জুলাই শহীদের পরিচয় শনাক্তে দ্বিতীয় দিনে উত্তোলন করা হলো আরও ৪ মরদেহ
পরিচয় শনাক্তে রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে দ্বিতীয় দিনে অজ্ঞাত আরো ৪ জুলাই শহীদের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। এনিয়ে এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত ৬ জন জুলাই শহীদের মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত করা হলো বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে রায়েরবাজার কবরস্থানে মরদেহ উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। এদিন মোট ৪টি মরদেহ উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করা অস্থায়ী ফরেনসিক ল্যাবে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়। পরে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুনরায় মরদেহগুলো কবর দেওয়া হয়।
এর আগে গতকাল রোববার রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে পরিচয়হীন ১১৪ জুলাই শহীদের মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ সংগ্রহ ও ময়নাতদন্তের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ উপস্থিত থেকে মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করেন। এদিন দুইটি মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়।
এ সময় ছিবগাত উল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের মরদেহ আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনেই উত্তোলন করা হবে। মিনেসোটা প্রোটোকল অনুসরণ করে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ স্যাম্পলিংসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হবে। আমরা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মেডিকেল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব অংশীদারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন থেকে পুনরায় দাফন পর্যন্ত নির্দিষ্ট ধাপে সব কার্যক্রম করা হবে।
এই মরদেহ উত্তোলন ও ডিএনএ সংগ্রহ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রখ্যাত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডা. লুইস ফন্ডব্রাইডার।
এদিকে মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরুর দিন সিআইডিতে এসে ডিএনএ নমুনা দিয়ে গেছেন জুলাই অভ্যুত্থানে স্বজন হারানো ৭টি পরিবারের ১১ জন সদস্য। তবে দ্বিতীয় দিনে নতুন করে কেউ ডিএনএ দিতে আসেননি বলে জানিয়েছে সিআইডি।
এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রথম দিনে ২ জন এবং দ্বিতীয় দিনে ৪ জন জুলাই শহীদের মরদেহ উত্তোলন করা হয়। বিশেষজ্ঞরা এই ৬ জনের মরদেহ উত্তলনের পর সেখানে স্থাপন করা অস্থায়ী ফরেনসিক ল্যাবে ময়নাতদন্ত করে ডিএনএ নমুন সংগ্রহ করেছেন।
তিনি আরো জানান, প্রথম দিনে মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম ধীর গতিতে হলেও দ্বিতীয় দিনে গতি বেড়েছে। ধীরে ধীরে সেটি হয়তো আরো বাড়বে। তবে প্রতিটি মরদেহ তুলে সেগুলো ময়নাতদন্ত করে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ সময় সাপেক্ষ। যে কারণে দিনে হয়তো ৪-৫টি বেশি মরদেহ তোলা সম্ভব হবে না।কবরস্থান থেকে তোলা মরদেহগুলো থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ নমুনা সিআইডিতে এনে প্রোফাইলিংয়ের কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নিহত অজ্ঞাত পরিচয় ১১৪ জন শহীদকে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। চলতি বছরের ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহিদুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান মরদেহগুলো কবর থেকে উত্তোলনের নির্দেশ দেন।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুলিশের আবেদনে বলা হয়, 'ভবিষ্যতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য সঠিক আইনগত প্রক্রিয়ায় মরদেহ উত্তোলন, ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ জরুরি। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছে হস্তান্তর করাও প্রয়োজন।
