দুই বছরের জন্য জরুরি প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ব্যবসায়িক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে স্পিনিং শিল্প সংশ্লিষ্টরা আরও কয়েকটি নীতিগত সহায়তার প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে- বাতিল হওয়া রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) সুবিধা আগামী দুই বছরের জন্য পুনর্বহাল করা৷ শিল্পে স্থানীয় কাঁচামালের ব্যবহার বাধ্যতামূলকভাবে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো। রিসাইকেল ও সাসটেইনেবল পণ্যের উৎপাদন উৎসাহিত করতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য ৫ শতাংশ সুদে ১০ বছর মেয়াদি বিশেষ ঋণ প্যাকেজ চালু করা।
এছাড়া টাকার অবমূল্যায়নের কারণে কমে যাওয়া আমদানি সক্ষমতা পুনরুদ্ধারের দাবিও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোশাররফ কম্পোজিট গ্রুপের পরিচালক (অপারেশন) শাহিনুল হক, আরমাডা গ্রুপের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, আহমেদ গ্রুপের অ্যাডভাইজর শান্তিময় দত্ত এবং যমুনা গ্রুপের পরিচালক এবিএম সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
