নির্বাচনে লড়বেন, কূটনৈতিক পাসপোর্ট জমা, পদত্যাগের বিষয়ে প্রেস উইং জানাবে: আসিফ মাহমুদ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর)বিকেল ৩টায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
এ সময় তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে আমি সম্পদের হিসাব বিবরণী আজকে সকালেই দাখিল করেছি এবং আমার যে দুইটি পাসপোর্ট আছে সেটাও ক্যানসেল করেছি।'
আগামীকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তাকে ডাকা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'উপদেষ্টা পরিষদে আমাকে ডাকা হয়েছে। বাকিটা আপনারা আমাদের প্রধান উপদেষ্টার যে দফতর আছে সেখান থেকেই জানবেন।'
তিনি বলেন, 'আমি আগেও বলেছি, উপদেষ্টা পদে থেকে নির্বাচন করা উচিত নয়। যদিও আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। তবে আমি নিজেও সেটা প্র্যাকটিস করব। আমি তো একটা সিস্টেমের মধ্যে আছি, আমাকে সেটা ফলো করতে হয়।'
তিনি নির্বাচন করবেন কি না এবং পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কি না, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'আমি নির্বাচন করব, এটা স্পষ্টভাবে বলা যায়। কিন্তু কোথা থেকে করব, কোন দল থেকে করব, সেটা পরবর্তী ডিসকাশন।'
পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এটা আমার বলার এখতিয়ার নেই, সেটা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেটার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।'
দুই-একদিনের মধ্যে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
আসিফ মাহমুদ বলেন, 'আমি গতকাল সরকারের কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছি। পাশাপাশি উপদেষ্টা হিসেবে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল, সেটিও সারেন্ডার করেছি।'
প্রসঙ্গত, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সময় যেসব কাজ করেছেন সেগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে সরকারের অংশ হই। মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে সরকারের নীতি প্রণয়নে অংশ নিয়েছি।'
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছেন বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার হয়েছে এবং সংবাদমাধ্যমেও সেটি হয়েছে।'
এর আগে, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।
কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আরও সময় চান।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে প্রথমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধিদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ জায়গা পান। এরপর মাহফুজ আলম শুরুতে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হন।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা গত ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গঠন করেন।
নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে দলটির আহ্বায়ক হন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন মাহফুজ আলম। অবশ্য মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের এনসিপিতে কোনো পদ নেই।
এদিকে, আসিফ মাহমুদ ঢাকা থেকে ভোট করবেন, সেটা আগেই জানিয়েছেন। তিনি গত ৯ নভেম্বর ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে ধানমন্ডিতে ভোটার হওয়ার আবেদন করেন। এরপর ঢাকা-১০ আসন (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা বা দলটি থেকে ভোট করতে চান বলেও খবর বের হয়।
অবশ্য ৪ ডিসেম্বর বিএনপি দ্বিতীয় দফায় যে ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তাতে ঢাকা-১০ আসনও রয়েছে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি থেকে নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'আমি যতটুকু জানি বিএনপি ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।'
গত রবিবার এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ে একটি নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করেছে। এনসিপি ১২৫ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। সেখানে আসিফ মাহমুদের নাম নেই।
এদিকে, আজ বুধবার সন্ধ্যায় বা কাল বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
